বুধবার ২১ মে ২০২৫ - ০৮:২০
ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর গায়বাতের উপকারিতা!

মহাবিশ্বে ইমামের অবস্থান কী? তাঁর সমস্ত অস্তিত্বগত প্রভাব কি তাঁর দৃশ্যমানতার উপর নির্ভরশীল? তিনি কি কেবল মানবজাতির নেতৃত্বের জন্যই নিযুক্ত, নাকি তাঁর অস্তিত্ব সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য কল্যাণকর?

হাওজা নিউজ এজেন্সি: শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানবজাতি আল্লাহর অকাট্য প্রমাণ (হুজ্জাত)-এর প্রকাশের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত রয়েছে এবং ঐশী নেতৃত্ব ও নিষ্পাপ পথপ্রদর্শকের সান্নিধ্য থেকে দূরে রয়েছে।

ইমামের গায়েবী অবস্থায় তাঁর অস্তিত্ব এবং মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে তাঁর জীবনযাপন বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর জন্য কী প্রভাব বয়ে আনে? তিনি কি শেষ যুগের কাছাকাছি সময়ে জন্মগ্রহণ করতে পারতেন না, যাতে তাঁকে দীর্ঘ গায়বাতের কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে না হতো?

এসব প্রশ্ন এবং অনুরূপ প্রশ্নাবলী কেবলই ইমাম ও আল্লাহর হুজ্জাতের মর্যাদা সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল।

ইমাম: সৃষ্টিজগতের কেন্দ্রবিন্দু
শিয়া মতাদর্শের বিশ্বাস ও ধর্মীয় শিক্ষা অনুযায়ী, ইমাম হলেন সমগ্র সৃষ্টিজগতে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রেরণের মাধ্যম। তিনি মহাবিশ্বের কেন্দ্র ও অক্ষ, এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে মানুষ, জিন, ফেরেশতা, প্রাণী বা জড় কোনো কিছুই টিকে থাকতে পারে না।

ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “ইমাম ছাড়া কি পৃথিবী টিকে থাকতে পারে?” তিনি উত্তরে বলেছিলেন,
لَوْ بَقِيَتِ الْأَرْضُ بِغَيْرِ إِمَامٍ لَسَاخَتْ

“যদি পৃথিবী ইমামবিহীন থাকে, তা ধ্বংস হয়ে যাবে (এবং এর ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে)।” 
[আল-কাফি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৯] 

এটা সুস্পষ্ট যে ইমাম (আ.) মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেন এবং তাদেরকে পূর্ণতার পথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ তাআলা শুরু থেকেই নবীদের মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে তাদের উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমে মানবজাতিকে হিদায়াত করেছেন। তবে মাসুম ইমামগণের (আ.) বাণী থেকে বুঝা যায় যে, ইমামগণ সমগ্র সৃষ্টিজগতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও রিযিক প্রাপ্তির মাধ্যম।

স্পষ্টভাবে বললে, সমস্ত সৃষ্টিজীব তাদের অস্তিত্ব ও জীবনের সমস্ত নেয়ামত ইমামগণের মাধ্যমেই লাভ করে।

জিয়ারাতে জামেয়া কাবিরা-তে, যা ইমামত সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা, বর্ণিত হয়েছে:
بِكُمْ فَتَحَ اللَّهُ وَبِكُمْ يَخْتِمُ وَبِكُمْ يُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَبِكُمْ يُمْسِكُ السَّمَاءَ أَنْ تَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ 
[হে ইমামগণ!] আল্লাহ তোমাদের মাধ্যমেই (জগতের) সূচনা করেছেন এবং তোমাদের মাধ্যমেই তা সমাপ্ত করবেন। তোমাদের মাধ্যমেই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তোমাদের মাধ্যমেই তিনি আকাশকে ধরে রাখেন যাতে তা পৃথিবীতে পতিত না হয়, তাঁর অনুমতি ছাড়া।

সুতরাং ইমামের অস্তিত্বের প্রভাব কেবল তাঁর প্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তাঁর অস্তিত্ব, এমনকি গায়েব অবস্থায়ও, সমগ্র সৃষ্টির জীবনীশক্তির উৎস। আল্লাহ নিজেই ইচ্ছা করেছেন যে, তিনি যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপূর্ণ সৃষ্টি, তাঁর মাধ্যমেই অন্যান্য সৃষ্টি আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে। এখানে ইমামের গায়েব বা প্রকাশের কোনো পার্থক্য নেই। নিশ্চয়ই সবাই ইমামের অস্তিত্বের প্রভাব লাভ করে এবং ইমাম মাহদী (আ.)-এর গায়বাত এ ক্ষেত্রে কোনো বিঘ্ন ঘটায় না।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যখন ইমাম মাহদী (আ.)-কে গায়বাতের সময় তাঁর থেকে কীভাবে উপকার লাভ করা যায় সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন,
وَأَمَّا وَجْهُ الانْتِفَاعِ بِي فِي غَيْبَتِي فَكَالانْتِفَاعِ بِالشَّمْسِ إِذَا غَيَّبَتْهَا عَنِ الْأَبْصَارِ السَّحَابُ وَإِنِّي لَأَمَانٌ لِأَهْلِ الْأَرْضِ كَمَا أَنَّ النُّجُومَ أَمَانٌ لِأَهْلِ السَّمَاءِ 

গায়বাতের সময় আমার থেকে উপকার লাভের পদ্ধতি সূর্য থেকে উপকার লাভের মতো, যখন মেঘ তা দৃষ্টির আড়াল করে দেয়। নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীবাসীর জন্য নিরাপত্তাস্বরূপ, যেমন নক্ষত্ররাজি আকাশবাসীর জন্য নিরাপত্তাস্বরূপ।
[কামালুদ্দীন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৮৩]

এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে...)
 
সূত্র: “নেগিনে অফাারিনেশ” গ্রন্থ থেকে সংকলিত ও পরিমার্জিত।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha