বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫ - ০০:১৩
আয়াতুল্লাহ আল উজমা খামেনেয়ীর চীন সফরের দুটি আকর্ষণীয় দিক

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এক কৌশলী সিদ্ধান্ত নেন-তিনি চীনের অন্য কোনো কর্মকর্তার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন না, যাতে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যায় যে ইরানি প্রতিনিধিদের মর্যাদা চীনের নেতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

হাওযা নিউজ প্রতিবেদন অনুযায়ী: ইরানি দলের বিমান বেইজিং বিমানবন্দরে নামার আগেই ঘোষণা আসে-চীনের নেতার অসুস্থতার কারণে তার সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রপতি এবং প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ বাতিল করা হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এক কৌশলী সিদ্ধান্ত নেন-তিনি চীনের অন্য কোনো কর্মকর্তার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন না, যাতে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যায় যে ইরানি প্রতিনিধিদের মর্যাদা চীনের নেতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

এই অবস্থান চীনের প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য খামেনেয়ীর কাছে নিয়ে আসে।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ঐতিহাসিক সফর (মে, ১৯৮৯):
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খামেনেয়ী উত্তর কোরিয়া ও চীনে প্রভাবশালী সফর করেন। চীনের সরকারি আমন্ত্রণে ১৯ মে শুরু হওয়া এই সফর ৬ দিন স্থায়ী হয়। তিনি চীনের মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশ ‘শিনজিয়াং’-এও সফর করেন এবং স্থানীয় জুমার খুতবায় বক্তব্য রাখেন।

“ইতিলাআত” পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী:
২৩ মে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি ও প্রতিনিধি দল শুক্রবার বিকেলে বেইজিং থেকে উড়ে মুসলিম স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য শিনজিয়াং-এর রাজধানী ‘উরুমচি’-তে পৌঁছান। সেখানে তাদের উচ্চপর্যায়ের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
শিনজিয়াং ১৯৫৫ সাল থেকে একটি স্বায়ত্তশাসিত এলাকা। এটির আয়তন ১৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১.৪ কোটি, যেখানে ১৩টি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন।

জুমার নামাজে বক্তব্য:
তিনি বলেন, "আজ ইসলাম একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী ধর্ম হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। মুসলিমরা নিজেদের গর্বিত মনে করছে এবং ইরান ইসলামী বিধানকে তার রাজনৈতিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে।"
তিনি মুসলিম তরুণদেরকে ইসলামী জ্ঞান গভীরভাবে অর্জনের আহ্বান জানান এবং চীনের ইসলামপন্থী নীতির প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ:
এই সফরের সময় একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে-শিনজিয়াং প্রদেশের নেতৃস্থানীয় ধর্মীয় নেতারা এবং প্রাদেশিক প্রধান ‘তিমুর দোয়ামাকি’ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
খামেনেয়ী বলেন, “ইসলামের শিক্ষা রক্ষা ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম মানুষকে শান্তি ও সৌহার্দ্যের দিকে আহ্বান করে।”

রাতের ভোজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা:
শিনজিয়াংয়ের গভর্নর রাষ্ট্রপতির সম্মানে এক নৈশভোজের আয়োজন করেন এবং বলেন, "সিল্ক রোডের মাধ্যমে চীন ও ইরানের প্রাচীন সম্পর্ক আজ আরও শক্তিশালী হচ্ছে।" তিনি জানান, চীনের অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তনের পর প্রদেশটি ইরানের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য করতে চায়।

দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা:

১. সাক্ষাৎ বাতিল ও কৌশলী প্রতিক্রিয়া:
চীনের নেতার অসুস্থতার কারণে যখন সাক্ষাৎ বাতিল হয়, তখন খামেনেয়ী প্রতিক্রিয়াস্বরূপ অন্য কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে বার্তা দেন—ইরানিদের মর্যাদা সমান। এর ফলেই চীনের প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে দেখা করেন ও ক্ষমা চান।
তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আলাউদ্দিন বোরুজের্দি বলেন:
“প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলে ওঠেন: ছোট ভাই বড় ভাইয়ের সাক্ষাতে এসেছে! তারপর বলেন, আমরা আপনাকে সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি।”

২. হালাল খাবারের প্রতি সচেতনতা:
চীনে হালাল খাবার না থাকার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে খামেনেয়ী ও তার দল সাধারণ “আল-মাতআম আল-ইসলামী” নামে একটি হালাল রেস্টুরেন্টে যান।
রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ খাবার তৈরি করে, কিন্তু খামেনেয়ী বিনয়ের সঙ্গে তা গ্রহণ না করে সাধারণ মানুষের মতো সাধারণ খাবারই বেছে নেন।

এই রেস্টুরেন্টে এখনো তাঁর সেই সফরের ছবি অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে। ছবিতে খামেনেয়ীর পাশে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আলী আকবর বিলায়েতিও আছেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha