হাওজা নিউজ এজেন্সি: অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে: কিভাবে একজন মানুষের এত দীর্ঘ জীবন সম্ভব? এই প্রশ্নের উৎপত্তি হয়েছে এজন্য যে, বর্তমান বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু সীমিত। অনেকেই দীর্ঘায়ুর কথা শুনে বা পড়ে তা বিশ্বাস করতে পারেন না। কিন্তু বাস্তবে দীর্ঘ জীবন অসম্ভব কিছু নয়—বিজ্ঞান ও যুক্তির দৃষ্টিতেও এটি অস্বাভাবিক নয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, মানুষের শরীর এমনভাবে তৈরি যে তা শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁচে থাকতে পারে, এমনকি বার্ধক্য থেকেও মুক্ত থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীরা আজ বার্ধক্য জয় করে দীর্ঘায়ু লাভের পথ খুঁজছেন এবং এ ক্ষেত্রে তারা উল্লেখযোগ্য সাফল্যও অর্জন করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, দীর্ঘ জীবন কোনো অলৌকিক বিষয় নয়, বরং বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তা সম্ভব।
আসমানী কিতাব ও ইতিহাসে দীর্ঘায়ুর প্রমাণ
পবিত্র কুরআন ও অন্যান্য ঐশী গ্রন্থে এমন অনেক মানুষের কথা উল্লেখ আছে, যাদের আয়ু আজকের মানুষের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
১. হযরত ইউনুস (আ.)-এর উদাহরণ:
فَلَوْلَا أَنَّهُ کَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِینَ، لَلَبِثَ فِی بَطْنِهِ إِلَی یَوْمِ یُبْعَثُونَ
যদি তিনি (হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম) আল্লাহর তাসবিহ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হতেন, তবে কিয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটে থাকতেন।
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ চাইলে একজন মানুষ বা প্রাণী কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে—যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় “অমরত্ব” বলা হয়।
২. হযরত নূহ (আ.)-এর দীর্ঘ জীবন:
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَیٰ قَوْمِهِ فَلَبِثَ فِیهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِینَ عَامًا
আমরা নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম, আর তিনি তাদের মধ্যে ৯৫০ বছর অবস্থান করেছিলেন। [সূরা আনকাবুত, আয়াত ১৪]
এটি ছিল শুধু নবুওয়তের সময়কাল। কিছু হাদীস অনুযায়ী, হযরত নূহ (আ.)-এর মোট বয়স ছিল ২৪৫০ বছর।
৩. ইমাম সাজ্জাদ (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
فِی اَلْقَائِمِ مِنَّا سُنَنٌ مِنَ اَلْأَنْبِیَاءِ ... فَأَمَّا مِنْ آدَمَ وَ نُوحٍ فَطُولُ اَلْعُمُرِ
আল-কায়েম (ইমাম মাহদী)-এর মধ্যে নবীদের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে... (তন্মধ্যে) আদম (আ.) ও নূহ (আ.) থেকে তাঁর দীর্ঘায়ু।
[কামালুদ্দীন, খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা- ৩২১]
৪. হযরত ঈসা (আ.)-এর জীবন:
وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰکِنْ شُبِّهَ لَهُمْ ... بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَیْهِ
তারা তাঁকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি, বরং তাদের জন্য বিষয়টি অস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল... বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। [সূরা নিসা, আয়াত ১৫৭-১৫৮]
অর্থাৎ, হযরত ঈসা (আ.) আজও জীবিত এবং কিয়ামতের আগে তিনি পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। এ হিসাবে তাঁর বয়স ২০০০ বছরেরও বেশি।
তাওরাত ও ইঞ্জিলে দীর্ঘায়ুর উল্লেখ
তাওরাতে বলা হয়েছে:
আদম ৯৩০ বছর বেঁচে ছিলেন। শীষ ৯১২ বছর বেঁচে ছিলেন... নূহ ৯৫০ বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।
[জেনেসিস, অধ্যায়- ৫, আয়াত ৫-৩২]
ইঞ্জিলেও হযরত ঈসা (আ.)-এর জীবিত হওয়া ও স্বর্গারোহণের কথা বলা হয়েছে, যা প্রমাণ করে তিনি আজও জীবিত।
যুক্তি ও বিজ্ঞানের আলোকে দীর্ঘায়ু
দীর্ঘ জীবন শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিতেই নয়, বৈজ্ঞানিকভাবেও সম্ভব। অনেক বিজ্ঞানী, যেমন— ওয়াইজম্যান (জার্মান বিজ্ঞানী), ফ্লুকার (পদার্থবিদ), ড. কিলভার ডিহাউজ (মার্কিন গবেষক), প্রফেসর ইটিংগার প্রমুখ মনে করেন যে, মানুষের আয়ু কয়েকশ’ বছর পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
আল্লাহর অসীম ক্ষমতা
সব ঐশী ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস যে, সমগ্র সৃষ্টিজগত আল্লাহর হাতে। তিনি চাইলে কারণ-অকারণে যেকোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি—
- পাহাড় থেকে উট বের করতে পারেন,
- আগুনকে ইব্রাহীম (আ.)-এর জন্য শীতল করতে পারেন,
- সমুদ্রকে মুসা (আ.)-এর জন্য বিভক্ত করতে পারেন।
তাহলে তিনি কি তাঁর শেষ হুজ্জাত ইমাম, নবীদের মুকুটবিহারী, সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্বকে দীর্ঘ জীবন দিতে অক্ষম?
(চলবে...)
গ্রন্থ সূত্র: নেগীনে অফারীনেশ (সংক্ষেপিত ও সম্পাদিত)
আপনার কমেন্ট