রবিবার ২৫ মে ২০২৫ - ১১:৪৭
কুরআনের অনুবাদ বিশ্বব্যাপী এক জরুরি প্রয়োজন

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মোহাম্মদ হাসান যামানী, যিনি হাওযায়ে ইলমিয়ার পরিচালক পরিষদের উপদেষ্টা, বলেছেন: কুরআনের অনুবাদ জীবন্ত ভাষাগুলোতে করা একটি বৈশ্বিক প্রয়োজন।

হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মোহাম্মদ হাসান যামানী, যিনি হাওযায়ে ইলমিয়ার পরিচালক পরিষদের উপদেষ্টা, বলেছেন: কুরআনের অনুবাদ জীবন্ত ভাষাগুলোতে করা একটি বৈশ্বিক প্রয়োজন। আজ যখন আমাদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা আছে, তখন আর কুরআন অনুবাদ না করার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, বিশ্বে নানা ধর্ম রয়েছে, কিন্তু ইসলাম ব্যতীত কোনো ধর্মেরই সংরক্ষিত ও ঐশী গ্রন্থ নেই। খ্রিষ্টধর্ম, যেটি ইসলামের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রায় আড়াই বিলিয়ন অনুসারীর ধর্ম, সেটিও নবী ঈসা (আ.)-এর নাযিলকৃত গ্রন্থ থেকে বঞ্চিত। আজ যে "ইঞ্জিল" নামে পরিচিত, তা মূলত চার ব্যক্তির লেখা ব্যক্তিগত নোট।

তিনি আরও বলেন, ৩২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৪০টির বেশি ইঞ্জিল প্রচলিত ছিল, কিন্তু খ্রিস্টানদের মধ্যে বিভেদ ঠেকাতে চারটি বেছে নেওয়া হয়। এ তথ্য খ্রিস্টান ইতিহাস নিজেও স্বীকার করে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আজ পৃথিবীতে একমাত্র সংরক্ষিত ঐশী গ্রন্থ হলো কুরআন। ইসলামী উম্মাহ ছাড়া মানবজাতি কোনো আসমানি কিতাবের অধিকারী নয়। এটি কেবল কুম বা ইরানের গৌরব নয়, বরং ৩০টিরও বেশি দেশে ধর্মীয় নেতাদের সাথে সাক্ষাতে দেখা গেছে, তারাও এই বাস্তবতা মেনে নিয়েছে।

তিনি বলেন, কুরআন হিফজ এবং এর প্রচার হচ্ছে শিয়া আলেম ও ছাত্রদের অন্যতম দায়িত্ব। কুরআন হিফজের জন্য দশটি মৌলিক নীতি রয়েছে, যার প্রথমটি হলো: সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করা এবং তা আজীবন পুনরাবৃত্তি করা — যা ব্যক্তি দায়িত্ব এবং সর্বোচ্চ নেতার (রহ.) নির্দেশ।

তিনি আরও বলেন: হিফজের পাশাপাশি, তিলাওয়াত, সুন্দর কণ্ঠ, তাজবিদ ও অর্থ অনুধাবন—সবই অপরিহার্য। কুরআনের হাফিজকে তাজবিদে পারদর্শী এবং সুমধুর কণ্ঠের অধিকারী হওয়া উচিত, যা ইরানিদের মধ্যে রয়েছে।

একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একজন ইরানি যুবক মিশরে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় তাজবিদে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং আরব শিক্ষকদের প্রশংসা কুড়ান। এটি ইরানিদের কুরআনিক সক্ষমতার প্রমাণ।

তিনি আলেমদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, মিম্বার ও খুতবায় কুরআনের আয়াত ব্যবহার করা উচিত, ধর্মীয় বক্তৃতা যেন কুরআনের আলোকে হয়।

তিনি বলেন, কেবল সওয়াবের জন্য নয়, কুরআন এসেছে বোঝার জন্য। তাই তা অনুবাদসহ পড়ে অর্থ অনুধাবন করতে হবে। তিনি পরামর্শ দেন: প্রতিদিন এক পারা না পড়ে অর্ধেক পারা অনুবাদসহ পড়াই উত্তম।

তিনি বলেন, একজন হাফিজ যদি শব্দের অর্থই না জানেন, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লামা হাসনজাদা আমুলি ওসিয়ত করেছিলেন— সব কঠিন শব্দের অনুবাদসহ একটি খাতা তৈরি করে তা বারবার পড়তে।

তিনি আফসোস করে বলেন, ইঞ্জিল যেখানে ২,০০০ ভাষায় অনূদিত হয়েছে, সেখানে কুরআন মাত্র ১৪০ ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং শিয়াদের অবদান এতে খুবই কম।

তিনি উল্লেখ করেন, জার্মান প্রাচ্যবিদ থিওডর খুরি এবং জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিন ম্যাকআলিফ কুরআনের জ্ঞানকে বিশ্বের নানা ভাষায় উপস্থাপন করেছেন, অথচ আমাদের আলেমগণ নানা ব্যস্ততার কারণে তা করতে পারেননি।

তিনি তালেব বা আলেমদের জন্য ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরামর্শ দিয়েছেন:

১. কুরআনের অনুবাদ বোঝা
২. তাফসির অধ্যয়ন
৩. কুরআনিক নীতিনৈতিকতা অনুসরণ
৪. কুরআনি শিক্ষাদান
৫. কুরআনি বিশেষায়িত শাখায় প্রবেশ
৬. অনলাইন মাধ্যমে কুরআন প্রচার
৭. কঠিন শব্দ চিনে রাখা
৮. শব্দভাণ্ডার সংকলন
৯. তাফসিরসমূহ পাঠ
১০. সমাজে কুরআনি সংস্কৃতি তৈরি

উপসংহারে তিনি বলেন, হাওযা যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে, তাহলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কুরআনের জ্ঞান আরও কার্যকরভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha