শনিবার ৩১ মে ২০২৫ - ১২:১৯
বিবাহ: রিজিক বৃদ্ধি ও সামাজিক প্রশান্তির চাবিকাঠি

হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ নাকী মাহদী যায়েদী ভারতের তারা গড়ায় জুমার খুতবায় ইসলামী দৃষ্টিতে বিবাহের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বলেন, বিবাহ হলো কল্যাণ, প্রশান্তি ও রিজিকের প্রশস্ততার গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:  হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ নাকী মাহদী যায়েদী ইমাম হাসান আসকারি (আ.)-এর উজ্জ্বল উপদেশনামা বিশ্লেষণ করে বলেন,
ইসলামে সন্তানদের অধিকার, সঠিক জীবনসঙ্গী নির্বাচনের মাপকাঠি, যিলহজ মাসের ফজিলতসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ভাষ্যে সন্তানের প্রতি পিতার দায়িত্ব
তিনি হাদীস উদ্ধৃত করে বলেন, “সন্তানের প্রতি পিতার তিনটি অধিকার রয়েছে—

১. তার জন্য একটি সুন্দর নাম রাখা,

২. লেখা-পড়া শেখানো এবং

৩. বিয়ের বয়স হলে তার বিয়ের ব্যবস্থা করা।”

কুরআনের দৃষ্টিতে বিবাহের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূর হয়
তিনি সূরা নূর, আয়াত ৩২ উদ্ধৃত করেন,
وَ أَنْکِحُوا الْأَیامی‏ مِنْکُمْ وَ الصَّالِحینَ مِنْ عِبادِکُمْ وَ إِمائِکُمْ إِنْ یَکُونُوا فُقَراءَ یُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَ اللَّهُ واسِعٌ عَلیمٌ
তোমরা তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিবাহ দাও। তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যেও যারা সৎ, তাদের বিবাহ দাও। যদি তারা গরিবও হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের ধনী করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ প্রাচুর্যশীল ও সর্বজ্ঞ।

তিনি বলেন, বিবাহ হলো দারিদ্র্য ও সংকীর্ণতা দূর করার উপায়। যে ব্যক্তি দারিদ্র্যের ভয়ে বিবাহ থেকে বিরত থাকে, সে আল্লাহর ওয়াদার ওপর সন্দেহ করছে।

স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে রিজিক আসে
ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর হাদীস অনুযায়ী-
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট দারিদ্র্যের অভিযোগ করলে, তিনি তাকে বিবাহ করতে বলেন।
এই ঘটনা তিনবার পুনরাবৃত্তি হয় এবং প্রতিবারই রাসূল (সা.) তাকে বিবাহের নির্দেশ দেন।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন,
الرِّزْقُ مَعَ النِّسَاءِ وَ الْعِیَال

“রিজিক আসে স্ত্রী ও সন্তানদের মাধ্যমে।”

তিনি আরও বলেন, ইমাম জাফর সাদিক বলেছেন,
مَنْ تَرَکَ التَّزْویجَ مَخافَةَ الْفَقْرِ فَقَدْ أَساءَ الظَّنَّ بِاللّهِ
“যে ব্যক্তি দারিদ্র্যের ভয়ে বিবাহ ত্যাগ করে, সে আল্লাহর প্রতি কু-ধারণা পোষণ করে।”

সঠিক জীবনসঙ্গী বাছাই: ইসলামের মানদণ্ড

রাসূল (সা.) বলেছেন,

مَنْ تَزَوَّجَ امْرَأَةً لِمَالِها وَکَلَهُ اللَّهُ إِلَیْهِ، وَمَنْ تَزَوَّجَهَا لِجَمَالِهَا رَأَی فِیهَا مَا یَکْرَهُ، وَمَنْ تَزَوَّجَهَا لِدِینِهَا جَمَعَ اللَّهُ لَهُ ذَلِکَ

“যে ব্যক্তি কেবল সম্পদের জন্য বিয়ে করে, আল্লাহ তাকে সেই সম্পদের সাথেই ছেড়ে দেন।

যে ব্যক্তি রূপের কারণে বিয়ে করে, সে তার মধ্যে অপছন্দনীয় কিছু পায়। কিন্তু যে ব্যক্তি ধর্মের জন্য বিয়ে করে, আল্লাহ তার জন্য সকল কল্যাণ একত্র করে দেন।”

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিবাহে আহলুল বাইত (আ.)-এর আদর্শ অনুসরণ করা উচিত, বিশেষত হযরত আলী (আ.) ও ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর পবিত্র বিবাহ– এটি ইসলামী বিবাহের পূর্ণাঙ্গ মডেল।

যিলহজ মাসের ফজিলত: আরাফা ও গাদীর দিবস
তিনি বলেন, যিলহজ হলো হিজরি সনের শেষ মাস এবং সবচেয়ে বরকতময় মাসগুলোর একটি। এই মাসের প্রথম দশ দিন আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও ইসতিগফারের বিশেষ সময়।
৯ যিলহজ – আরাফা দিবস, ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দিন।

এক হাদীসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি শবে কদরে ক্ষমা পায়নি, সে যেন আরাফার দিনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।”

এই দিনে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জিয়ারতের ফজিলতও অনেক। ১০ যিলহজ– ঈদুল আজহা, ১৮ যিলহজ– ঈদে গাদীর– সেদিনই রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে উম্মতের নেতা ও ইমাম হিসেবে ঘোষণা করেন এবং উপস্থিতদের কাছ থেকে তাঁর প্রতি বায়াত গ্রহণ করেন।

ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর ওফাত দিবস স্মরণ
তিনি বলেন, ৪ জুন– ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর ইন্তেকালের দিন। এটি তাঁর আদর্শ ও ইসলামী বিপ্লবের প্রতি নতুন করে অঙ্গীকার করার দিন। এই মহান নেতা আধুনিক ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য ও অবিচল আদর্শ।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha