হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ী গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “ওয়াশিংটন যদি সত্যিকার অর্থে চুক্তিতে ফিরতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও সময়সীমা উল্লেখ করতে হবে।”
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সাত সপ্তাহ ধরে আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হতে চাচ্ছে যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, অন্যদিকে ইরান অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে।
তবে, তেহরান এখন ওয়াশিংটনের কাছ থেকে বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে চাইছে। এটি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে সন্দেহের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ-র প্রতিবেদনে বাকায়ি জোর দিয়ে বলেন, “নিষেধাজ্ঞার প্রকৃত সমাপ্তি” নিশ্চিত করার জন্য গ্যারান্টি প্রয়োজন, যার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের “কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায়” তা বিস্তারিত জানানো আবশ্যক।
তিনি বলেন, “এই বিষয়ে আমেরিকান পক্ষ এখনও প্রয়োজনীয় স্পষ্টতা দেয়নি।”
মূল ইস্যুসমূহ:
১. যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে ওমানের মাধ্যমে ইরানের কাছে একটি নতুন প্রস্তাব পেশ করেছে, যাকে তারা “সুষম ও গ্রহণযোগ্য” বলে দাবি করছে।
২. ইরানি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, প্রস্তাবটিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পদ্ধতি অস্পষ্ট থাকায় তেহরান এটিকে “প্রাথমিকভাবে অগ্রহণযোগ্য” বলে বিবেচনা করছে।
৩. বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান মূলত তিনটি ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা চাইছে:
- অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পূর্ণ ও অবিলম্বে প্রত্যাহার
- ভবিষ্যতে একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পথ রুদ্ধ
- তেল রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেনে পুরোপুরি প্রবেশাধিকার।
পটভূমি:
২০১৫ সালে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের একতরফা সরে যাওয়া এবং কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকেই ইরানের অর্থনীতি মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ফলত দুই দেশ সর্বকালের সর্বোচ্চ মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তি পুনরুজ্জীবনে আগ্রহী হলেও উভয় পক্ষই কয়েক দফা আলোচনা সত্ত্বেও এখনও চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি।
সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ:
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ক এনরিকে মোরা আগামী সপ্তাহে উভয় পক্ষের সাথে পৃথক বৈঠক করার পরিকল্পনা করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ফারজাদ দিবাজার মতে, “ইরান এবার কূটনৈতিক সমাধান চাইলেও তারা আর ‘অন্ধ বিশ্বাসে’ রাজি নয়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়া সম্ভবত তারা নতুন চুক্তিতে সই করবে না।”
এই অবস্থায়, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, আলোচনা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে অথবা সম্পূর্ণভাবে ভেস্তে যাওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে।
আপনার কমেন্ট