বুধবার ৪ জুন ২০২৫ - ১০:৪৬
ইমাম রুহুল্লাহ (রহ.)-এর জীবনধারা ও ভাষণ

ইমাম (রহ)-এর ইন্তেকালের ৩৬তম বার্ষিকী:

ইমাম রুহুল্লাহ (রহ.)-এর জীবনধারা ও ভাষণ

আধিপত্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কার্যকর এক আদর্শ

সমসাময়িক ইতিহাসে, আধিপত্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে কার্যকর ও সফল আদর্শ নিঃসন্দেহে ছিল ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর আলোকিত জীবনচর্চা ও ভাষণ। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, আল্লাহর ওপর ভরসা ও জনগণের প্রতি আস্থার মাধ্যমে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।

হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বছরের ১৪ খোর্ডাদ (প্রায় ৪ জুন), স্মরণ করায় সেই মহান পুরুষের ইন্তেকাল, যিনি ৩৬ বছর আগে শুধু ইরানি জাতিকেই নয়, বরং পৃথিবীর সকল অধিকারপ্রেমী ও স্বাধীনতাকামী মানুষকে গভীর শোকে নিমজ্জিত করেছিলেন।

এক আলোকবর্তিকা যুগে যুগে

খোমেনি (রহ.)-এর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল, তিনি কেবল কথায় নয়, কর্মে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে, অধিকার চাইতে হলে নির্লিপ্ততায় নয়, সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন, মজলুমদের পাশে দাঁড়ানো এবং জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রতিটি বিবেকবান মানুষের দায়িত্ব। এ কারণে তিনি আধুনিক কালে শোষণমূলক বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী প্রতিরোধের অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।

আজকের দিনে প্রয়োজন, আমরা আরও বেশি করে ইমাম (রহ.) ও তাঁর আদর্শ নিয়ে আলোচনা করি, লিখি এবং তা তুলে ধরি। এটি বিশেষ করে শিল্পী, সাংবাদিক, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ব, যারা ইসলামি বিপ্লবের মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং ইমামের ঐতিহ্য সংরক্ষণে কোনো দ্বিধা করেন না।

ইরানি-ইসলামি পরিচয়ের পুনর্জাগরণ

হুজ্জাতুল ইসলাম হাবিব বাবায়ী, যিনি একজন সংস্কৃতিকর্মী ও গবেষক, বলেন: ইমাম (রহ.) আমাদের জাতির মাঝে আল্লাহর জন্য জেগে ওঠার প্রেরণা ও আশাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। তিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন এক যুগে একটি আলোকবর্তিকা জ্বালিয়েছিলেন, যার আলোয় আমরা সত্যের পথ চিনতে পেরেছি। তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল, তিনি বিভ্রান্তির যুগে আমাদেরকে ইসলামী-ইরানি পরিচয়ের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আধিপত্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে পরিপূর্ণ ও কার্যকর আদর্শ ইমাম (রহ.) আমাদের সামনে পেশ করেছিলেন। যখন আমাদের জাতির সংস্কৃতি ও ইতিহাস সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের চরম চাপে ছিল, তখন তিনি শুধু ভৌগলিক ও রাজনৈতিক সীমান্তই রক্ষা করেননি, বরং আমাদের আত্মিক পরিচয় ও আত্মবিশ্বাসকেও পুনর্জীবিত করেছিলেন। এর সুফল আমরা বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত অগ্রগতিতে দেখতে পাচ্ছি।

আল্লাহর পথে জিহাদ ও আশাবাদের বিকাশ

এই সংস্কৃতিকর্মী আরও বলেন, ইমাম (রহ.)-এর আন্দোলন জাতির মাঝে আশার দীপ্তি ফিরিয়ে এনেছিল। তিনি একটি এমন জাতির জন্ম দিয়েছেন, যারা উদ্দীপ্ত, আশাবাদী ও মহান লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ – এক প্রেরণাময় জাতি, যারা শুধু ইরানেই নয়, গোটা বিশ্বেই এক বিস্ময়কর পরিবর্তন আনতে চায়।

তিনি বলেন, বর্তমান যুগের প্রজ্ঞাবান নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী যেভাবে বারবার বলেছেন যে, আমরা বিজয়ের শিখরে পৌঁছানোর পথে আছি – এর মূল রয়েছে ইমাম (রহ.)-এর আন্দোলনের মধ্যে। কারণ, এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সর্বাধিক অন্ধকার সময়ে এবং ১৩৫۷ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সফল হয়।

ইমাম (রহ.)-এর চিরস্থায়ী ঐতিহ্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা

ড. মেহেদি ইসলামী, ইমাম সাদেক (আ.) গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক বলেন, ইমাম (রহ.)-এর চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি মিডিয়া ও শিল্পের মাধ্যমে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। তাঁর রেখে যাওয়া ইসলামী প্রজাতন্ত্র আজও তাঁর প্রকৃত উত্তরসূরির নেতৃত্বে সক্রিয় ও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। এটি শুধু ইরানের মর্যাদাই বাড়িয়েছে না, বরং বিশ্বের সব নিপীড়িতদের আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

তিনি যোগ করেন, সব ধরনের চাপ, নিষেধাজ্ঞা ও সংকট সত্ত্বেও ইরানি জনগণ এখনও বিপ্লব ও ধর্মীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। যদিও কিছু কর্মকর্তার দুর্বলতার কারণে অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু যদি সবাই ইমাম (রহ.)-এর চিন্তায় পরিচালিত হতো, তাহলে দেশের অনেক সমস্যা লাঘব হতো।

পীরে জামারানের সাফল্যের মূল রহস্য

একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বলেন, ইমাম (রহ.)-এর সাফল্যের মূল ছিল তাঁর গভীর বিশ্বাস, আন্তরিকতা এবং মানুষের শক্তিতে অগাধ আস্থা। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য – আন্তরিকতা, আল্লাহর ওপর ভরসা, আত্মিক সাধনা – তাঁকে একজন অনন্য ব্যক্তি করে তোলে। তবে তাঁকে অন্যান্য আলেমদের থেকে আলাদা করেছিল এক বিশেষ দিক: তিনি সময়মতো অনুভব করেছিলেন যে, ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য বিশ্বশক্তি পরিকল্পনা করছে। এই জ্ঞানই তাঁকে জাগিয়ে তোলে এবং তিনি জাতিকে জাগিয়ে তোলেন।

তিনি শেষ করেন এই কথা বলে: ইমাম (রহ.)-এর মতো, আজও আমাদের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা ও আন্তরিকতার ওপর জোর দেওয়া, কারণ এটাই হচ্ছে প্রকৃত বিজয়ের চাবিকাঠি। আল্লাহর সহায়তা ছাড়া আমরা সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারব না। তাই এখন আমাদের উচিত, ইমামের দেখানো পথেই অগ্রসর হওয়া।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha