রবিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৬:০০
আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার একমাত্র বাস্তবসম্মত পথ আঞ্চলিক সমাধান

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বলেছেন, আফগানিস্তানের চলমান সংকট সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোই সবচেয়ে স্বাভাবিক, কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: রোববার তেহরানে অনুষ্ঠিত “আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা” শীর্ষক বৈঠকের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকটিতে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আরাকচি বলেন, অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা কেবল অঞ্চলকেন্দ্রিক সহযোগিতার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। তিনি উল্লেখ করেন, আফগানিস্তান-সংক্রান্ত যেকোনো উদ্যোগে ইরান বরাবরই প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর কেন্দ্রীয় ভূমিকায় গুরুত্ব দিয়ে আসছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর বিশেষ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, রাশিয়া ও উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টদের প্রতিনিধিসহ চীন, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি আফগানিস্তানকে মর্যাদাসম্পন্ন জনগণের দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে দেশটি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছে এবং এর রয়েছে বিপুল অর্থনৈতিক, মানবসম্পদ, পরিবহন ও প্রাকৃতিক সম্ভাবনা।

তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তানের ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থান মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়াকে সংযুক্তকারী যোগাযোগ নেটওয়ার্কের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।

আরাকচি জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন শুধু মানবিক প্রয়োজন নয়; এটি গোটা অঞ্চলের জন্য একটি কৌশলগত অপরিহার্যতা। তার ভাষায়, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি সরাসরি প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন, বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া সমাধান কখনোই টেকসই স্থিতিশীলতা বয়ে আনে না। বরং অঞ্চলভিত্তিক উদ্যোগই দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও উন্নয়নের বাস্তব সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এ প্রেক্ষাপটে তিনি আফগানিস্তানকে আঞ্চলিক কাঠামোর সঙ্গে পূর্ণাঙ্গভাবে একীভূত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সমন্বিত ও দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

আরাকচির মতে, আঞ্চলিক ঐক্য ও সমন্বয় জোরদার হলে যৌথ নিরাপত্তা সুদৃঢ় হবে, বহিরাগত হস্তক্ষেপ হ্রাস পাবে এবং পারস্পরিক আস্থা, যৌথ দায়িত্ববোধ ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি হবে। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ অঞ্চলভিত্তিক সম্মিলিত প্রজ্ঞা, দায়িত্ববোধ ও সহযোগিতা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি বলেন, “আফগানিস্তানের সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সহযোগিতা সম্প্রসারণে ইরান সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। পরিবহন, বাণিজ্য, কনস্যুলার সেবা ও জ্বালানি খাতে আমাদের উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, পারস্পরিক সমন্বয় ও ঐক্যের মাধ্যমে আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে একটি টেকসই আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, “এই সহযোগিতা শুধু আফগানিস্তানের জন্য নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে। তবে সব উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই আফগান জনগণকে রাখতে হবে—যাঁরা একটি নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ পাওয়ার যোগ্য। এই বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ওপরই নৈতিক, মানবিক ও আঞ্চলিক দৃষ্টিকোণ থেকে আফগান জনগণকে সহায়তার সর্বাধিক দায়িত্ব বর্তায় এবং তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha