বুধবার ৪ জুন ২০২৫ - ১৮:২০
ঈদুল আজহার কুরবানীর গুরুত্ব

কুরবানী ঈদ বা ঈদুল আজহা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এটি শুধু একটি উৎসব নয়, বরং এর মাঝে লুকিয়ে আছে আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসার গভীর প্রকাশ। শিয়া মাযহাবের হাদিস অনুযায়ী, এই দিনে কুরবানী করার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: কুরবানীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে লেখা হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন জনাব আলী নওয়াজ খানের প্রবন্ধটি তুলে ধরছি:

কুরবানীর গুরুত্ব:

১. আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্য: কুরবানী হলো আল্লাহ্‌র প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রতীক। হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানী করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন, যা ছিল আল্লাহ্‌র প্রতি তাঁর পরম আনুগত্যের প্রমাণ। এই ঘটনা মুসলমানদেরকে আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালনে উৎসাহিত করে।

২. তাকওয়া অর্জন: কুরবানীর মাধ্যমে তাকওয়া বা আল্লাহ্‌ভীতি অর্জিত হয়। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তাদের মাংস এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩৭)

৩. গুনাহ মাফ:  ইমামদের হাদিস অনুযায়ী, কুরবানীর প্রথম রক্তবিন্দু মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুরবানীদাতার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এটি বান্দার জন্য আল্লাহ্‌র বিশেষ রহমত।

৪. সওয়াব লাভ: কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে কুরবানীদাতা সওয়াব লাভ করে। এটি আখিরাতের জন্য বিশাল সঞ্চয় হিসেবে গণ্য হয়।

৫. গরিবদের প্রতি সহানুভূতি: কুরবানীর মাংস গরিব ও অভাবীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র মানুষগুলো ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এটি মুসলমানদের মধ্যে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা বাড়ায়।

৬. পরিবার ও প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন: কুরবানীর মাংস আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মাঝে বিলি করা হয়, যা সামাজিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।

শিয়া মাযহাবের বিশিষ্ট আলেমগণ কুরবানীর এই তাৎপর্য ও গুরুত্বের ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেছেন। তাদের মতে, কুরবানী শুধু একটি পশু জবাই নয়, বরং এটি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের এক অনন্য মাধ্যম।

কুরবানী করার নিয়ম:
কুরবানীর পশু সুস্থ, নিখুঁত ও সবল হতে হবে। জিলহজ্জ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে কুরবানী করতে হয়। কুরবানীর পশু জবাই করার সময় কিবলামুখী হয়ে দোয়া পড়তে হয়। মাংস তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ গরিবদের, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের এবং এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখতে হয়।

ঈদুল আজহা আমাদের জীবনে ত্যাগের মহিমা নিয়ে আসে। এই দিনে আমরা আল্লাহ্‌র রাহে প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করার শিক্ষা পাই এবং মানবজাতির কল্যাণে কাজ করার অনুপ্রেরণা লাভ করি।

আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে কুরবানী করার এবং এর থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। ঈদ মোবারক!

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha