শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫ - ১৪:৪২
ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব শুধু ভূরাজনীতি নয়, হক ও বাতিলের মুখোমুখি সংঘর্ষ

ইরান ও ইহুদিবাদী দখলদার ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। তবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এই দ্বন্দ্ব কেবল ভূরাজনীতি নয়, বরং হক ও বাতিল, ঈমান ও কুফরের এক চিরন্তন দ্বন্দ্ব।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা এবং এর অন্তর্নিহিত বিষয়ে হাওজা নিউজ এজেন্সি’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন বিশিষ্ট ইসলামি বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক, বাংলাদেশ উলামা সোসাইটির জনসংযোগ ও যোগাযোগ সম্পাদক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা জনাব আমজাদ হোসেন, যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি:

প্রশ্ন: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে এই দীর্ঘকালীন শত্রুতার মূল কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা আমজাদ হোসেন: এই বিরোধ শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক নয়, বরং এর মূল রয়েছে আদর্শ ও ঈমানের স্তরে। ইরান একটি ইসলামী বিপ্লবের ফসল, যার ভিত্তি হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং মুসলিম উম্মাহর মুক্তি। পক্ষান্তরে, ইসরায়েল একটি জবরদখলকারী ইহুদিবাদী রাষ্ট্র, যার ভিত্তি বস্তুবাদ ও বর্ণবাদ। কুরআন স্পষ্টভাবে বলেছে:
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ...
“তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে, মুমিনদের প্রতি সবচেয়ে কঠোর শত্রু হলো ইহুদি...” [সূরা মায়িদা: ৮২]

এই আয়াত আমাদের চোখ খুলে দেয় যে এই শত্রুতা স্বাভাবিক বা সাময়িক নয়, বরং তা আকীদাগত ও চিরস্থায়ী।

প্রশ্ন: পশ্চিমা গণমাধ্যমে সাধারণত ইরানকে “উসকানিদাতা” হিসেবে দেখানো হয়। আপনি তা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

মাওলানা আমজাদ হোসেন: এটা হল দ্বিমুখী নৈতিকতার নমুনা। ইসরায়েল যখন নির্বিচারে ফিলিস্তিনে নারী-শিশু, মানুষ হত্যা করে, বাড়িঘর, মসজিদ ধ্বংস করে, সেটি হয় আত্মরক্ষা! কিন্তু ইরান যখন নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ায়, সেটি হয়ে যায় “সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা”। এটা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে আজকের তথাকথিত সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার আসলে ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থরক্ষার ঢাল মাত্র।

প্রশ্ন: আপনি বললেন এটি হক ও বাতিলের লড়াই—একটু ব্যাখ্যা করবেন?

মাওলানা আমজাদ হোসেন: অবশ্যই। ইসলামের ইতিহাসে হক ও বাতিলের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে আদম (আ.)-এর সময় থেকেই এবং কারবালায় তার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটেছে। আজ ইরান সেই একই পথে— ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আদর্শের পথ ধরে হাঁটছে। আর ইসরায়েল সেই ইয়াজিদি জুলুমের আধুনিক রূপ। সুতরাং এই দ্বন্দ্ব কেবল ভূখণ্ড বা নিরাপত্তার নয়, বরং তা তাওহীদ ও তাগুতের দ্বন্দ্ব।

প্রশ্ন: ইরান কি পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে এই আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে আসতে পারে?

মাওলানা আমজাদ হোসেন: না, ইরান বারংবার বলেছে যে সে ফিলিস্তিন ইস্যুকে “ধর্মীয় ও মানবিক দায়িত্ব” হিসেবে দেখে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী স্পষ্ট বলেছেন, “ইহুদিবাদী ইসরায়েল নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।” এই বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং আকীদাগতও। কাজেই ইরান কখনোই এই পথ থেকে সরে আসবে না, ইনশাআল্লাহ।

শেষ প্রশ্ন: আপনি মুসলিম উম্মাহকে কী বার্তা দিতে চান এই প্রেক্ষাপটে?

মাওলানা আমজাদ হোসেন: আমার বার্তা একটাই: হক ও বাতিলের মাঝে নিরপেক্ষ থাকা মানেই বাতিলকে শক্তিশালী করা। আজ আমাদের নিরবতায় ফিলিস্তিনের রক্ত ঝরছে। আমাদের নীরবতার সুযোগেই ইহুদিবাদী দখলদার ইসরায়েল নিজের আগ্রাসন ফিলিস্তিন থেকে লেবানন, ইয়েমেন, ইরান ও সিরিয়ায় সম্প্রসারিত করার দুঃসাহস পেয়েছে। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত ইরানের মতো স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া এবং ইহুদিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একক কণ্ঠে বলিষ্ঠভাবে দাঁড়ানো। এটাই রাসূল (সা.) ও আহলুল বাইতের (আ.) প্রকৃত সুন্নাহ।

এই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট যে, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব শুধু রাজনৈতিক নয় — বরং এটি ইসলামী চিন্তাধারার সঙ্গে পশ্চিমা আধিপত্যের, হক ও বাতিলের এক যুগোপযোগী সংগ্রাম।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: রাসেল আহমেদ রিজভী

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha