হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা ৪ জুন ২০২৫, বুধবার সকালে ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর মাজারে তাঁর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। সেখানে তিনি ইমাম খোমেনিকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল এবং উন্নয়নশীল ব্যবস্থার মহান স্থপতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই মহান ব্যক্তির মৃত্যুর ৩৬ বছর পরও, বৃহৎ শক্তিগুলোর পতন, বহু-মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার গঠন, আমেরিকার প্রভাব ও ক্ষমতার ব্যাপক হ্রাস, ইউরোপ ও আমেরিকাতেও ইহুদিবাদবিরোধী মনোভাবের বৃদ্ধি, বহু জাতির জাগরণ এবং পশ্চিমা মূল্যবোধের অস্বীকৃতির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইমাম খোমেনির উপস্থিতি এবং তাঁর বিপ্লবের প্রভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে।
আয়াতুল্লাহ আল উজমা সাইয়েদ আলী খামেনেই ইরানি জাতিকে একজন আলেমের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করা, সম্পূর্ণভাবে সশস্ত্র শাহের সরকারের বিরুদ্ধে খালি হাতে ইমাম খোমেনি ও জনগণের বিজয়, এবং ইরানে লুটপাট চালানো আমেরিকান ও ইহুদি শক্তির পরাজয়ের মাধ্যমে আরব বিশ্বের বিস্ময়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ইমাম খোমেনির প্রচেষ্টা ও দূরদর্শিতার ফলেই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা পশ্চিমাদের জন্য একটি গুরুতর ধাক্কা ছিল।
তিনি বলেন, আমেরিকানরা আশা করেছিল ইরানে এমন একটি আপোসকামী সরকার ক্ষমতায় আসবে যারা তাদের অবৈধ স্বার্থ পূরণে সহায়তা করবে, কিন্তু ইমাম খোমেনি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন, ইরানে একটি ধর্মীয় ও ইসলামী ব্যবস্থা গঠিত হবে — এবং এভাবেই তিনি আমেরিকার আশাকে সম্পূর্ণভাবে ধূলিসাৎ করেন, যার পর থেকেই শত্রুরা ষড়যন্ত্র শুরু করে।
বিপ্লবী নেতা বলেন, ইসলামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে শত্রুদের ষড়যন্ত্রের নজির বর্তমান ইতিহাসে বিরল। এসব ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল উপনিবেশবাদী শক্তিগুলো, বিশেষত আমেরিকা, ইসরায়েলি সরকার এবং তাদের গুপ্তচর সংস্থাগুলো — যেমন সিআইএ (CIA), ব্রিটেনের এমআই-সিক্স (MI6), এবং ইসরায়েলের মোসাদ (Mossad)।
তিনি বলেন, এই ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্রগুলোর উদ্দেশ্য ছিল ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে দুর্বল করা, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র বরং আরও শক্তিশালী হয়ে অগ্রসর হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও শক্তির সাথে এগিয়ে যাবে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেই বলেন, “আমরা পারি” — এই আত্মবিশ্বাস ধ্বংসের জন্য শত্রুদের ষড়যন্ত্রই প্রমাণ করে যে এই মনোভাব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বর্তমানে পরমাণু ইস্যুতে ও ওমানের মধ্যস্থতায় চলমান আলোচনায়, আমেরিকা যে প্রস্তাব দিয়েছে তা “আমরা পারি” মানসিকতার সম্পূর্ণ বিপরীত।
তিনি বলেন, বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করা এবং বড় শক্তিগুলোর চাপ বা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া দাবির সামনে মাথা না নোয়ানোই প্রকৃত অর্থে প্রতিরোধ ও স্বাধীনতার প্রতীক।
নেতা তাঁর বক্তব্যের আরেক অংশে পরমাণু ইস্যু ব্যাখ্যা করে বলেন, পরমাণু শিল্প একটি মৌলিক ও কৌশলগত শিল্প। বিজ্ঞানীদের মতে, পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা, শক্তি প্রকৌশল, পদার্থ প্রকৌশল, চিকিৎসা, মহাকাশ প্রযুক্তি এবং সংবেদনশীল ইলেকট্রনিক সেন্সর — এসবই পরমাণু শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত অথবা তার দ্বারা প্রভাবিত।
তিনি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও জ্বালানি উৎপাদনের সক্ষমতা ছাড়া পরমাণু শিল্প কোনো কাজেই আসে না। এমনকি যদি আমাদের ১০০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও থাকে, তবুও জ্বালানির জন্য আমেরিকার কাছে হাত পাততে হবে, এবং তারা তাতে বহু শর্ত আরোপ করবে — যেমনটা ২০০০-এর দশকে ২০% সমৃদ্ধ জ্বালানি সংগ্রহের সময় দেখা গেছে।
তিনি বলেন, সেই সময়ে ইরান নিজে ৩.৫% সমৃদ্ধ জ্বালানি আমেরিকাকে দেওয়ার বিনিময়ে ২০% সমৃদ্ধ জ্বালানি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিল। তখন আমেরিকার এক প্রেসিডেন্টের অনুরোধে ইরানের দুই মিত্র দেশের মধ্যস্থতায় লেনদেনের প্রস্তাব আসে। ইরানি কর্মকর্তারা সেটি মেনে নিলেও সর্বোচ্চ নেতা বলেন, “আমরা জ্বালানি পরীক্ষা করে নেব, তারপর চুক্তি সম্পন্ন হবে।” কিন্তু যখন তারা দেখল আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি, তখন তারা তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে যায় এবং জ্বালানি সরবরাহ করেনি।
আপনার কমেন্ট