হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওল মুসলেমিন আব্বাস রহিমিয়ান হাওযা নিউজ-এর প্রতিবেদকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ঈদুল আজহার ফজিলত ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিধান ব্যাখ্যা করেন এবং এ বিষয়ে প্রচলিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন।
ঈদুল আজহার সুন্নত আমলসমূহ
এই হাওযাভিত্তিক গবেষক ঈদুল আজহাকে ইসলামের অন্যতম বরকতময় ঈদ হিসেবে উল্লেখ করেন, যা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয়। এই মহান দিনের সুন্নত আমলগুলো হলো:
১. গোসল করা
২. ঈদের নামাজ আদায় করা
৩. এ দিনের জন্য নির্ধারিত দোয়াগুলো পড়া, বিশেষত “দুয়া-ই নুদবা”
৪. বাধ্যতামূলক নামাজের পর ‘তাকবির’ বলা—যেমনটি মাফাতীহুল জিনান কিতাবে এসেছে
৫. এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো কোরবানি দেওয়া।
হজ পালনকারীদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব, অন্যদের জন্য সুন্নত
হুজ্জাতুল ইসলাম রহিমিয়ান বলেন, হজ পালনকারীরা যখন আরাফা ও মুযদালিফায় অবস্থান শেষে মিনায় প্রবেশ করেন এবং রমি জিমারাত (শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ) সম্পন্ন করেন, তখন তাঁদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়। তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, কোরবানি শুধু হাজিদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়; বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মুসলমান এই আমল সুন্নতের নিয়তে আদায় করতে পারেন এবং এর জন্য অনেক সওয়াব রয়েছে।
কোরবানির জন্য ঋণ নেওয়া জায়েজ
এই ধর্মীয় বিশ্লেষকের মতে, আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন:
"যদি মানুষ কোরবানির মধ্যে কী ফজিলত ও বরকত রয়েছে তা জানতো, তবে তারা ঋণ করেও কোরবানি করত।"
হুজ্জাতুল ইসলাম রহিমিয়ান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন: একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী উম্মে সালমা (রা.) বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমার কোরবানির জন্য টাকা নেই, আমি কি ঋণ করে কোরবানি দিতে পারি?"
তিনি (সা.) উত্তর দেন: "হ্যাঁ, ঋণ করো। এটি একটি উত্তম ঋণ, যা আল্লাহ নিজেই পরিশোধ করে দেবেন।"
তিনি আরও বলেন, কোরবানির প্রথম ফোঁটা রক্ত যেই মুহূর্তে জমিনে পড়ে, আল্লাহ তা'আলা সেই কোরবানিদাতার সব গোনাহ মাফ করে দেন।
সুন্নত কোরবানিতে অংশগ্রহণে একাধিক ব্যক্তির অংশগ্রহণ বৈধ
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে হুজ্জাতুল ইসলাম রহিমিয়ান বলেন: হাজিদের জন্য আলাদা কোরবানি বাধ্যতামূলক হলেও, যারা সুন্নতের নিয়তে কোরবানি দেয়, তাদের জন্য একাধিক ব্যক্তি একটি কোরবানিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
কোরবানির আসল উদ্দেশ্য: তাকওয়ার অর্জন
কেউ কেউ প্রশ্ন করে থাকেন—"আল্লাহ কি আমাদের কোরবানির মাংস বা রক্ত চান?"—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি সূরা হজের ৩৭ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করেন:
"তাদের গোশত ও রক্ত কখনোই আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে।"
তিনি বলেন, কোরবানির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া ও তাকওয়ার অর্জন। এ মহৎ আমল একদিকে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম, তেমনি এর মাধ্যমে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের কাছে গোশত পৌঁছে যায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র কোরবানি করার ও এর বরকত অর্জনের তাওফিক দিন।
আপনার কমেন্ট