হাওজা নিউজ এজেন্সি-এর প্রতিবেদক জানায়, হাওজায়ে ইলমিয়ার পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলীরেজা আ’রাফি কোম শহরের ‘খাদেমুর রেজা’ হায়াতের সদস্যদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে এই হায়াতের মর্যাদা ও ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে আহলে বাইত (আ.)-এর খিদমতে অব্যাহত প্রচেষ্টার জন্য তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি আশুরার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে বলেন:
আশুরার দুটি দিক রয়েছে:
১. একটি হল বিশ্বাসগত ও খাঁটি ধর্মীয় দিক, যার ইসলামের নবুয়ত ও ইমামতের ইতিহাসে অতুলনীয় স্থান রয়েছে। এমনকি বদর, উহুদ বা খায়বার যুদ্ধের সাথেও এর তুলনা হয় না।
২. দ্বিতীয়টি হল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিক, যা ইসলামের ইতিহাসে এক ‘নাজাতের তরী’ বা মুক্তির নৌকা হিসেবে কাজ করেছে এবং ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছে।
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বলেন, আশুরা ও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মধ্যে ঐশী রহস্য নিহিত রয়েছে। এই ঘটনা খুব অল্প সময়ের মধ্যে এক দীর্ঘস্থায়ী ও অতুলনীয় প্রভাব রেখেছে ইসলামের ইতিহাসে ও সমগ্র মানবজাতির মধ্যে এবং এটি ইমাম মাহদি (আ.জ.)-এর আগমনের সময় পর্যন্ত ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা হিসেবে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আশুরা কেবল সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্ব ছিল না, বরং এটি এক গভীর ঈমানি ও ঐশী জ্ঞানের উৎস যা যারাই এর নিকটে আসবে, তারাই বেশি উপকৃত হবে। তিনি যোগ করেন, যারা ধর্মীয় হায়াতে খিদমত করে, তারা এই আধ্যাত্মিক কেন্দ্রের নিকটে থাকে এবং এর বিশেষ বরকত লাভ করে।
তিনি আশুরার ধর্মীয় ও জাতীয় পরিচয়ের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, আশুরা ইরানের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও গৌরবের পেছনে এক মূল চালিকাশক্তি এবং ইসলামি বিপ্লবের অনুপ্রেরণা ছিল। ইসলামি বিপ্লব আশুরার প্রতিচ্ছবি এবং এর বার্তাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে।
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি জোর দিয়ে বলেন, সময় ও প্রজন্মের চাহিদা অনুযায়ী আশুরাকে বারবার নতুনভাবে পাঠ করা দরকার। তবে এর মূল ভিত্তি বজায় রেখে আধুনিক প্রেক্ষাপটে সমন্বয় সাধন করতে হবে। তিনি বলেন, আজকের সমাজের জন্য আজাদারির অনুষ্ঠানসমূহে নবায়ন প্রয়োজন, তবে শর্ত হলো—ধর্মীয় মূলনীতি থেকে বিচ্যুতি না ঘটে।
তিনি কোম শহরের গুরুত্ব ও ক্বোমিদের পরিচয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ক্বোম হল বারোশ বছরের পুরোনো এক জ্ঞান ও ফিকাহর কেন্দ্র এবং হযরত মাসুমা (সা.আ.)-এর মাজারের পাশে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। ক্বোমের জনগণ এই বিশাল পুঁজি বা ঐতিহ্যের মূল অংশীদার, এবং এই ইতিহাস ও পরিচয়ের প্রতি তাদের অনুভূতিকে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমে আরও জোরদার করা উচিত।
শেষে আয়াতুল্লাহ আ’রাফি তাঁর আফ্রিকায় মুহাররম মাসের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলেন, এক বছর আফ্রিকায় অবস্থানকালে তিনি আশুরা থেকে এক শতাধিক পাঠ বা শিক্ষা বের করে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যা এই মহান শিক্ষালয়ের গভীরতার প্রমাণ বহন করে।
আপনার কমেন্ট