শনিবার ৭ জুন ২০২৫ - ১৩:২৭
"অগ্রগামী ও আদর্শ হাওজাহ" শীর্ষক ঐতিহাসিক বার্তার আন্তর্জাতিক পাঠ

"অগ্রগামী ও আদর্শ হাওজাহ" শীর্ষক ঐতিহাসিক বার্তার আন্তর্জাতিক পাঠ

একটি বার্তা যা বৈশ্বিক সভ্যতা গঠনের রোডম্যাপ

হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমীন হোসেইনি কোহসারি ঐতিহাসিক বার্তা "অগ্রগামী ও আদর্শ হাওজাহ"-এর উদ্ধৃতি দিয়ে জোর দিয়ে বলেন: হাওজাসমূহ হাজার বছরের ইতিহাসের উত্তরাধিকার হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। তিনি হাওজাহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা তাদের নিজ নিজ কাঠামো অনুযায়ী আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা তৈরি করে, পরিবর্তনের চালিকাশক্তিগুলো চিহ্নিত ও অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, "অগ্রগামী ও আদর্শ হাওজাহ" শীর্ষক বার্তার আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা — যা ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পক্ষ থেকে কুম শহরের হাওজাহর পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উপলক্ষে প্রেরিত বার্তার আন্তর্জাতিক দিক ও দায়িত্বসমূহ বিশ্লেষণের লক্ষ্যে আয়োজিত — কুমের হাওজাহ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের আয়াতুল্লাহ হায়েরি (রহ.) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ব্যবহৃত ছবি: বার্তার আন্তর্জাতিক দিক ও দায়িত্ব
হাওজাসমূহের কৌশলগত রূপান্তর আন্তর্জাতিকতার দিকে

হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমীন সাইয়্যেদ মোফিদ হোসেইনি কোহসারি, যিনি হাওজাহসমূহের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপপ্রধান, এই সভায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বার্তার বৈশ্বিক দিক তুলে ধরে হাওজাহর কাঠামোগত রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, হাওজাকে একটি প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে হবে এবং এজন্য পাঁচটি মূল মিশন ও ছয়টি মৌলিক কথাবার্তার দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি দুটি মূল প্রশ্ন বিশ্লেষণ করেন:

১. সর্বোচ্চ নেতার এই বার্তার আন্তর্জাতিক পাঠ কী?
২. এই বার্তার আলোকে কি একটি কৌশলগত মডেল তৈরি করা সম্ভব?

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, হাওজা একটি প্রাকৃতিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। তিনি পাঁচটি পরিচয়মূলক উপাদানের কথা বলেন যা হাওজাহকে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে উন্নীত করার উপযোগী।

হাওজাসমূহের পাঁচটি আন্তর্জাতিক মিশন:

১. বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা:
হাওজাকে ইসলামী বিশ্বের বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তার মতামত বৈশ্বিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হয়।

২. ইসলামী জ্ঞানের উদ্ভাবন ও উন্নয়ন:
বিশেষ করে ‘শাসনব্যবস্থাপনা বিষয়ক ফিকহ’ এবং ‘সভ্যতামূলক ফিকহ’-এর ক্ষেত্রে নবপর্যায়ের রূপান্তর ঘটাতে হবে। ফিকহকে একটি ‘মাতৃবিজ্ঞান’ হিসেবে বৈশ্বিক রূপ দেওয়া প্রয়োজন।

৩. বিশ্ব জ্ঞানের সাথে সমালোচনামূলক সংলাপ:
শুধু অনুসারী না হয়ে, নীতিগত দৃঢ়তা বজায় রেখে বিশ্ব চিন্তাবিদদের সাথে সক্রিয় সংলাপে লিপ্ত হওয়া।

৪. ভবিষ্যতদর্শী বৈজ্ঞানিক রূপান্তর:
হাওজাহর জ্ঞান আজকের বিশ্ব চাহিদার জবাব দিতে হবে এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশও প্রদান করতে হবে।

৫. ইসলামী সভ্যতা নির্মাণ:
হাওজা থেকে উৎপাদিত জ্ঞান উম্মাহ ও সভ্যতা গঠনে সহায়ক হতে হবে।

ছয়টি রূপান্তরধর্মী কথাবার্তা:

১. ইসলামী নব সভ্যতা গঠনের কথাবার্তা:
হাওজার ভূমিকাকে সভ্যতা নির্মাণের প্রকল্পে পুনঃসংজ্ঞায়িত করা।

২. ঐতিহাসিক ধারাবাহিক পরিচয়ের কথাবার্তা:
কুমের হাওজাকে নাজাফ, কারবালা, ইসফাহান ও মাশহাদের হাজার বছরের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা।

৩. বৈশ্বিক চেতনার কথাবার্তা:
হাওজাহকে জাতিগত, মাজহাবিক ও ধর্মীয় সীমাবদ্ধতার বাইরে চিন্তা করতে হবে।

৪. উম্মাহ গঠনের কথাবার্তা:
ইসলামী বিশ্বের ঐক্যকে হাওজার মূল উদ্বেগে পরিণত করা।

৫. রূপান্তরগ্রহণের কথাবার্তা:
হাওজাহকে বৈশ্বিক জ্ঞানের সীমানায় অগ্রসর হতে হবে।

৬. আন্তর্জাতিক দূরদর্শিতার কথাবার্তা:
বিশ্ব পরিস্থিতির বিশ্লেষণ হাওজার নিয়মিত কার্যসূচির অংশ হতে হবে।

কার্যকর কৌশল ও বাস্তবায়ন পর্যায়:

হাওজার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপপ্রধান তিনটি কৌশলগত স্তরের কথা বলেন:

১. চেতনার স্তর: মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির রূপান্তর
২. প্রাতিষ্ঠানিক স্তর: কাঠামো ও নীতিমালার পরিবর্তন
৩. কার্যক্রমের স্তর: বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন

তিনি হাওজা সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা এই কথাবার্তাগুলোকে প্রতিষ্ঠানের কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা তৈরি করে। পাশাপাশি রূপান্তরের চালিকাশক্তিগুলো চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করার পরামর্শ দেন।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা:

তিনি বলেন, হাওজার আন্তর্জাতিক শাখাগুলোর কাঠামোগত দুর্বলতা ও দক্ষ জনশক্তির অভাব স্পষ্ট, তাই এসব কেন্দ্রের কাজের পরিধি পুনঃসংজ্ঞায়িত করা জরুরি।

পরিশেষে তিনি জানান, এই ধারাবাহিক মতবিনিময় সভাগুলো ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত রূপরেখার ৩০ শতাংশ ইতিমধ্যে সংশোধিত ও সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন: আন্তর্জাতিকতা যেন কোনো প্রান্তিক বিষয় না থাকে, বরং হাওজাহর প্রতিটি কর্মকাণ্ডে এর কেন্দ্রীয় স্থান থাকা উচিত।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha