হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,
ইতিহাস, ন্যায়বিচার ও ফেরতের লড়াই: ডঃ মুহাম্মদ সাইদুল ইসলাম
ঔপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে প্রায় ৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সম্পদ লুট করে নিয়েছে—এ তথ্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিবাদের ভাষা নয়, বরং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ইতিহাস ও গবেষণায় প্রতিফলিত একটি নির্মম সত্য। এই মহালুটের জন্য ব্রিটেন এখনো কোনো দুঃখপ্রকাশ তো দূরের কথা, দায় স্বীকারও করেনি। বরং আজকের দিনে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক এখনো তাদের ঔপনিবেশিক শাসন ও লুটপাটকে ‘সভ্যতা বিস্তার’ হিসেবে গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে।
আমি যখন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম, সেখানে ব্রিটেনের নিজস্ব কোনো সাংস্কৃতিক নিদর্শন খুঁজে পাইনি—প্রতিটি আর্টিফ্যাক্টই যেন ইতিহাসের গর্ভ থেকে ছিনিয়ে আনা নিদর্শন: ভারতের টিপু সুলতানের তরবারি, মিশরের মমি, আফ্রিকার ভাস্কর্য, মধ্যপ্রাচ্যের চিত্রকর্ম। একদা অস্ত্রের মুখে লুট করে যা নিয়েছিল, এখন তা ‘ঐতিহাসিক সম্পদ’ হিসেবে প্রদর্শন করছে। আর আমাদের কাছ থেকে লুট করা জিনিসগুলো আমরাই টাকা খরচ করে গিয়ে দেখে আসছি!
কিন্তু কেবল ইতিহাসেই নয়—এই লুটতন্ত্র এখনো টিকে আছে, রূপ পাল্টে। এক সময় ব্রিটিশরা সরাসরি লুট করে নিয়ে যেতো; এখন তারা এমন এক লুটপাটের কাঠামো এবং নৈতিকতা রেখে গেছে, যেখানে তাদের আর সরাসরি লুট করতে হয় না। এখন স্থানীয় লুটেরারাই সেই কাজ করে—সম্পদ পাচার করে নিয়ে যায়, অফশোর একাউন্টে জমা রাখে, পশ্চিমা বিশ্বে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে।
এই প্রক্রিয়াই পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার স্বরূপ। ইমানুয়েল ওয়ালারস্টাইনের ‘ওয়ার্ল্ড সিস্টেম থিওরি’ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদ একটি কেন্দ্র-প্রান্ত (core-periphery) ব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে core (মেট্রোপলিটান দেশসমূহ) সর্বদা সম্পদের উপরে অধিকার রাখে, আর periphery (উপনিবেশ, উত্তর-ঔপনিবেশিক ও দরিদ্র দেশসমূহ) চিরকাল শোষণের শিকার হয়। চারশো বছরের পুঁজিবাদী ইতিহাসে আমরা এই core-এর পরিবর্তন দেখতে পাই—ইউনাইটেড প্রভিন্সেস অব ইউরোপ থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, সেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—এবং ভবিষ্যতে হয়তো সেই ভূমিকায় আসবে চীন।
এই ব্যবস্থায় সম্পদের প্রবাহ সর্বদা periphery থেকে core-এ প্রবাহিত হয়, আর রাজনৈতিক চাপ ও ক্ষমতার প্রক্ষেপন ঘটে উল্টোভাবে—core থেকে periphery-তে। ফলে periphery দেশগুলোর জনগণের শোষণ ও বঞ্চনা যেন চিরস্থায়ী এক নিয়তি। গত পনের বছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার একটা বড় অংশ রয়েছে ব্রিটেনে।
এই প্রেক্ষাপটে, দেশের বাইরে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য ড. ইউনুসের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু ইতিহাস আমাদের শেখায়—ঔপনিবেশিক আমলে লুট করা ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার যেমন কখনো ফেরত আসেনি, তেমনি আজকের পাচারকৃত অর্থও আদৌ ফিরে আসবে কি না—সে ব্যাপারে গভীর সন্দেহ থেকেই যায়। হয়তো কিছুমাত্রায় বিচারের নামে বিচার হবে—কিছু রাজনীতিক ও কর্মকর্তার মন্ত্রিত্ব যাবে, তদন্ত হবে, প্রতিবেদন প্রকাশ হবে, কিছু সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে। কিন্তু সেই অর্থ ফেরত দিতে ব্রিটেন আদৌ রাজি হবে কি?
এই প্রশ্নই হয়তো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ড. ইউনুসের সঙ্গে দেখা করতে অনাগ্রহী করে তুলেছে। কারণ প্রশ্নটা শুধু পাচারের নয়—এটা ঐতিহাসিক দায়, পুঁজিবাদী শোষণ, এবং নৈতিক দায়মুক্তির মুখোমুখি দাঁড়ানোর প্রশ্ন।
পশ্চিমারা বিশেষ করে যুরা (ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্য),মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র),ফাঁজুরা ( ফ্রান্স),সুইসুরা (সুইজারল্যান্ড) ইত্যাদি হচ্ছে সব বড় বড় পাকা চোর বা বিশ্ব চোর। এদের ক্ষেত্রে পুকুর চুরি মোটেও খাটে না বরং এ কথা বললে এদের মর্যাদা খাটো করা হবে। তাই এদের ক্ষেত্রে এরা সাগর মহাসাগর চুরিও নিতান্ত ছোটো খাটো বিষয় বরং বলতে হবে যে এরা বিশ্ব চুরি করে এমনকি নিখিল বিশ্বও চুরি করে ফেলতে পারে। তবে এদের চুরি হলো খুবই সিস্টেম্যাটিক (নিযামমন্দ্ نظام مند) ও কায়দা-কানুনের ছকে (অর্থাৎ কানুনমন্দ্ قانونمند ) আঁটা এবং খুবই বিধিবদ্ধ ( যাবেতামন্দ ضابطه مند) হয়ে থাকে যে এরফলে তা চুরি বলেই মনে হয় না। বরং মনে হবে যে বাব্বা! এরা কত পাংচুয়াল,কত বড় নিয়ম-শৃঙ্খলা পালন ও রক্ষাকারী ,কত বড় নীতিবান!! তবে এটা ঠিক যে এরা ছিঁচকে চুরি করে না বা খুব কমই করে যেটা হচ্ছে অপশ্চিমাদের বৈশিষ্ট্য।আর ছিঁচকে চোরই সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে এবং সর্বত্র জানাজানি ও রাষ্ট্র হয়ে যায়। কিন্তু বড় বড় চোরেরা যেমন বিশ্ব চোরদেরকে সহজে ধরা যায় না ,আর ধরাও পড়ে খুব কম এবং ধরা পড়লেও নানা ধরনের অভিনব কৌশল ও কায়দায় পার পেয়েও যায় এরা। এদের খুব কমেরই সাজা হয়।আর এরা বিশ্বের জাতিসমূহের সম্পদ লুট করে বহাল তবিয়তে পশ্চিমা দেশগুলোয় বিনিয়োগ করে সেখানে মহাসুখে জীবন যাপন করে।আর পশ্চিমা দেশগুলোর ধনকুবের পুঁজিপতি কর্পোরেট ব্যক্তিরা তো বিশ্ব চুরি এবং নিজ নিজ জাতির সম্পদ চুরিতে তো মহা পটু এবং বিভিন্ন কায়দায় ও আইনকানুনের মারপ্যাঁচ খাটিয়ে নিজ নিজ দেশের যাবতীয় সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছে যার প্রমাণ হলো ২০০৯-২০১০এ ১% বনাম ৯৯% ওয়াল ট্রিট আন্দোলন যা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর ভাবে ও সিদ্ধ হস্তে দমন ও মুতালাশী (ছত্রভঙ্গ) করে দিয়েছে। ১% মানে কী? মানে মাযুরায় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) জনসংখ্যার ১% -এর হাতে সিংহভাগ সম্পদ এবং অবশিষ্ট ৯৯% জনগণের হাতে কেবল আমের আঁটি অর্থাৎ খুব সামান্য সম্পদ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী লুটপাট ও ছলে বলে কৌশলে সম্পদ আহরণ ও অর্জন করা বাদ দিলেও বিভিন্ন কায়দা ও অপকৌশল ( ট্যাকটিক) ব্যবহার করে নিজ দেশের সম্পদের সিংহভাগই পকেটস্থ ও দখল করে নিয়েছে। চুরি ও দুর্নীতিকে যদি ট্যাকটিক ও কলা-কৌশল এবং বৈধাবৈধ যে কোনো পন্থায় সম্পদ অর্জন ও আহরণ কারীকে ধুর্ত নয় বরং বুদ্ধিমান বলা হলে চুরি ও দুর্নীতির কদর্যই লোপ পাবে ঠিক তেমনি যেমনি পতিতা ও বেশ্যাদেরকে যৌনকর্মী বলা হলে বেশ্যাবৃত্তি এবং যিনা-ব্যভিচারের কদর্য লোপ পায়!!!
আসলে বিশ্বব্যাপী ফিতনা-ফাসাদ , দুর্নীতি ও অপরাধের মূল হোতা ও নারদ মণিই হচ্ছে পাশ্চাত্য অর্থাৎ পশ্চিমারা।
মহান আল্লাহ এ সব বিশ্ব চোরের হাত থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করুন।
রিপোর্ট: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান।
আপনার কমেন্ট