হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম আমিন আসাদপুর, হাওযার একজন শিক্ষক ও ইসলামি বিজ্ঞান গবেষক, হাওযা নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সর্বোচ্চ নেতার ও দীনী মারজায়াতের বিরুদ্ধে হুমকিদানকারীদের মুহারিব ঘোষণা করার এই ঐতিহাসিক ফতোয়ার সামাজিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য এবং এর ঐতিহাসিক পটভূমি ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, শিয়া ফিকাহ এবং মারজায়াতের ইতিহাসে এরকম অনেক ফতোয়ার নজির রয়েছে। বিশেষ করে সাফাভি যুগ থেকে যখন ফিকাহ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে, তখন থেকেই রাষ্ট্রবিরোধী ও শত্রু রাষ্ট্রকে মুহারিব ঘোষণা করে জিহাদের ফতোয়া দেখা গেছে, এর পাশাপাশি ইসলামী সরকারের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণ বিষয়েও যেমন কর ও রাজস্ব দেওয়ার বিষয়ে ফতোয়া রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ফতোয়া রাজনৈতিক ও সামাজিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে আমাদের ফিকাহকে জীবন্ত ও আধুনিক করে তোলে এবং সমসাময়িক সমস্যা মোকাবেলায় উপযোগী করে তোলে। শিয়া ফিকাহ সবসময় এমন চিন্তাশীল মুজতাহিদের প্রয়োজন যাঁরা সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে ইসলামি বিধানের সমন্বয় করতে পারেন।
তিনি বলেন, এই সাম্প্রতিক ঐতিহাসিক ফতোয়া, শিয়া ফিকাহর রাজনৈতিক ও সামাজিক ফতোয়াগুলোর একটি ধারাবাহিক রূপ। বর্তমান যুদ্ধ ও জিহাদের প্রেক্ষাপটে তা কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। এই ফতোয়ায় সর্বোচ্চ নেতাকে হুমকি দেওয়া গোটা ইসলামি উম্মাহর বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং এমন হুমকিকে অমার্জনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাফাভি যুগ থেকে শুরু করে এই ধরনের ফতোয়া রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। কাজার যুগেও বারবার ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলিকে মুহারিব ঘোষণা করে জিহাদের ফতোয়া জারি হয়েছে। তবে
"সাম্প্রতিক ফতোয়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ও বৈধ সরকারের কাঠামোর মধ্য থেকে ইসলামি কিয়ান রক্ষার এক সম্পূর্ণ রূপ।"
তিনি বলেন, অতীতে যেসব শাসকদের বৈধতা ছিল না, তখনও ফুকাহারা ইসলামী সমাজ রক্ষার্থে তাঁদের সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু আজ ইসলামী প্রজাতন্ত্রে এবং ওলায়াতে ফকিহর অধীনে পরিচালিত সরকারে, যদি সর্বোচ্চ নেতাকে হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে মারজায়ে তাকলিদরা সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে ময়দানে অবতীর্ণ হন।
এই ফতোয়ায়
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের মতো হুমকিদাতাদের 'মুহারিব' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাঁদের সরকার ও শাসনব্যবস্থাকেও 'মুহারিব সরকার' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফিকাহি দৃষ্টিকোণ থেকে ‘কাফিরে হারবি’র কথা "কিতাবুল জিহাদ"-এ এসেছে। এই ফতোয়াতে মারজায়ে তাকলিদরাও এ ধরনের হুমকিদাতাদের সেই শ্রেণিতে রেখেছেন এবং তাদের প্রতি ইসলামে নির্ধারিত বিধান প্রয়োগ করেছেন।
‘কাফিরে হারবি’ হলো সেই ব্যক্তি বা রাষ্ট্র যাদের সঙ্গে শান্তির কোনো অঙ্গীকার নেই এবং যারা ইসলামী উম্মাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত — কোরআনেও এদেরকে সেভাবেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
হুজ্জাতুল ইসলাম আসাদপুর জোর দিয়ে বলেন, এই ফতোয়ায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, বিশ্বের সব মুসলমানদের উচিত এসব ব্যক্তিকে 'কাফিরে হারবি' হিসেবে বিবেচনা করা এবং তাদের ওপর প্রযোজ্য বিধান কার্যকর করা। তাদের জান-মাল-ইজ্জতের কোনো মর্যাদা নেই এবং মুসলমানরা তাদের যথাযোগ্য শাস্তি দিতে পারে।
এই ফতোয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো — এটি সর্বোচ্চ নেতাকে হুমকি ও আক্রমণের জন্য একটি উচ্চ ব্যয়মূল্য নির্ধারণ করে দেয়।
আপনার কমেন্ট