বুধবার ২ জুলাই ২০২৫ - ১৩:৩৫
আশুরা: নৈতিক শিক্ষা ও প্রতিরোধ সংগ্রামের এক অনন্য আদর্শ

আশুরা শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক শোকাবহ ঘটনা নয়; বরং এটি একটি নৈতিক ও আত্মিক গঠনমূলক বিদ্যালয় এবং যুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রামের একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি’র কাশান প্রতিনিধিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মেহেদি ইকবালী  ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাত উপলক্ষে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, আশুরার দিন ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পবিত্র কিয়াম মানব ইতিহাসের অন্যতম গভীর ও প্রভাববিস্তারকারী ঘটনা। এটি কেবল একটি ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা নয়, বরং এক চিরন্তন আদর্শ—যা স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।

তিনি বলেন, আশুরার বিপ্লব ইসলামি বিধান ও শরিয়তের পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইমাম হুসাইন (আ.) নিজেই ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁর কিয়ামের উদ্দেশ্য ছিল তাঁর নানা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের সংস্কার এবং সমাজে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ (আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি আনিল মুনকার) কায়েম করা।

আশুরা: সত্য ও মিথ্যার মাঝে স্পষ্ট বিভাজন
তিনি বলেন, আশুরার ময়দান ছিল সত্য ও মিথ্যা, আলো ও অন্ধকার, ঈমান ও কুফরের মধ্যকার এক উজ্জ্বল ও চিরন্তন লড়াই।
ইমাম (আ.) ও তাঁর সাহাবীদের শাহাদাত এতটা স্পষ্টভাবে এই সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, তা যুগে যুগে মুক্তিকামী মানুষদের জন্য এক অবিনাশী অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছে।

অহম্মানতা ও মর্যাদার শিক্ষা
তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সেই অমর উক্তি স্মরণ করিয়ে দেন, “হাইহাত মিন্না-য্-যিল্লা! (আমাদের জন্য লাঞ্ছনা অসম্ভব!)”-
এই বাক্য কেবল একটি স্লোগান নয়, বরং দাসত্ব ও যুলুমের বিরুদ্ধে মানবতার চিরন্তন মুক্তির ডাক। আশুরা শেখায়: লাঞ্ছনার জীবনের চেয়ে— সম্মানের সাথে মৃত্যু শ্রেয়।

ত্যাগ ও একাগ্রতার নিদর্শন
তিনি বলেন, আশুরার কারবালার ময়দানে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রত্যেকে প্রমাণ করেছেন, সত্যের প্রতি আনুগত্য ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মোৎসর্গই প্রকৃত লক্ষ্য। এই ঘটনাগুলোতে খাঁটি ইখলাস ও নিখাদ ভালোবাসার বাস্তব রূপ ফুটে উঠেছে।

আশুরার বার্তা: নিরবিচারে যুলুমবিরোধী সংগ্রাম
তিনি ইমাম খোমেনির (রহ.) ঐতিহাসিক বাণী উদ্ধৃত করেন, “আশুরাকে জীবিত রাখো, যাতে ইসলাম বেঁচে থাকে।”

এই আহবান নির্দেশ করে যে, আশুরা কেবল অতীত নয়—এটি চিরকালীন প্রতিরোধের প্রতীক। যেকোনো যুলুম, দুর্নীতি, বৈষম্য ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে সজাগ থাকা এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ কায়েম করাই এই বিপ্লবের বার্তা।

তিনি বলেন, আশুরার শিক্ষা বাস্তবায়নের পথ হলো:-
-জ্ঞানচর্চা ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়াই,
-সচেতনতা সৃষ্টি ও আশুরার আদর্শ প্রচার,
-দুর্নীতির বিরোধিতা ও নির্যাতিতদের পক্ষে অবস্থান,
-নিজেকে শোধরানো ও আত্মনিয়ন্ত্রণের চর্চা,
-শহীদত্বের সংস্কৃতি জাগ্রত রাখা এবং
-সাম্রাজ্যবাদ ও বৈশ্বিক যুলুমের মোকাবিলা।

“প্রত্যেক দিন আশুরা, প্রতিটি ভূমিই কারবালা”
তিনি ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর উক্তিটি স্মরণ করিয়ে দেন: “প্রত্যেক দিন আশুরা, আর প্রতিটি ভূমি কারবালা।” এটি বোঝায়, হক ও বাতিলের লড়াই কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি সর্বদা ও সর্বত্র বিদ্যমান।

আশুরা এক চিরন্তন আলোয় ভরা প্রদীপ
শেষে হুজ্জতুল ইসলাম ইকবালী বলেন, “আশুরা এমন এক আলো যা নিভে যায় না।”

তিনি আরও বলেন, যদি আমরা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পথ অনুসরণ করি, তবে সমাজে ন্যায়, আত্মত্যাগ, ঈমান ও জবাবদিহিতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি দোয়া করে বলেন, আল্লাহ যেন আমাদের ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রকৃত অনুসারী বানান, আমাদের জীবন যেন হয় তাঁর মর্যাদা ও ন্যায়ভিত্তিক আদর্শে আলোকিত, আর আমরা যেন তাঁর কিয়ামের আদর্শকে ধারণ করে ইমাম মাহদী (আ.জ.)-এর আগমনের প্রস্তুতি নিতে পারি।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha