হাওজা নিউজ এজেন্সি তাসনিম নিউজের আন্তর্জাতিক বিভাগের সূত্রে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক ও ‘রাই আল-ইয়াওম’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আবদুলবারি আতওয়ান তার সাম্প্রতিক সম্পাদকীয় নিবন্ধে সিরিয়ার গোলানি সরকারের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্ভাব্য সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি লেখেন, ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার (পিএলও) কিছু গোপন আলোচনাকারী অসলো চুক্তির উদ্দেশ্যে যখন নরওয়ের রাজধানীতে আলোচনায় লিপ্ত ছিলেন, তখন তারা গুজব ছড়ায় যে সিরিয়া নাকি ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে যাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য ছিল সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদকে ফিলিস্তিনিদের দৃষ্টিতে অবিশ্বস্ত হিসেবে উপস্থাপন করা।
সিরিয়ার ঐতিহাসিক অবস্থান: আপসের ঘোর বিরোধিতা
আতওয়ান লিখেন, এই গুজবের উদ্দেশ্য ছিল অসলো চুক্তির মতো বিশ্বাসঘাতক চুক্তিগুলোর জন্য জনমত তৈরি করা। সেই সময় লন্ডনে নিযুক্ত সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ খিজর তাকে বলেন—আমি কেবল একজন রাষ্ট্রদূত নই, একজন সিরিয় নাগরিক হিসেবে বলছি, আসাদ পরিবার—হাফেজ হোন বা তার সন্তানরা—কখনোই ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো আপস করবেন না—এমনকি যদি ইসরায়েল পুরো গোলান থেকে পিছু হটে।
আতওয়ান বলেন, আজ আমি সেই কথা স্মরণ করছি। তিনি জানান, ২০২৩ সালের মে মাসে দামেস্কে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদও তাকে অনুরূপ কথা বলেন।
আমেরিকার খোঁড়া চোয়ানে জোলানির পতন
আতওয়ান বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর ২০০৪ সালের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে যে চমক তৈরি করেন, তা আসলে জোলানি ও নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য সাক্ষাতের প্রস্তুতি ছিল। এই বৈঠক সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথ সুগম করতে পারে।
তিনি বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের “নতুন মধ্যপ্রাচ্য” পরিকল্পনারই অংশ। সূত্র জানিয়েছে, এই প্রকল্পের প্রথম ধাপ হবে সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ, এরপর তুরস্ক-ইসরায়েল জোট গঠনের মধ্য দিয়ে এটি পূর্ণতা পাবে।
আতওয়ান যোগ করেন, জোলানির মূল লক্ষ্য সিরিয়ার ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করানো। তিনি গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ নিয়ে একটিও নিন্দা বিবৃতি পর্যন্ত দেননি। “শান্তির রাব্বি” হিসেবে পরিচিত আব্রাহাম কুপারও এই প্রচেষ্টায় যুক্ত; যিনি সম্প্রতি দামেস্কে জোলানির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন এবং বলেন, “এ বছরের সবচেয়ে বড় চমক হতে যাচ্ছে জোলানি-নেতানিয়াহু বৈঠক।”
এই বৈঠক ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং মার্কিন বিশেষ দূত টম ব্যারাকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক চুক্তির ছদ্মবেশ
চুক্তির প্রাথমিক রূপ হবে নিরাপত্তা চুক্তি, যার অধীনে ইসরায়েলকে সিরিয়ার ভেতরে নিঃশর্ত সামরিক হস্তক্ষেপের অনুমতি দেওয়া হবে। এটি অনেকটা সেই চুক্তির মতো, যেটির আওতায় ইসরায়েল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালাতে পারছে।
আতওয়ান এই চুক্তিকে একটি ভয়াবহ ঐতিহাসিক ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সিরিয়ার জন্য আমেরিকার বিষাক্ত ঘুষ
তিনি বলেন, এই চুক্তির অধীনে ইসরায়েল হয়তো কিছু দখল করা এলাকা থেকে পিছু হটবে, কিন্তু গোলান উপত্যকার মালিকানা ছাড়বে না। তারা চাইবে সিরিয়া ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করুক। এমনকি পিছু হটার ঘটনাও হবে কেবল একটি নাটক।
সিরিয়ার প্রতিরোধী জাতি কখনো আপস করে না
আতওয়ান বলেন, সিরিয়ার সাহসী জনগণ যারা ঔপনিবেশিকতা ও ইহুদিবাদী প্রকল্পের বিরুদ্ধে চারটি বড় যুদ্ধে অংশ নিয়ে হাজারো শহিদ দিয়েছে, তারা কখনো এই আমেরিকান ঘুষ মেনে নেবে না। ১৩ বছরের অবরোধ, যুদ্ধ ও দারিদ্র্যের পরও তারা কখনো পশ্চিমা প্রপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়নি।
চুক্তির যুগ শেষের পথে
তিনি বলেন, ডেভিড ক্যাম্প, অসলো এবং অন্যান্য স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির যুগ শেষের পথে। তথাকথিত মানবাধিকার ও স্বাধীনতার স্লোগান এখন গাজায় নিজেদের আসল রূপ দেখিয়েছে।
প্রতিরোধের অবস্থানেই অটল থাকব
আতওয়ান শেষ করেন এভাবে—যেভাবে আমরা ডেভিড ক্যাম্প, অসলো ও অন্যান্য চুক্তির বিরোধিতা করেছি, তেমনি আজও প্রতিরোধ ও আরব-ইসলামি নীতির পক্ষে অবিচল থাকব—এমনকি যদি সিরিয়ার নতুন সরকার আপসের পথে হাঁটে।
আপনার কমেন্ট