হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান ও দখলদার ইসরায়েলি সরকারের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ দেশটির নতুন প্রশাসন, বিশেষ করে ডাক্তার পেজেশকিয়ানের সরকার,কে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত হওয়া, বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা পুনরায় শুরু করা, সৌদি আরব থেকে ইরানি হজযাত্রীদের ফিরিয়ে আনা এবং এভিয়েশন শিল্পকে এক গভীর সংকট থেকে রক্ষা করাই এখন সরকারের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তবে কয়েক দিন পর জানা গেছে, দুই প্রতিবেশী দেশ, আমিরাত ও তুরস্ক, ইরানের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক সহযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে।
আমিরাত এবং তুরস্ক — এই দুই গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশ ইরানকে সহায়তা দিয়ে দেশের এভিয়েশন শিল্পকে পুনর্জীবিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের এই সহযোগিতা কেবল ইরানি হজযাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনাকে সহজ করবে না, বরং ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করবে এবং অঞ্চলটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাতেও অবদান রাখবে।
ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব দেশটির সরকারকে নানা সমস্যার মুখে ফেলেছে। বিদেশি ফ্লাইট, এয়ারলাইন্স সহযোগিতা, হজযাত্রীদের প্রত্যাবর্তন এবং এভিয়েশন শিল্পকে রক্ষার মতো বিষয়ে এখন সরকারকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতির মাঝেও আমিরাত ও তুরস্কের সঙ্গে একটি "ঐতিহাসিক সহযোগিতা"র খবর আশাব্যঞ্জক দিক উন্মোচন করছে।
মাকসুদ আসআদি সামানী, যিনি ইরানের এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর সংগঠনের সেক্রেটারি, সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে ইরানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানান, বর্তমানে মাশহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মুসকাট, দুবাই, ইস্তাম্বুল, তাশকন্দ, লাহোর এবং মদিনার মতো শহরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু আছে। এটি বোঝায়, সীমিত হলেও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
তিনি আরও জানান, এই আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো কিছু নির্দিষ্ট গন্তব্যেই সীমিত রাখা হয়েছে। এর পেছনে নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক কারণ থাকতে পারে, যা ফ্লাইটের পরিমাণ ও গন্তব্যে প্রভাব ফেলছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।
তুর্কিশ এয়ারলাইন্স এবং ফ্লাই দুবাই-এর মতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এয়ারলাইন্সগুলো এখনও মাশহাদ বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, এই কোম্পানিগুলো ইরানের বিমান নিরাপত্তার প্রতি আস্থা রাখছে এবং এর ফলে পর্যটন ও বাণিজ্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়াও, এ ধরনের উপস্থিতি দেশীয় এভিয়েশন মার্কেটে প্রতিযোগিতাও বাড়াতে পারে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ইরানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সমন্বয় কমিটির এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের পূর্বাঞ্চলের আকাশসীমা বর্তমানে অভ্যন্তরীণ, আন্তর্জাতিক ও ট্রানজিট ফ্লাইটের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি বিমান চলাচলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি এবং এই খাতের পুনরুত্থানের একটি লক্ষণ।
এ ছাড়া, দেশটির কেন্দ্রীয় এবং পশ্চিমাঞ্চলের আকাশসীমা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ট্রানজিট ফ্লাইটের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এটি ইঙ্গিত করে যে, ইরান তার আকাশসীমা ব্যবস্থাপনায় একটি সচেতন ও পরিকল্পিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে, যা নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
সার্বিকভাবে দেখা যায়, ইরানের বর্তমান আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিস্থিতি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুযোগও বিদ্যমান। নির্দিষ্ট গন্তব্যে ফ্লাইট এবং আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোর উপস্থিতি একটি আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
সবশেষে বলা যায়, বিমান নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবার মান উন্নত করতে হলে সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থার সমন্বিত ও সচেতন প্রচেষ্টা দরকার। সঠিক সিদ্ধান্ত এবং কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে ইরানের বিমান শিল্পকে একটি টেকসই অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে এবং গন্তব্যের পরিসরও বাড়ানো যাবে।
আপনার কমেন্ট