সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫ - ১৩:২৪
আশুরার পরের দিন কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনাবলি

আশুরার বিভীষিকাময় রক্তাক্ত দিনের পরের দিন—মহররমের একাদশ তারিখটি ইতিহাসে আরেকটি হৃদয়বিদারক অধ্যায়ের সূচনা করে। এই দিনে শুধু ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সাথিদের নিথর দেহ ময়দানে পড়ে ছিল না, বরং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবার—নারী ও শিশুদের—লাঞ্ছনার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে বিজয়-দম্ভে কুফার দিকে রওনা করেছিল ইয়াজিদি সেনারা। কারবালার ময়দান যেন এক দিকে রক্তমাখা শোক, আর অন্য দিকে বন্দিত্বের বিষণ্ন সূচনা হয়ে উঠেছিল।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: এই নিবন্ধে কারবালার পরে আহলুল বাইতের (আ.) বন্দিত্বের দুঃখময় সফর ও তাঁদের সঙ্গে ইয়াজিদ বাহিনীর নির্মমতা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে:

কারবালা থেকে আহলুল বাইতের (আ.) কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা (১১ মহররম, ৬১ হিজরি)

অমর ইবনে সাদ (লা.) একাদশ মহররম রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত কারবালায় অবস্থান করে। সে তার সেনাদের জানাজা পড়ে দাফন করে। তারপর আদেশ দেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবারবর্গকে উটের পিঠে বন্দির মতো বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক এবং অসুস্থ ইমাম জয়নুল আবেদিন ইবনে হুসাইন (আ.)-এর গলায় লোহার বেড়ি পরানো হয়। নবী পরিবারকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে কারবালার ময়দানে শহীদদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহাবশেষের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

নারীরা যখন তাঁদের আপনজনদের নিথর দেহ দেখেন, তখন শোকভারে কেঁদে ওঠেন, মুখে-বুকে আঘাত করে আহাজারি করেন এবং কান্নায় উট থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

হযরত জয়নাব (সা.আ.) যখন ভাই ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পবিত্র দেহ দেখেন, তখন বলেন,
السلام علیک یا ذبیحا من القفا
হে গলা থেকে জবেহ হওয়া শহীদ, আপনাকে সালাম।

তিনি দেহটি বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “হে রাসুলের সন্তান! হে যাহরার নয়নমণি! আমার জীবন তোমার জন্য উৎসর্গ হোক।”

এরপর ব্যথাভারাক্রান্ত হৃদয়ে চিৎকার করে বলেন,

“হে নানা, হে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)! আপনার উপর ফেরেশতাদের সালাম বর্ষিত হোক। দেখুন, আপনার হুসাইন রক্তাক্ত অবস্থায়, দেহ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে পড়ে আছে। আর আপনার কন্যারা বন্দি অবস্থায় আছে।”

তিনি বিলাপ করে বলেন,

“আমার পিতা কোরবান সেই শহীদের জন্য, যার ক্ষত আর নিরাময় পাবে না;
যিনি দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে দুনিয়া ছেড়েছেন; যিনি পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদত বরণ করেছেন।”

অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত জয়নব কুবরা (সা.আ.) যখন ভাই ইমামের বিদীর্ণ হৃদয় ও কাটা গলা লক্ষ্য করেন, তখন ব্যথাভারাক্রান্ত হৃদয়ে আহাজারি করে বলেন,

“হে ভাই! যদি এই তীর আমার হৃদয়ে বিঁধতো! যদি তোমার পরিবর্তে আমাকেই জবেহ করা হতো!”

ইমাম হুসাইনের (আ.) ৩-৪ বছরের আদরের কন্যা সাকিনা (সা.আ.) পিতার দেহ জড়িয়ে ধরে বিলাপ করেন,

“হে পিতা! আপনার শাহাদাতে শত্রুরা আনন্দিত হয়েছে। বনু উমাইয়া আমাকে এত অল্প বয়সে এতিম করেছে। এখন রাত হলে, আমাকে কে রক্ষা করবে? (তারা) আমার কানের দুল কেড়ে নিয়েছে, চাদরও ছিনিয়ে নিয়েছে।”

আল্লামা কাফ’আমি (রহ.) বর্ণনা করেন, সাকিনা (সা.) বলেন, “আমি যখন পিতার দেহকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম, তখন অজ্ঞান হয়ে পড়ি। তখন শুনতে পাই, পিতা বলছেন,
يا شيعتي مهما شربتم ماء عذب فاذكروني
أو سمعتم بغريب أو شهيد فاندبونی
হে আমার শিয়া সম্প্রদায়! যখনই মিষ্টি পানি পান করো, আমাকে স্মরণ করো। যখন কোনো শহীদ বা নির্জন মুসাফিরের কথা শুনো, আমার জন্য আহাজারি করো।”

উৎস: হাওয়াদিসুল আয়াম, সাইয়্যেদ মাহদি মারআশি নাজাফি

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha