শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫ - ১৫:০৬
ইরান কখনো পরমাণু বোমার পেছনে ছুটেনি: ইহুদি ধর্মগুরুর স্পষ্ট বার্তা

জাতীয় সম্মেলনে ইরানি ইহুদি ধর্মগুরু হাখাম ইউনেস হামামি লালেজার জোর দিয়ে বলেন—ইরান কখনো পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা করেনি। ইরানের প্রতিরক্ষা শক্তি হলো শান্তিপ্রিয়তা, আত্মরক্ষা ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের প্রতিফলন। তিনি ধর্মীয় সহাবস্থান ও জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে পশ্চিমা ও ইহুদিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধ ফ্রন্ট গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানে অনুষ্ঠিত ‘আসমানি ধর্মসমূহ ও পশ্চিমা-ইহুদিবাদী আগ্রাসন’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন যাতে ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মের নেতা ও অনুসারীরা অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরায়েলি ও পশ্চিমা আগ্রাসনের মূল্যায়ন এবং সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

যুদ্ধ ও শান্তির বিষয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি
সব ধর্মেই যুদ্ধকে অপছন্দনীয় বলা হলেও, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। মানুষ সবসময় শান্তি কামনা করে, এবং সেই শান্তির বাস্তবায়ন ঘটবে প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের মাধ্যমে। তবে ততদিন, যুদ্ধ মানবজাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া বাস্তবতা হিসেবে থেকে যাবে।

ইহুদি দৃষ্টিকোণ: ‘মিলখেমেত মিতসবা’ ও ‘মিলখেমেত রেশুত’
ইহুদি আইনে যুদ্ধ দুই ধরনের:
১) মিলখেমেত মিতসবা (যুদ্ধ ফরজ) — যেমন আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ।
২) মিলখেমেত রেশুত (অনুমোদিত যুদ্ধ) — যা নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে বৈধ।
সম্প্রতি ইরানে সংঘটিত ১২ দিনের যুদ্ধ ছিল একেবারে আত্মরক্ষার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

নেতৃত্ব, প্রতিরোধ ও জাতীয় প্রতিক্রিয়া
যখন শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক আলোচনা চলছিল, তখন কোনো সতর্কতা ছাড়াই ইরানকে নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়। এতে বহু নারী, শিশু, বিজ্ঞানী ও সামরিক নেতা শহিদ হন। কিন্তু সর্বোচ্চ নেতার বিচক্ষণতা ও পূর্বপ্রস্তুতির কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জবাব দেওয়া সম্ভব হয়।

পরমাণু অস্ত্র বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা
ইরান কখনো পরমাণু অস্ত্র অর্জনের চেষ্টায় ছিল না, বরং তার পারমাণবিক কর্মসূচি সর্বদাই চিকিৎসা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়ে আসছে। এটি ইসলামী ও মানবিক নীতির পরিপন্থী যে, এমন ধ্বংসাত্মক অস্ত্র প্রস্তুত করা হবে।

জাতিগত ও ধর্মীয় সংহতির প্রতিফলন
ইরানে জাতিগত ও ধর্মীয় ভিন্নতা সত্ত্বেও সবাই ঐক্যবদ্ধ। কেউ নিজের দেশ বিক্রি করেনি বা শত্রুর পক্ষে অবস্থান নেয়নি। এই জাতীয় ঐক্য ইরানের হাজার বছরের সংস্কৃতির প্রতিফলন, যা নেতৃত্ব নয় বরং জনগণ নিজেরাই আগলে রেখেছে।

ধর্মীয় মূল্যবোধে মানবিকতা ও ন্যায়বিচার
তাওরাতে বলা হয়েছে: “রক্তপাতের প্রতি উদাসীন থেকো না।” তেমনিভাবে তালমুদ বলছে, “একজন নিরপরাধ মানুষ হত্যা গোটা মানবজাতিকে হত্যার সমান।” তাই সব ধর্মেই ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সর্বাঙ্গীণ প্রতিরক্ষার প্রয়োজনীয়তা
ইরান যুদ্ধের সময় কেবল সামরিক নয়, বরং শহর পরিকল্পনা, আশ্রয়কেন্দ্র, শহিদ ও আহতদের সেবা পর্যন্ত সর্বস্তরে প্রস্তুত ছিল। এই পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিই প্রতিরক্ষা সাফল্যের চাবিকাঠি।

জ্ঞানভিত্তিক প্রতিরক্ষা ও আত্মনির্ভরতা
ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নির্ভর করে না বাইরের দেশ বা বিশেষ ব্যক্তির ওপর। এটি দেশীয় মেধা, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের ফসল, যা বিদেশি চাপেও নষ্ট হওয়ার নয়।

যুদ্ধ নয়, ন্যায়বিচারভিত্তিক বিশ্ব গঠনের ডাক
ইরান প্রস্তাব করে—একটি বৈশ্বিক প্রতিরোধ ফ্রন্ট গঠন হোক, যা কেবল ইরান নয় বরং সব মজলুম জাতিকে একতাবদ্ধ করবে। ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী মতে, প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা আসবেন বিশ্বে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে।

ইরান শান্তিপ্রিয়, আগ্রাসী নয়। বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মানুষের সহাবস্থানই প্রমাণ করে এই জাতির সভ্যতা ও সহনশীলতা কত গভীর। নিরাপত্তা ও শান্তি তখনই টিকবে, যখন আত্মরক্ষার প্রস্তুতি থাকবে। আর সে লক্ষ্যে ইরান সবসময় সচেষ্ট।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha