রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫ - ১৬:৫৭
ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সম্ভাব্য যুদ্ধের তিনটি বড় বাধা

ইসরাইল বর্তমানে বহুমাত্রিক সংকটে নিমজ্জিত, এবং এমন এক অবস্থায় ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধ শুরু করলে তা আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দেবে। ইরান যদি দুর্বল হতো, তাহলে ইসরাইল কখনোই সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধের পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতো না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: সাম্প্রতিক ওই যুদ্ধ ইসরাইলের আগ্রাসনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এবং ইরানের প্রতিরোধ ও পাল্টা হামলার মুখে ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য হয়। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক, বিশ্লেষক এবং জনমত জরিপে দেখা গেছে—এই সংঘর্ষে ইরান বিজয়ী হয়েছে।

তবে যুদ্ধের অবসানের পরও নতুন করে সংঘাত শুরুর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, যুদ্ধবিরতি কেবলমাত্র ইসরাইলের জন্য সাময়িক প্রস্তুতির সময়। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং যুদ্ধমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ প্রকাশ্যেই ইরানকে হুমকি দিয়ে চলেছেন, যা মূলত মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি ও ইরানি জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা মাত্র।

তবে বাস্তবে, এসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বরং ইসরাইলি আগ্রাসন ইরানিদের আরও ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছে। যুদ্ধবিরতির মাঝেও ইসরাইল যদি নতুন করে আক্রমণ চালাতে চায়, তবে তাদের তিনটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে:

১. বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক জনমত ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে

ইরানের ওপর নতুন করে ইসরাইলি হামলা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ নয়, আন্তর্জাতিক বেসামরিক সমাজ ও রাজনৈতিক আন্দোলনও এর বিরুদ্ধে সরব হবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে ইসরাইলের আগ্রাসী চরিত্র এখন আগের চেয়ে অনেক স্পষ্ট। ফলে ইসরাইলকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়া এখন যে কোনো দেশের জন্য রাজনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াবে।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও ইসরাইলের আরেকটি আগ্রাসনে প্রকাশ্য সমর্থন দেওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। নতুন করে ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালালে ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে "উসকানিমূলক ও বিপজ্জনক রাষ্ট্র" হিসেবে দেখা হবে—যা ইসরাইলের জন্য কৌশলগতভাবে আত্মঘাতী।

২. ইরান আর কোনো চমকপ্রদ হামলার জন্য অপ্রস্তুত নয়

সাম্প্রতিক সংঘাতে ইসরাইল এমন সময় ইরানের ওপর হামলা চালায়, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা চলছিল। এই হামলাকে অনেকেই কাপুরুষোচিত ও সুযোগসন্ধানী বলে আখ্যা দিয়েছেন।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ইরান পুরোপুরি সতর্ক এবং তার সশস্ত্র বাহিনী যে কোনো হামলার দ্রুত ও কঠিন জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। বিশ্লেষকদের মতে, ১২ দিনের যুদ্ধে ইরান তার পুরনো প্রযুক্তিই ব্যবহার করেছে, তবুও তা ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে।

ইসরাইল জানে, ইরান এখনো তার পূর্ণ সামরিক সক্ষমতা ব্যবহার করেনি। তাই নতুন করে যুদ্ধ শুরু করলে এর প্রতিক্রিয়া হবে আরও ভয়ঙ্কর এটি ইসরাইলের কৌশলগত ভাবনাতেই পরিবর্তন আনছে।

৩. ইসরাইলি জনগণ নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতি নিয়ে সন্দিহান

ইসরাইলের ভেতরেই এখন অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন, নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির পেছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য জাতীয় নিরাপত্তা নয়, বরং নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা রক্ষা করা।

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অর্থ, ইসরাইলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। এই উপলব্ধি এখন ইসরাইলি জনমনে প্রবলভাবে জায়গা করে নিচ্ছে।

সংক্ষেপে, ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধ শুরু করার আগে ইসরাইলকে বহুমুখী রাজনৈতিক, সামরিক এবং জনমত-ভিত্তিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিতে হবে। আর সেই কারণেই যুদ্ধবিরতির পরও ইসরাইলের পক্ষে আরেক দফা আগ্রাসন চালানো এখন অতটা সহজ নয়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha