হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের সাম্প্রতিক ইতিহাসের স্মৃতির পাতায় আজ এমন একজন বিশিষ্ট ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের স্মরণে নির্ধারিত দিন, যিনি স্বদেশ ও স্বাধীনতার জন্য নিজ জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তিনি হলেন—আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আবুল কাসেম কাশানি।
এই মহান আলেম ও সংগ্রামী রাজনীতিক ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি জনগণের হৃদয়ে এমন প্রভাব সৃষ্টি করেছিলেন যা আর কেউ পারেননি। মরহুম আয়াতুল্লাহ কাশানি এমন এক সময় সামনে আসেন, যখন রেজা শাহের শাসনামলে বিরোধী কণ্ঠ নিঃশব্দ করে দেওয়া হচ্ছিল। সেই কঠিন সময়ে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে স্বৈরাচার ও বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী একাধিকবার তাঁর বীরত্ব ও দূরদৃষ্টির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি ইমাম খোমেনির (রহ.) থেকে নিজ কানে শুনেছি, তিনি বলেছিলেন—‘আমি কাশানির মতো সাহসী আর কাউকে দেখিনি।’”
তেল শিল্প জাতীয়করণের নেপথ্য নায়ক
জাতীয় তেল শিল্প জাতীয়করণ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন কাশানি। আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, এই আন্দোলনের জনসমর্থন আদায়ে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। সাধারণ মানুষ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মোসাদ্দেককে হয়তো ভালোভাবে চিনতেন না, তবে কাশানিকে চিনতেন, ভালোবাসতেন এবং বিশ্বাস করতেন। তাঁরই নেতৃত্বে জনগণ পথে নেমেছিল, আন্দোলন হয়েছিল সফল।
রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সংগঠনের নেতা
আয়াতুল্লাহ কাশানির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মোসাদ্দেককে প্রধানমন্ত্রী বানানোর পেছনে। যদিও তৎকালীন শাহ (মোহাম্মদ রেজা) তা চাচ্ছিলেন না, তবু কাশানির নেতৃত্বে তৈরি হওয়া গণচাপের মুখে তাকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে হয়েছিল।
পরবর্তীতে, যখন মোসাদ্দেককে সরিয়ে কাওমুল সুলতানাকে প্রধানমন্ত্রিত্বে বসানো হয়, তখনও কাশানিই ছিলেন মূল প্রতিরোধের নেতা। তাঁর আহ্বানে লাখো মানুষ রাস্তায় নামে, ফলে কাওম মাত্র তিনদিনেই পদত্যাগে বাধ্য হন।
কাশানির বিচ্ছিন্নতা ও ২৮ মুর্দদের শিক্ষা
কিন্তু রাজনৈতিক বিভাজনের ফলে যখন কাশানিকে আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়, তখনই আসে ২৮ মুর্দদের (১৯৫৩ সালের ১৯ আগস্ট) মার্কিন-ইংরেজ ষড়যন্ত্রে পরিচালিত অভ্যুত্থান। জনগণের অনুপস্থিতিতে এই অভ্যুত্থান সফল হয় এবং ইরান ফের যায় স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে।
খামেনেয়ীর মতে, এই ঘটনা আমাদের শেখায়, রাজনীতি থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করার পরিণতি ভয়াবহ। শত্রুরা বুঝেছিল, ধর্মীয় নেতৃত্বই ছিল প্রকৃত শক্তি—তাই তারা কাশানিকে আলাদা করেছিল এবং সফলও হয়েছিল।
আয়াতুল্লাহ কাশানি ছিলেন সেই বিরল নেতা যিনি মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিশ্বাস ও সাহসের সঙ্গে। তাঁর জীবন ও সংগ্রাম আজও ইতিহাসের পাতায় প্রেরণার উৎস। তিনি ছিলেন চুম্বকের মতো—হৃদয়কে আকর্ষণ করতেন, আন্দোলনকে প্রাণ দিতেন।
আপনার কমেন্ট