রবিবার ২৭ জুলাই ২০২৫ - ১৪:১৪
বর্তমান ফিলিস্তিন ও ১৪০০ বছর আগের কারবালা: অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চিরন্তন বার্তা

কারবালা আমাদের শিখিয়েছে, অন্যায় ও স্বৈরাচারের মুখে মাথা নত করা নয়, বরং সত্য ও ন্যায়ের পথে আত্মত্যাগের শপথ নেওয়া।

মিনহাজউদ্দিন মন্ডল, ইসলামিক চিন্তাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক

প্রশ্ন: সালামুন আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মিনহাজ ভাই, আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে এই গভীর বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য। আজ আমরা অনুসন্ধান করব—কারবালার অগ্নিপরীক্ষা এবং বর্তমান ফিলিস্তিন সংকটের মধ্যে কী মিল রয়েছে, এবং সেই মিল আমাদের কী শিক্ষা দেয়। প্রথমেই জানতে চাই, আপনি কি মনে করেন—কারবালার ঘটনা ও আজকের ফিলিস্তিন পরিস্থিতির মধ্যে কোনও ঐতিহাসিক বা নৈতিক মিল আছে?

মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: ধন্যবাদ মজিদুল ইসলাম শাহ ভাই। হ্যাঁ, মিল আছে, এবং তা কেবল ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় নয়, বরং নৈতিক শক্তির গভীরে। কারবালা আমাদের শিখিয়েছে, অন্যায় ও স্বৈরাচারের মুখে মাথা নত করা নয়, বরং সত্য ও ন্যায়ের পথে আত্মত্যাগের শপথ নেওয়া। আজ ফিলিস্তিনের মাটিতে আমরা সেই একই চেতনা দেখি—এক নিরস্ত্র জাতি, যাদের শিশুদের হাতেও সাহসের মশাল, যারা আধুনিক দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে নিজের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য রক্ত দিয়ে লিখছে এক নতুন ইতিহাস। যেমন ইমাম হুসাইন (আ.) ঘোষণা করেছিলেন—“অপমানিত জীবনের চেয়ে সম্মানজনক মৃত্যু শ্রেয়।”

প্রশ্ন: এ ধরনের তুলনা কি কেবল আবেগের ফল, নাকি এর পেছনে দৃঢ় রাজনৈতিক ও নৈতিক ভিত্তি রয়েছে?

মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: এটি কোনো আবেগের খেলা নয়। কারবালার প্রতিরোধ একটি নৈতিক বিপ্লব—যেখানে সত্য রক্ষা করতে রক্ত উৎসর্গ করা হয়েছে। একইভাবে, ফিলিস্তিন আজকের পৃথিবীতে সেই নৈতিক প্রতিবাদের জ্বলন্ত প্রতীক। শক্তিধররা ইতিহাসের অন্ধকার দিক বেছে নিলেও, নিরস্ত্র মানুষরা আজও ন্যায়ের শিখা বহন করছে। এই তুলনা এক জাগ্রত বিবেকের আহ্বান, যা আমাদের সময়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্ররোচিত করে।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, মুসলিম বিশ্ব আজ কারবালার শিক্ষা অনুযায়ী ফিলিস্তিন ইস্যুতে যথাযথ ভূমিকা রাখছে?

মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্র আজ নীরব দর্শক, কিংবা কূটনৈতিক জটিলতায় বন্দী। কারবালা আমাদের শিখিয়েছিল—সত্যের পাশে দাঁড়ানো মানে নিজেকে প্রস্তুত রাখা যেকোনো মূল্য দিতে। আজকের বিশ্ব সেই মূল্য দেওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলেছে। তবে সাধারণ মানুষের অন্তরে যে চেতনা জেগে উঠছে, তা আমাদের আশার আলো দেখায়।

প্রশ্ন: এই পরিস্থিতিতে কারবালার বার্তা কীভাবে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে?

মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: কারবালার শিক্ষা আমাদের শেখায়—অন্যায়ের মুখে নীরব থাকা পাপ, এবং প্রতিবাদ করা ঈমানের চিহ্ন। এটি মানুষকে ভয়মুক্ত করে, আত্মমর্যাদার চেতনা জাগায়। ফিলিস্তিনের শিশুদের চোখেও আমরা সেই হুসাইনি দৃঢ়তা দেখি—যেখানে মৃত্যু তাদের ভীত করে না, কারণ তারা জানে অধিকারকে লুট হতে দেওয়া মানেই আত্মসমর্পণ।

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন—আপনার মতে, কীভাবে কারবালার আদর্শকে সোশ্যাল মিডিয়া ও শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে?

মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: কারবালাকে শুধু শোকের স্মৃতি হিসেবে নয়, বরং ন্যায়ের প্রেরণার শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মানবিক মূল্যবোধের আলোকে তথ্যনির্ভর ও আবেগময় কনটেন্ট তৈরি করা দরকার। শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষা, আত্মত্যাগ, ন্যায়বোধ ও প্রতিবাদের দৃষ্টান্ত হিসেবে কারবালার কাহিনী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই বার্তাকে আমরা যদি সঠিকভাবে প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে পারি, তবে তারা শুধু ইতিহাস জানবে না, বরং সত্যের জন্য বাঁচার শক্তি পাবে।

প্রশ্ন: আপনার অমূল্য মতামতের জন্য ধন্যবাদ মিনহাজ ভাই। আশা করি পাঠকেরা এই আলোচনায় নতুন উপলব্ধি খুঁজে পাবেন।

মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: আপনাকেও ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের অন্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস এবং সত্যের পথে অটল থাকার শক্তি দান করুন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মজিদুল ইসলাম শাহ

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha