সোমবার ৪ আগস্ট ২০২৫ - ০৯:৪১
আরবাঈন: ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার বৈশ্বিক সুযোগ

ইরাকের পবিত্র কারবালায় প্রতিবছর আয়োজিত আরবাঈন তীর্থযাত্রায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ একত্রিত হন। এই বিশাল জনসমাগম কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ইসলামী মূল্যবোধ ও আত্মিক জীবনের পুনর্জাগরণের এক অনন্য সুযোগ—মন্তব্য করেছেন ইরানের একজন বিশিষ্ট ইসলামি গবেষক।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের কুরআন ও সাংস্কৃতিক শিক্ষাবিষয়ক গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হুজ্জাতুল ইসলাম ঈসা ঈসাজাদেহ এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
“বিশ্বের আর কোনো আয়োজন নেই, যেখানে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ ১,৪০০ বছর আগে শাহাদাতবরণকারী একজন ব্যক্তিত্বের প্রতি এত গভীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্য প্রকাশ করে।”

তিনি বলেন, “এই আন্দোলন কোনো তাৎক্ষণিক প্রচারণার ফল নয়। বরং এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগ থেকে শুরু করে যুগের পর যুগ ধরে শহিদ হওয়া যুবক, আলেম ও নেতাদের আত্মত্যাগের ফল। তারা তাঁদের জীবন দিয়ে এই ঈশ্বরপ্রদত্ত বাস্তবতাকে জীবিত রেখেছেন।”

ইমাম হুসেইন (আ.), তাঁর পরিবার ও সঙ্গীরা ইসলামের সত্যিকার শিক্ষা ও আহলে বাইতের (আ.) স্মৃতিকে জীবিত রাখার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। “আজ যখন আরবাঈন এক বৈশ্বিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, তখন আমাদের ভাবতে হবে—এটি কীভাবে সংরক্ষণ ও বিকশিত করা যায়।”

ঈসাজাদেহ বলেন, আরবাঈন কেবল শোক ও স্মৃতিচারণের অনুষ্ঠান নয়, বরং তা একটি কর্মমুখর আদর্শিক আন্দোলন, যা কুরআনভিত্তিক জীবনযাপনের পথ দেখায়।

তিনি বলেন, “আমরা তীর্থযাত্রীদের মধ্যে যেসব গুণাবলি লক্ষ্য করেছি তা হলো—আল্লাহর স্মরণ, আহলে বাইতের (আ.) প্রতি ভালোবাসা, তাকওয়া, ধৈর্য, ক্ষমা, আত্মত্যাগ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহানুভূতি, ঐক্য এবং আতিথেয়তা। এই গুণগুলো ইসলামী জীবনধারার ভিত্তি। এগুলোকে সাময়িক আবেগ থেকে স্থায়ী চরিত্রে রূপান্তর করতে হবে।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই আদর্শগুলোকে টেকসই রূপ দিতে হলে সমাজ, নেতৃত্ব ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত দায়িত্ব রয়েছে।

আরবাঈনের আধ্যাত্মিক পরিবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই যাত্রায় মানুষ দোয়া, তেলাওয়াত, ও আহলে বাইতের (আ.) স্মরণে কবিতা ও মারসিয়া পাঠে অংশ নেন, যা তাঁদের গভীর বিশ্বাস ও আত্মিক সংযোগের বহিঃপ্রকাশ।”

তিনি আরও বলেন, “শুধু শিয়া নয়, বরং সুন্নি আলেম, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই শোকানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন—যা ইমাম হুসেইনের (আ.) বার্তার সর্বজনীনতা ও মানবিকতা প্রমাণ করে। এটি ইসলামী বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।”

সাক্ষাৎকারের শেষে ঈসাজাদেহ সামাজিক ও ডিজিটাল মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধ প্রচারে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। “আজকের যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো বিশাল ক্ষমতা রাখে। আমরা যদি এই মাধ্যমগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করি, তাহলে বিরূপ ও বিকৃত বর্ণনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা কঠিন হবে। বিশেষ করে আরবাঈনের মতো সময়গুলোতে এই দায়িত্ব আমাদের সবার।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha