বুধবার ৬ আগস্ট ২০২৫ - ০৯:২১
ইমামত ব্যবস্থা: আল্লাহ প্রদত্ত অবিচ্ছিন্ন ও চিরস্থায়ী শাসনব্যবস্থা

ইমামতি ব্যবস্থা হলো একটি আল্লাহ প্রদত্ত (نظام إلهي) শাসনব্যবস্থা, যা কখনোই বিচ্ছিন্ন হয়নি এবং যার মধ্যে কোনো কোনো সময়ের বিরতি (انقطاع) নেই। মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা গঠিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আজও রয়েছে; এবং যতদিন এই দুনিয়া থাকবে, ততদিন এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইমামতের ধারা (امامت نظام) কি গায়বাতে ছুগরা শেষ হওয়ার পর গায়বাতে কুবরা শুরুতে শেষ হয়ে গেছে এবং হযরত মাহদী (আ.ফা.) এর জহুরের পর আবার নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হবে নাকি 'ইমামতের ধারাঅব্যাহত আছে?

আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেন,
لَا تَخْلُو الْأَرْضُ مِنْ قائِم لِلهِ بِحُجَّهٍ؛ إِمَّا ظَاهِراً مَشْهُوراً، أَوْ خَائِفاً مَغْمُوراً، لِئَلَّا تَبْطُلَ حُجَجُ اللهِ وَبَیِّناتُهُ
অর্থাৎ, “পৃথিবী কখনোই আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হুজ্জাত (প্রমাণ ও প্রতিনিধি)হীন থাকবে না; সে প্রকাশ্যে সুপরিচিত অথবা গোপনে থাকবে, যাতে আল্লাহর প্রমাণ ও বর্ণনা অকার্যকর না হয়।” [নাহজুল বালাগা, হিকমত ১৪৭]

প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য যে, তারা “نظام الإمامة” চিনবে এবং এতে বিশ্বাস স্থাপন করবে। প্রত্যেক যুগে ও সময়ে মানুষ শুধুমাত্র এই শাসনব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য করবে।

মানুষকে অবশ্যই নিজের জীবন ও সকল কর্মকাণ্ডে নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন শাসনব্যবস্থার অনুসারী। অর্থাৎ তারা আল্লাহর শাসন মেনে চলে নাকি অন্য কোনো অবৈধ শাসকের অধীনে।

দুঃখজনকভাবে অধিকাংশ মুসলিম এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি ঠিকমতো উপলব্ধি করতে পারেনি এবং “ولاية” এর অর্থ ও এর অন্তর্নিহিত আনুগত্যের গুরুত্ব থেকে অবহেলা করেছে। অনেক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা শুধুমাত্র ইবাদত ও নৈতিকতা মেনে চলাকে যথেষ্ট মনে করে।

শিয়া মতবাদ অনুসারে, ইমামতি ব্যবস্থা চিরস্থায়ী ও অবিচ্ছিন্ন; সর্বদা এবং সব পরিস্থিতিতে শাসনব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য একটি মৌলিক বাধ্যবাধকতা।

আল্লাহই একমাত্র শাসক:
"إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلّٰهِ."
শুধুমাত্র আল্লাহকেই ইবাদত ও আনুগত্য করা উচিত:
"أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِیَّاهُ."
এই হলো স্থায়ী ও সঠিক ধর্ম:
"ذَلِکَ الدِّینُ الْقَیِّمُ."
[সূরা ইউসুফ, আয়াত ৪০]

ইমামতি ব্যবস্থার অর্থ হলো আল্লাহর শাসনের প্রতি আনুগত্য ও অন্য কোনো শাসনের প্রতি বিশ্বাস না রাখা।

সুতরাং, ইমামরা সরাসরি শাসন না করলেও কিংবা অনুপস্থিত থাকলেও, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য শুধুমাত্র এই ইমামতি ব্যবস্থার আনুগত্য করা।

এই বিশ্বাস হলো আল্লাহর একত্ববাদ ও সঠিক শাসনের সঙ্গে গভীর সম্পর্কিত। নবী করীম (সা.) বলেছেন,
مَنْ مَاتَ وَلَمْ یَعْرِفْ إِمَامَ زَمَانِهِ مَاتَ میْتَهً جَاهِلِیَّهً.
অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি তার যুগের ইমামকে চিনলো না, সে জাহেলিয়্যতের মৃত্যুমরণ করেছে।” [বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৩২, পৃষ্ঠা ৩২১]

ইমাম জাফর সাদিক (عليه السلام) বলেন,
لَا دِینَ لِمَنْ دَانَ اللهَ بِوِلایَهِ إِمَامٍ جَائِرٍ لَیْسَ مِنَ اللهِ."
অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য একটি অন্যায় ও অবৈধ ইমামের মাধ্যমে করে, তার কোনো ধর্ম নেই।” [উসুলে কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৬৫]

এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হয় যে ইমামতি ব্যবস্থা কোনো নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ সময়ের জন্য নয়, বরং চিরস্থায়ী এবং অবিচ্ছিন্ন। এটি কখনো বন্ধ হয়নি এবং ভবিষ্যতেও বন্ধ হবে না।

এই আলোচনা চলমান...

গ্রন্থসূত্র: নেগীনে অফারিনেশ গ্রন্থ থেকে সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত রূপে সংকলিত।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha