সোমবার ৪ আগস্ট ২০২৫ - ২৩:২৩
ঐতিহাসিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ‘ইয়াজিদ’ 

ঐতিহাসিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ‘ইয়াজিদ’ 

 ইবনে জওজির তীব্র জবাব নতুন প্রকাশে

বৈরুতের দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যা সম্প্রতি পুনঃপ্রকাশ করেছে বিখ্যাত মধ্যযুগীয় আলেম ইবনে জওজির (মৃত্যু ৫৯৭ হিজরি) লেখা ঐতিহাসিক গ্রন্থ الرد علی المتعصب العنید المانع من ذم یزید — বাংলায় যার অর্থ: “যারা ইয়াজিদকে নিন্দা করা নিষেধ করে—তাদের প্রতি জবাব”।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রন্থটিতে ইবনে জওজি তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন তাদের, যারা ইয়াজিদ ইবনে মাওয়িয়াকে সমালোচনা বা অভিশাপ দেওয়া থেকে বিরত রাখে। লেখকের মতে, ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনায় ইয়াজিদের ভূমিকা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, বরং অভিশাপযোগ্য।

ইয়াজিদের কর্মকাণ্ডের কঠোর নিন্দা
বইয়ের ৬৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ইবনে জওজি লিখেছেন

“আশ্চর্যের কিছু নেই যে উমর ইবনে সাদ ও উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ এ কাজ করেছে; কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো ইয়াজিদের বিশ্বাসঘাতকতা। সে কাঠের ছড়ি দিয়ে ইমাম হুসাইনের দাঁতে আঘাত করেছিল এবং তাঁর মাথা মদিনায় ফেরত পাঠিয়েছিল, যখন তা পরিবর্তিত গন্ধে ভরে গিয়েছিল—সবই তার নিকৃষ্ট উদ্দেশ্য পূরণের জন্য।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন—যদি নিহতরা সত্যিই ‘খারিজি’ও হতো, তবুও কি শরিয়তে এভাবে অসম্মান করা বৈধ? শরিয়তের বিধান অনুযায়ী এমনকি শত্রুকেও জানাজা ও দাফনের মর্যাদা দেওয়া হয়।

অভিশাপের যোগ্য কাজ ইবনে জওজি আরও বলেন,

“যে ব্যক্তি এই ধরনের কাজ করেছে বা এর সমর্থন করে, সে কেবল অভিশাপেরই যোগ্য। যদি ইয়াজিদ হুসাইনের মাথাকে সম্মান করত, জানাজা পড়াত, এবং ছড়ি দিয়ে আঘাত না করত—তাহলে তার কি ক্ষতি হতো? উদ্দেশ্য তো পূরণ হয়েই গিয়েছিল।”

তিনি অভিযোগ করেন, ইয়াজিদের মধ্যে ছিল বদর, খাইবার ও হুনাইনের পুরনো প্রতিশোধস্পৃহা, যা জাহেলি যুগের বিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ।

ঐতিহাসিক তাৎপর্য
ইবনে জওজির এই গ্রন্থ মধ্যযুগীয় ইসলামী ঐতিহাসিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে ইয়াজিদের বিষয়ে আহলে সুন্নাতের মধ্যেও ঐক্য ছিল না। বরং একাংশ সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র অবস্থান নিয়েছিলেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha