সোমবার ১১ আগস্ট ২০২৫ - ১০:১৬
শিশুদের মিথ্যার বলার প্রধান তিন কারণ— মনোযোগ, ভয় ও অতিরিক্ত মমতা

মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন—শৈশবে গড়ে ওঠা মিথ্যা বলার প্রবণতা পরিণত বয়সে ব্যক্তিত্ব ও সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মিথ্যা—এ শব্দটির সঙ্গে পরিচয় আমাদের সবারই আছে। কিন্তু কেন মানুষ মিথ্যা বলে? মনোবিজ্ঞানী ও নৈতিক শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, মানুষের মিথ্যা বলার পেছনে তিনটি প্রধান কারণ বা “শিকড়” কাজ করে—মনোযোগ আকর্ষণ, ভয় এবং অতিরিক্ত মমতা।

১. মনোযোগ আকর্ষণ ও নিজেকে বড় করে দেখানো
সাধারণত দেখা যায় যখন কেউ নিজের ক্ষমতা বা সাফল্যের ঘাটতি পূরণে অতিরঞ্জিত বা মনগড়া গল্প বলে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ দাবি করতে পারে যে, তিনি পথে বিপদের মুখে পড়া কাউকে উদ্ধার করেছেন—যদিও বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি। উদ্দেশ্য একটাই: অন্যদের চোখে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা।

২. ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা
দ্বিতীয় কারণ হলো ভয়। সত্য বলার পরিণতি—যেমন তিরস্কার, শাস্তি বা সামাজিক অপমান—এড়াতে মানুষ মিথ্যার আশ্রয় নেয়। শিশুদের মধ্যে এটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়; পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলের কথা গোপন করা বা ভাঙা জিনিসের দোষ স্বীকার না করা এর উদাহরণ।

৩. অতিরিক্ত ভালোবাসা বা সহানুভূতি
তৃতীয় এবং তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত কারণ হলো অতিরিক্ত মমতা বা সহানুভূতি। এখানে ব্যক্তি প্রিয়জনের দুঃখ এড়াতে সত্য গোপন করে। যেমন, একজন শিক্ষার্থী বাবা-মায়ের মন খারাপ হবে ভেবে খারাপ ফলাফল না জানানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে—এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য শাস্তি এড়ানো নয়, বরং প্রিয়জনের মনে কষ্ট না দেয়ার চেষ্টা।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই তিন কারণই শিশুদের চরিত্র গঠনে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে। শৈশবে গড়ে ওঠা মিথ্যা বলার অভ্যাস যদি সময়মতো সংশোধন না হয়, তবে তা পরিণত বয়সে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট তৈরি করতে পারে।

সমাধান কী?
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুদের প্রতি সহনশীল ও খোলামেলা আচরণ, তাদের অর্জনকে মূল্যায়ন, এবং সত্য বলাকে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে মিথ্যার প্রবণতা কমানো সম্ভব। মিথ্যা ধরা পড়লে কঠোর শাস্তির বদলে বোঝাপড়া, খোলামেলা ও আন্তরিক আলোচনা কার্যকর হতে পারে।

পরিসমাপ্তি, সত্য বলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা কেবল ব্যক্তির জন্য নয়, সমাজের জন্যও কল্যাণকর। কারণ বিশ্বাসের ভিত্তিতেই টিকে থাকে মানবসম্পর্ক—এবং সেই ভিত্তিকে রক্ষা করার প্রথম শর্ত হলো সত্যবাদিতা।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha