মঙ্গলবার ১২ আগস্ট ২০২৫ - ১০:২১
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কারামতে সাহিবে রিয়াজ যেভাবে ওহাবিদের হাত থেকে রক্ষা পান

আয়াতুল্লাহ আল উজমা শুবেইরি জানজানি ওহাবিদের কারবালা আক্রমণের ভয়াবহতা এবং সেই সময় “সাহিবে রিয়াজ” ও তাঁর সন্তান ওহাবির জীবনরক্ষায় ইমাম হুসাইন (আ.)-এর অলৌকিক ভূমিকা তুলে ধরেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হিজরি ১২১৬ (ইংরেজি ১৯৯১-১৯৯২) সালে ওহাবিরা কারবালায় ঢুকে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। তারা নাজাফেও আক্রমণ চালাতে চেয়েছিল, কিন্তু নাজাফবাসীদের পূর্ব প্রস্তুতির কারণে ব্যর্থ হয়। কারবালা যেহেতু প্রস্তুত ছিল না, ফলে আকস্মিক হামলায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সেই সময়ে কারবালার প্রধান ধর্মীয় নেতার পদে ছিলেন “সাহিবে রিয়াজ”। ওহাবিরা তাঁর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত নিরাপদে সরে গেলেও সাহিবে রিয়াজ একটি দুধের শিশুর সঙ্গে এক প্রকাণ্ড ঝুড়ির নিচে লুকিয়ে পড়েন। ওহাবিরা ঘরজুড়ে খুঁজলেও তাঁকে খুঁজে পায়নি। আশ্চর্যের বিষয়, ওই শিশুটি পুরো সময় একবারও কাঁদেনি, যা ছিল একটি স্পষ্ট অলৌকিক ঘটনা।

পুরো একদিন ধরে কারবালায় হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর ওহাবিরা নাজাফের উদ্দেশ্যে শহর ত্যাগ করে।

সেই সময় জাঞ্জানের প্রভাবশালী “আমিরজা আবুল কাসেম”-এর পরিবার ছিল প্রভাবশালী ও নেতৃত্বস্থানীয় এবং নাজাফে বসবাসকারী আকা সাইয়্যেদ কাজিম, যিনি সাহিবে রিয়াজের শিষ্য ছিলেন, খবর পেয়ে দ্রুত সাহিবে রিয়াজ ও শিশুটিকে উদ্ধার করতে কারবালায় যান। যথা দ্রুত সময়ে তাঁরা ঝুড়ির নিচ থেকে তাঁদের উদ্ধার করেন; দেরি হলে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।

উদ্ধারের পর তারা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পবিত্র রওজা শরীফে গমন করেন। সেখানে গিয়ে দেখেন, ওহাবিরা পবিত্র জিয়ারতের জালি খুলে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে এবং সেই কাঠ দিয়ে কফি বানিয়েছে — যদিও তারা কফিকে হারাম মনে করত। এছাড়া পবিত্র কবরের এক কোণে ফাটল দেখা যায়।

সাইয়্যেদ কাজিম বলেন, “আমার মনে হয় এখানে পবিত্র দেহের একটি অংশ রয়েছে।” সাহিবে রিয়াজও একমত হন। এরপর সাইয়্যেদ কাজিম তাঁর কাছে থাকা সাদা রুমালে পবিত্র মাটি তুলে নেন; রুমালটি লাল হয়ে যায়। তিনি কিছু মাটি নিজের জন্য এবং কিছু সাহিবে রিয়াজের জন্য রেখে দেন।

পরবর্তীতে সাইয়্যেদ কাজিম ইন্তেকাল করলে তাঁর ভাই মীর করিম, যিনি সরলমনা ছিলেন, তাঁর অংশের মাটি দিয়ে সিজদার তসবিহ বানিয়ে তা অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দেন।

আমিরজা আবুল কাসেম, যিনি তখন ১৩-১৪ বছর বয়সী ছিলেন, খবর পেয়ে সর্বত্র খোঁজাখুঁজি করেন এবং অবশেষে একটি মোহর খুঁজে পান এবং তা দিয়ে তসবিহ তৈরী করেন। সেই তসবিহ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের পরিবারে সংরক্ষিত ছিল। তিনি তাঁর সন্তানদের প্রতি বার বার অনুরোধ করতেন, “এই পবিত্র মাটির মূল্য বুঝে চলো; এর এমন গুণ রয়েছে যা সাধারণ মাটিতে পাওয়া যায় না।”

সূত্র: জাররেইয়ে আয্ দারিয়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৩৩

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha