রবিবার ৩১ আগস্ট ২০২৫ - ১৮:০৫
কিশোরের রাগ ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি— কীভাবে সামলাবেন?

কিশোর বয়সে মানসিক অবস্থার অস্থিরতার কারণে অনেক সময় তারা রাগী ও আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাবা-মাকে ধৈর্যশীল ও বোঝাপড়ার মনোভাব নিতে হবে, সন্তানকে লক্ষ্যভিত্তিক কার্যক্রমে ব্যস্ত রাখতে হবে এবং একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভার্চুয়াল দুনিয়ার ব্যবহার সীমিত করতে হবে। এর মাধ্যমে কিশোর ধীরে ধীরে শান্ত হবে, আত্মবিশ্বাস অর্জন করবে এবং তার আক্রমণাত্মক আচরণ কমে আসবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পরিবার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন সাইয়্যেদ আলীরেজা তিরাশিউন কিশোরদের “প্রকাশ্য রাগ ও আত্মবিশ্বাসহীনতা” প্রসঙ্গে বিস্তারিত প্রশ্নোত্তর উপস্থাপন করেছেন।

প্রশ্ন: আমি কীভাবে আমার কিশোর সন্তানকে সাহায্য করতে পারি, যাতে সে আচরণের পরিবর্তনজনিত রাগ ও আত্মবিশ্বাসহীনতা সামলাতে পারে?

উত্তর: কিশোর বয়স হলো এমন এক সময়, যা সাধারণত মোটেই “স্থিতিশীল মেজাজ” দ্বারা চিহ্নিত ও পরিচালিত নয়। তাই তাদের পক্ষে দ্রুত রেগে যাওয়া ও ধৈর্য হারানো খুব স্বাভাবিক।

প্রায়শই দেখা যায়, একজন কিশোর একদিনেই বিভিন্ন ধরণের মানসিক অবস্থা ও আচরণ প্রদর্শন করে। অর্থাৎ তার আচরণে স্থিরতা থাকে না। এ অবস্থা ভালো না খারাপ, তা মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলাদা আলোচনা দাবি করে।

তবে যে কিশোর অস্বাভাবিকভাবে খিটখিটে মেজাজ ও রাগ প্রদর্শন করছে, তাকে সামলানোর জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অভিভাবকদের মাথায় রাখা জরুর:

প্রথমত: কিশোর যেন “ছাইয়ের নিচে লুকানো আগুন”— সামান্য একটি বাতাসও তাকে প্রজ্বলিত করতে পারে। তাই বাবা-মাকে সর্বোচ্চ সাবধানতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তার সাথে আচরণ করতে হবে।
অতিরিক্ত আদেশ-নিষেধ, ঘন ঘন সমালোচনা কিংবা অযৌক্তিক প্রত্যাশা—এসব কিশোরের রাগ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বরং তাদের সঙ্গে শান্ত, বোঝাপড়ার মনোভাব এবং ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার জরুরি।

দ্বিতীয়ত: রাগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো “বেকারত্ব ও লক্ষ্যহীনতা”— তাই কিশোরকে মানসিক ও শারীরিক উভয় ধরনের কার্যকলাপে সম্পৃক্ত করতে হবে। এতে সে ব্যস্ত থাকবে, অস্থিরতা কমবে এবং ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে আসবে।

তৃতীয়ত: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ— যেসব কিশোর অতিরিক্ত সময় মোবাইল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটায়, তারা শুধু মানসিক প্রশান্তিই হারায় না, বরং দ্রুত রেগে যায় ও অস্থির আচরণ করে।

উদাহরণস্বরূপ—১৩ বা ১৪ বছরের কিশোরদের জন্য দিনে সর্বোচ্চ ১০০ মিনিট পর্যন্ত ডিজিটাল মাধ্যমে সময় কাটানো অনুমোদিত হওয়া উচিত। এ নিয়ন্ত্রণ বাবা-মাকেই নিশ্চিত করতে হবে।

একজন সচেতন মা যদি সন্তানকে মোবাইল ব্যবহারে যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পারেন, তবে সে অনেক সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু যদি কিশোরকে অবারিতভাবে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হয়, তবে তা তার জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

অতএব, যারা সন্তানদের জন্য একটি সুস্থ ও সফল ভবিষ্যৎ চান, তাদের উচিত মিডিয়া ব্যবহারের পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা—যত কম, তত ভালো।

একটি বাস্তব উদাহরণ
সম্প্রতি পড়া একটি বইতে উল্লেখ ছিল—ইউটিউবের প্রতিষ্ঠাতা নিজ কন্যাকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে দেননি।

একইভাবে আরও অনেক প্রযুক্তি উদ্যোক্তা তাদের সন্তানদের ১৬ বা ১৮ বছর বয়সের আগে এ ধরণের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে দেননি।

কিন্তু আজকাল দেখা যাচ্ছে, ছয়-সাত বছরের শিশুরাও ইনস্টাগ্রামে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুলছে, ভিডিও বানিয়ে প্রকাশ করছে! এটি কোনোভাবেই সচেতনতার লক্ষণ নয়, বরং অভিভাবকদের শিক্ষাগত ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।

সতর্কবার্তা
বাস্তবতা হলো, যদি ১২ বা ১৩ বছর বয়সেই সন্তানকে মোবাইল ফোন দেওয়া হয়, তবে তা অভিভাবকদের অপর্যাপ্ত বোধশক্তি ও আধুনিক বিপদের প্রতি অজ্ঞতাকেই প্রকাশ করে।

অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ১৩-১৪ বছর বয়সী প্রায় সব কিশোর, যাদের হাতে ফোন থাকে, তারা যৌন-সংক্রান্ত ঝুঁকিতে পড়েছে। এই তথ্য উচ্চ মাত্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

তাই এ বাস্তবতাকে স্পষ্টভাবে পরিবারগুলোকে জানানো জরুরি। যেমন সিগারেটের প্যাকেটে ক্যান্সারের সতর্কবার্তা লেখা থাকে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিপদ সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ও বাস্তব তথ্য অভিভাবকদের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা অধিকাংশ সময় এ বিষয়ে শুধু চমকপ্রদ প্রচার বা উপরিভাগী দৃষ্টিভঙ্গি দেখি, অথচ প্রকৃত সতর্কতা ও সঠিক তথ্যপ্রবাহই এখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha