বুধবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ২১:০৩
সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকটে নবীর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

হাওজা নিউজ এজেন্সিকে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাওলানা সৈয়দ ইব্রাহিম খালিল রিজভী

বিশেষ সাক্ষাৎকার

সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ 

নবী করিম হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.)-এর শিক্ষা পরিপূর্ণ, সমগ্র মানবজাতির জন্য সর্বজনীন এবং চিরন্তন। আমরা লক্ষ্য করি, এই মহান শিক্ষার বাস্তব প্রকাশ ঘটেছে নবীর আহলে বাইত আতহার (আ.)-এর জীবন ও কর্মের মাধ্যমে। তাঁদের আদর্শিক জীবনযাপন, ত্যাগ, ধৈর্য, ন্যায়পরায়ণতা এবং আল্লাহর প্রতি নিবেদন নবীর শিক্ষা ও দাওয়াতকে জীবন্ত ও সুস্পষ্ট করে তুলেছে।

অতএব, পয়গম্বরে ইসলামের আহলে বাইত (আ.)-কে যথাযথ মূল্যায়ন ও সম্মান করা শুধু একটি ধর্মীয় কর্তব্যই নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব রক্ষার জন্যও অপরিহার্য। আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা সুন্নি ও শিয়া উভয় সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের অংশ, আর এই অভিন্ন ভালোবাসাই উম্মাহকে এক সূত্রে বাঁধতে সক্ষম।

আমাদের উচিত, মতপার্থক্যকে বিভেদের কারণ না বানিয়ে বরং নবী (সা.)-এর শিক্ষা ও আহলে বাইত (আ.)-এর জীবনাদর্শকে কেন্দ্র করে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তি গড়ে তোলা। কেননা, উম্মাহর ঐক্যই ইসলামের শক্তি এবং মানবতার কল্যাণের মূল ভিত্তি।

প্রথমে আপনাকে পবিত্র মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, মাওলানা সাহেব, আমাদের বর্তমান সমাজ নানা ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকটে জর্জরিত। এই প্রেক্ষাপটে আপনি মনে করেন কেন নবী করিম (সা.)-এর শিক্ষার প্রতি ফিরে যাওয়া জরুরি?

মাওলানা ইব্রাহিম খালিল রিজভী: ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ, আপনাকেও শুভেচ্ছা জানাই, দেখুন আসলে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর জীবন ছিল আল-কুরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যা। তিনি শুধু ইবাদতের শিক্ষা দেননি, বরং ন্যায়বিচার, মানবিকতা, ভ্রাতৃত্ব, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সামাজিক নীতি ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য সবকিছুতেই আদর্শ স্থাপন করেছেন। আজ যখন আমরা দেখি সমাজে অন্যায়, দুর্নীতি, অশান্তি ও বিভাজন, তখন রাসূলের (সা.) শিক্ষা ছাড়া কোনো স্থায়ী সমাধান নেই। নবীর শিক্ষা মানুষকে সত্য, ন্যায় ও শান্তির পথে ফিরিয়ে আনে।

বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভাজন ও ক্ষমতার লড়াই প্রবলভাবে লক্ষ্য করা যায়। এখানে নবীর রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা কিভাবে কার্যকর হতে পারে?

মাওলানা রিজভী:
রাসূল (সা.) সর্বদা শূরা বা পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি ক্ষমতাকে দায়িত্ব হিসেবে দেখতেন, ভোগের উপকরণ হিসেবে নয়। আজকের রাজনীতিতে যদি সেই শিক্ষা কার্যকর হয়-অর্থাৎ, নীতি-নৈতিকতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের সেবাকে মূল ধরা হয়—তাহলে বিভাজন কমে যাবে। নবী (সা.)-এর শিক্ষা হলো: “সেরা নেতা তিনি, যিনি মানুষের সেবক।” আমাদের রাজনীতিতে যদি এ নীতি প্রতিফলিত হয়, তবে সংকট অনেকটাই দূর হবে।

সামাজিক ক্ষেত্রে আমরা যে ভাঙন, স্বার্থপরতা ও নৈতিক অবক্ষয় লক্ষ্য করছি, এর প্রতিকার নবীর শিক্ষায় কীভাবে সম্ভব?

মাওলানা রিজভী:
রাসূল (সা.) মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার বন্ধন জোরদার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা একে অপরের ভাই।” তিনি প্রতিবেশীর অধিকার, নারী-পুরুষের মর্যাদা, এতিম-গরিবের হক আদায়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যদি সমাজের প্রতিটি স্তরে আমরা এ শিক্ষা কার্যকর করি-একজন আরেকজনকে নিজের ভাই-বোন হিসেবে দেখি-তাহলে সামাজিক অবক্ষয় দূর হবে এবং সমাজে শান্তি আসবে।

 ধর্মীয় ক্ষেত্রে আমরা মাঝে মাঝে মতভেদ ও বিভাজন দেখি। এখানে রাসূল (সা.)-এর শিক্ষার কোন দিক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা রিজভী:
নবী করিম (সা.)-এর অন্যতম শিক্ষা ছিল ঐক্য ও সহনশীলতা। তিনি বলেছেন, “মুসলমান মুসলমানের ভাই।” তিনি ধর্মীয় মতভেদকে বিদ্বেষে রূপান্তরিত হতে দেননি। আজকের দিনে আমাদের প্রয়োজন পরস্পরের মতকে সম্মান করা, ইসলামের মৌলিক ঐক্যের উপর দাঁড়ানো এবং বিভাজন নয়, বরং মিলনের পথ খুঁজে নেওয়া। নবীর শিক্ষা হলো ভ্রাতৃত্ব, আর তা-ই ধর্মীয় সংকটের সমাধান।

 সবশেষে, সাধারণ মানুষ কিভাবে মহানবীর (সা .) শিক্ষাকে তাদের দৈনন্দিন জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারে?

মাওলানা রিজভী:
প্রথমত, নবীর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে-তাঁর সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ধৈর্য ও দয়া আমাদের জীবনের অংশ হতে হবে। দ্বিতীয়ত, পরিবার ও সমাজে তাঁর নীতি-নৈতিকতা বাস্তবায়ন করতে হবে। তৃতীয়ত, আমাদের শিশু-কিশোরদের মাঝে রাসূলের (সা.) জীবন তুলে ধরা জরুরি। প্রতিটি মুসলমান যদি ব্যক্তিগত জীবনে মহানবীর শিক্ষাকে ধারণ করে, তাহলে তা স্বাভাবিকভাবেই সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

ফলাফল: এই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট হলো, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকট দূর করার একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথ হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা। তাঁর আদর্শই আমাদের জন্য শান্তি, ন্যায় ও ঐক্যের সর্বোচ্চ দিকনির্দেশনা।

সাক্ষাত্কার গ্রহণ: মাজিদুল ইসলাম শাহ 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha