শনিবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ০৮:৪২
শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যই আজ মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় অস্ত্র

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মজিদুল ইসলাম বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) শুধু আনন্দ-উৎসবের দিন নয়; বরং এটি মুসলিম উম্মাহকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের পথে আহ্বান করার এক মহা উপলক্ষ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আজকের বিভক্ত ও সংকটাপন্ন বিশ্বে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ দূর করে ইসলামের প্রকৃত শক্তি ও মর্যাদা বিশ্বে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

হাওজা  নিউজ এজেন্সি’কে দেয়া হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মজিদুল ইসলামের সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি:

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আমাদের জন্য কী বার্তা বহন করে? বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য এ দিবসের গুরুত্ব আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
জনাব মজিদুল ইসলাম: ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আমাদের জন্য সর্বোচ্চ দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণার দিন। এটি শুধু প্রিয়নবী (সা.)-এর জন্মোৎসব নয়, বরং তাঁর আনা শান্তির বার্তা, মানবিকতা, ন্যায়বিচার এবং ভ্রাতৃত্বকে পুনরায় স্মরণ করার দিন। বর্তমান সময়ে, যখন মুসলমানরা নানা কারণে বিভক্ত, তখন এ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ঐক্য ছাড়া আমরা শক্তি অর্জন করতে পারব না। নবীজির জীবন আমাদের শিখিয়েছে, ভিন্ন মত ও মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে মুসলিম উম্মাহকে একসাথে দাঁড়াতে হবে।

হাওজা: ইসলামি ঐক্য সপ্তাহের লক্ষ্য ও দর্শন কী? মুসলমানদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করতে এ উদ্যোগ কতটা কার্যকর হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
জনাব মজিদুল ইসলাম: ইসলামি ঐক্য সপ্তাহের মূল দর্শন হলো মুসলমানদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা। ইমাম খোমেইনির উদ্যোগে যেভাবে এই সপ্তাহকে নির্ধারণ করা হয়েছে, তা প্রমাণ করে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্যের জন্য আন্তরিক প্রয়াস রয়েছে। মতপার্থক্য ইসলামি ইতিহাসে নতুন কিছু নয়, তবে এগুলোকে দ্বন্দ্ব ও শত্রুতার রূপ দেওয়া উচিত নয়। ঐক্য সপ্তাহ মুসলমানদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের সাধারণ শত্রু হচ্ছে জাহিলিয়াত, উপনিবেশবাদ ও জিওনিস্ট ষড়যন্ত্র—না যে আমরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।
 

হাওজা: বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে ঐক্য কতটা জরুরি? এবং ইসলামের ভাবমূর্তি রক্ষায় আলেম-ওলামাদের কী ভূমিকা রাখা উচিত?
জনাব মজিদুল ইসলাম: আজকের বিশ্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন নতুন ষড়যন্ত্র হচ্ছে—কোথাও যুদ্ধ, কোথাও মিডিয়া প্রোপাগান্ডা, আবার কোথাও বিভাজনের রাজনীতি। এসবের মোকাবিলা করার একমাত্র উপায় হলো ঐক্য। আলেম-ওলামারা এ ক্ষেত্রে বিশেষ দায়িত্বশীল। তারা যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, বিভাজনের চেয়ে মিলের দিকগুলো সামনে আনেন এবং নবীজির (সা.) আদর্শকে প্রচার করেন, তবে মুসলমানরা নিজেদের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

হাওজা: তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইসলামি ঐক্যের বোধ জাগ্রত করতে আমাদের কী ধরণের সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক ও সামাজিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?
জনাব মজিদুল ইসলাম: তরুণ প্রজন্মই উম্মাহর ভবিষ্যৎ। তাদের মধ্যে ঐক্যের বোধ জাগ্রত করতে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামি ঐক্য বিষয়ে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করতে হবে। সাংস্কৃতিকভাবে এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে যেখানে শিয়া-সুন্নি উভয় সম্প্রদায় একসাথে অংশগ্রহণ করবে। সামাজিকভাবে তরুণদের মিলনমেলা, যৌথ প্রকল্প ও মানবসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। মিডিয়া ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেও তাদের ঐক্যের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব।

হাওজা: মুসলিম বিশ্বকে, বিশেষত এই মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহের প্রেক্ষিতে আপনি কী বার্তা দিতে চান?
জনাব মজিদুল ইসলাম: আমি মুসলিম বিশ্বের সকল ভাই-বোনদের কাছে আহ্বান জানাই—আজ আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে শত্রুরা আমাদের টুকরো টুকরো করে দেবে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, নবীজির (সা.) উম্মাহ বিভক্ত থাকার জন্য নয়। এই পবিত্র দিনগুলোতে আমরা প্রতিজ্ঞা করি—কোরআন ও আহলে বাইতের (আ.) শিক্ষা, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ এবং উলামাদের নির্দেশনা মেনে আমরা বিভেদের দেয়াল ভেঙে একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী উম্মাহ গড়ে তুলব।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha