হাওজা নিউজ এজেন্সি: রবিবার প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তথাকথিত “অপারেশন সোর্ডস অব আয়রন” শুরুর দুই বছর পূর্তিতে দেখা যায়, আহত সেনাদের অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের নিচে, ৯২ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৪ শতাংশ রিজার্ভ সেনা। প্রায় ৪৫ শতাংশ শারীরিকভাবে আহত, আর ৫৬ শতাংশ মানসিক প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত।
পুনর্বাসন বিভাগের বাজেট গত দুই বছরে ৫৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৩ বিলিয়ন শেকেল (২.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যার মধ্যে ৪.১ বিলিয়ন শেকেল (১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় ব্যয় করা হচ্ছে। বিভাগটির অনুমান, ২০২৮ সালের মধ্যে ১ লাখ আহত সেনাকে চিকিৎসা দিতে হবে, যাদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার মানসিক সমস্যায় ভুগবে।
বর্তমানে ৯ শতাংশ সেনা মাঝারি থেকে গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। ৫৬ জনকে ১০০ শতাংশেরও বেশি অক্ষম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২৪ জন পুরোপুরি অক্ষম, ১৬৮ জন জটিল মস্তিষ্কের আঘাতে ভুগছে, ১৬ জন হুইলচেয়ারে এবং ৯৯ জন অঙ্গহীন সেনা কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহার করছে।
প্রতিমাসে গড়ে ১ হাজার নতুন আহত সেনাকে পুনর্বাসন বিভাগে ভর্তি করা হচ্ছে। শুধু গত বছরেই মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় ২৫১টি ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।
২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় এক সামরিক ঘাঁটিতে গোলানি ব্রিগেডের এক সেনাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ নিয়ে চলতি বছরে সেনাদের আত্মহত্যার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮।
গোলানি ব্রিগেডের এক সেনা ইসরায়েলি কনেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিকে জানান: “আমি ২১ বছরের। আমার একমাত্র স্বপ্ন কপালে গুলি খাওয়া। আমি যেন জীবন্ত মৃত। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি, আমার হাত কেটে দাগে ভর্তি। কেন? আমি এই অভিশপ্ত দেশের জন্য লড়েছি। আমি ২৩ বন্ধুকে হারিয়েছি, মাত্র তিন দিন আগে একজন আত্মহত্যা করেছে। প্রতিনিয়ত লাশ চোখের সামনে ভেসে ওঠে।”
পরিসংখ্যান বলছে, গাজা দখল অভিযানের পর থেকে আত্মহত্যার ঘটনা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ২০২১ সালে ১১ জন, ২০২২ সালে ১৪ জন, ২০২৩ সালে ১৭ জন এবং ২০২৪ সালে ২১ জন সেনা আত্মহত্যা করেছে। শুধু ২০২৫ সালের জুলাই মাসেই ৭ জন সেনা আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে হিব্রু দৈনিক হারেৎজ পত্রিকা।
এদিকে গিভাতি ব্রিগেডের ছয় সেনাকে গাজায় ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড, দু’জনকে স্থগিত সাজা এবং একজনকে সামরিক আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আরেক ঘটনায়, রহোভট শহরে নিজের বিয়ের দিনই ৩১ বছর বয়সী এক রিজার্ভ সেনা আত্মহত্যা করেছেন বলে ইসরায়েলি দৈনিক মারিভ জানিয়েছে।
পুনর্বাসন বিভাগ বর্তমানে মারাত্মক জনবল সংকটে ভুগছে। প্রতি ৭৫০ জন আহত সেনার জন্য রয়েছে মাত্র একজন পুনর্বাসনকর্মী। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, বিদ্যমান আইন ও প্রক্রিয়া বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এজন্য প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা এবং চিকিৎসা ও প্রতিবন্ধিতা নির্ধারণ ব্যবস্থায় সংস্কার আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।
দৈনিক ইসরায়েল হায়োম জানায়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ আহত সেনাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য একটি যৌথ জনকমিটি গঠন করেছেন।
মানসিক সহায়তা সংগঠন ERAN জানিয়েছে, শুধু ২০২৫ সালের জুন মাসেই ৬ হাজারের বেশি ইসরায়েলি সেনা মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা নিয়েছে। তবে ১৭ জুলাইয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন আত্মহত্যার হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, বিষয়গুলো “তদন্তাধীন রয়েছে।”
আপনার কমেন্ট