হাওজা নিউজ এজেন্সি: স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম কী এবং এর উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবে সংজ্ঞায়িত একটি আইনি প্রক্রিয়া। এর লক্ষ্য হলো— যদি পরমাণু চুক্তি (JCPOA) অনুসারে কোনো দেশ গুরুতরভাবে চুক্তি লঙ্ঘন করে, তবে অন্য সদস্যরা জাতিসংঘের আগের সব নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরিয়ে আনতে পারে।
প্রক্রিয়াটি শুরু হয় নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে একটি চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে। ৩০ দিনের মধ্যে যদি পরিষদ নতুন কোনো প্রস্তাবের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চালু রাখতে ব্যর্থ হয় (বা স্থায়ী সদস্যদের ভেটোতে আটকে যায়), তবে আগের সব জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় কার্যকর হয়।
গুরুত্বপূর্ণ: এই ব্যবস্থা কেবল জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনে। যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা (যেমন ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা, তেল বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা) এর আওতায় পড়ে না।
প্রশ্ন: ইউরোপীয় ত্রয়ীর পদক্ষেপ কেন সমালোচিত?উত্তর: জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের স্ন্যাপব্যাক সক্রিয় করার পদক্ষেপ আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। কারণ—
যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও তারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেনি।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও ব্যর্থ হয়েছে।
এ ধরনের দ্বৈত মানদণ্ড ইউরোপের নৈতিক ও আইনি অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
প্রভাব ও ফলাফল
প্রশ্ন: স্ন্যাপব্যাক কি নতুন নিষেধাজ্ঞা তৈরি করে?উত্তর: না। এটি কেবল পুরনো জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় কার্যকর করে। এর আওতায় পড়ে—
পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র-সম্পর্কিত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা
নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ
দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য (শিল্প ও সামরিক উভয়ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য) পণ্যের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ
প্রশ্ন: অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে?
উত্তর: এটি মূলত উন্নত প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ সংগ্রহকে জটিল করে তুলবে। তবে—
ইরান ইতোমধ্যে দেশীয় প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে অনেক সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে।
চীন ও রাশিয়ার পূর্ণ সহযোগিতা সবসময় পাওয়া যায় না, তবু কিছুটা সুযোগ তৈরি হয়।
সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বা বাজারদরে সরাসরি বড় প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম।
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক পরিদর্শন কি হুমকি হতে পারে?উত্তর: না, কারণ কেবল যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ থাকলেই পরিদর্শনের অনুমতি পাওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক পানিসীমায় পরিদর্শনের জন্য জাহাজের পতাকা দেশের সম্মতি প্রয়োজন।
তাই এটি কোনো নৌ-অবরোধ বা জাহাজ জব্দের সুযোগ তৈরি করে না।
ইরানের করণীয়
প্রশ্ন: ইরানের প্রতিক্রিয়া কী হওয়া উচিত?উত্তর: দুটি সমান্তরাল কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন-
১. একীভূত প্রতিরক্ষা কৌশল: রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও সামাজিক প্রস্তুতির মাধ্যমে পশ্চিমা পদক্ষেপের প্রভাব সীমিত করা, এর মধ্যে রয়েছে—জাতিসংঘের কমিটি ও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের রিপোর্ট চ্যালেঞ্জ করা, চীন ও রাশিয়ার সহায়তায় এসব কমিটির বাজেট ও কার্যকাল রোধ করা, স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও বিকল্প প্রতিবেদন উপস্থাপন।
২. কূটনৈতিক উদ্যোগ: ৩০ দিনের সময়সীমাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কূটনৈতিক কাঠামো প্রস্তাব করা—, ইরানের শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধকরণের অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত করা,পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা বা নাশকতা নিন্দা করার জন্য জাতিসংঘকে বাধ্য করা, আলোচনার জন্য নির্দিষ্ট ৩-৫ বছরের সময়সীমা নির্ধারণ,স্ন্যাপব্যাক স্থগিত রাখা।
এটি ইরানকে চাপ-ভিত্তিক আলোচনার বাইরে এনে সম্মানজনক আলোচনার পরিবেশ তৈরি করবে।
প্রশ্ন: ইউরোপের ছয় মাসের প্রস্তাব কেন অগ্রহণযোগ্য?
উত্তর:▫️সময় খুবই সীমিত, অর্থবহ আলোচনা সম্ভব নয়।
▫️কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা না দিয়েই ইরানের চাপের উপায় কেড়ে নেয়।
▫️জাতীয় ঐক্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।
▫️স্থায়ী সীমাবদ্ধতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন: বিকল্প প্রস্তাবে কী থাকা উচিত?
উত্তর:▫️ইরানের সমৃদ্ধকরণের অধিকারকে পরিষ্কারভাবে স্বীকৃতি
▫️পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার নিন্দা বাধ্যতামূলক করা
▫️নির্দিষ্ট সময়সীমায় (৩-৫ বছর) আলোচনার সমাপ্তি
এই সময়ে স্ন্যাপব্যাক স্থগিত রাখা
▫️সমান শর্তে চাপমুক্ত আলোচনার পরিবেশ তৈরি।
প্রশ্ন: সার্বিক বার্তা কী?
উত্তর: স্ন্যাপব্যাক ইস্যু ইরানের জন্য একটি কৌশলগত পরীক্ষা। পশ্চিমা পদক্ষেপ মূলত রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা, তবে এর প্রভাব নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ইরানের সফলতা নির্ভর করবে—
প্রস্তুতি, সক্রিয় কূটনীতি, এবং বিচক্ষণ, সময়োপযোগী পদক্ষেপের ওপর।
আপনার কমেন্ট