রবিবার ১২ অক্টোবর ২০২৫ - ১০:৪৩
পদ্ধতি নয়, প্রেরণাই আসল; হিজাব সমস্যার মূল কোথায়?

হিজাব বা পর্দা ইস্যুতে বর্তমান পরিস্থিতির মূলে পদ্ধতিগত ত্রুটি নয়, বরং অন্তরের প্রেরণা ও বিশ্বাসের দুর্বলতাই মুখ্য। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যতদিন পর্যন্ত নেতৃবৃন্দের হৃদয়ে সত্যিকারের ঈমান, দায়িত্ববোধ এবং আন্তরিক বিশ্বাস জাগ্রত না হবে, ততদিন কোনো সাংস্কৃতিক বা শিক্ষামূলক কর্মসূচি স্থায়ী সাফল্য অর্জন করতে পারবে না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: সম্প্রতি এক পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলেছেন— “আজকের হিজাব সংকটের মূল কারণ হলো পদ্ধতি ও বাস্তবায়নের ত্রুটি।” এই বক্তব্য কেবল তাঁর নয়; রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের একাংশও একই মত পোষণ করেন। তারা বলেন, সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের ধরন পরিবর্তন করতে হবে এবং ‘সহণশীল পদ্ধতি’ অবলম্বন করতে হবে।

কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন— এই বক্তব্য আপাতভাবে যুক্তিযুক্ত মনে হলেও, প্রকৃতপক্ষে তা ভেতরে শূন্য; কারণ যেখানে অন্তরের বিশ্বাস ও প্রেরণা অনুপস্থিত, সেখানে কোনো কৌশলই ফলপ্রসূ হয় না।

যদি হিজাব সত্যিই কিছু কর্মকর্তার চিন্তা ও মূল্যবোধের জায়গায় স্থান পেত, তারা নিজেরাই কার্যকর পদক্ষেপ নিতেন। কারণ মানুষ যখন কোনো সত্যকে হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করে, তখন পথ না পেলে পথ তৈরি করে নেয়। অথচ আজ দেখা যাচ্ছে, হিজাব ও পবিত্রতা রক্ষার মতো সাংস্কৃতিক দায়িত্বগুলোই সবচেয়ে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে— তাও কোনো রাজনৈতিক বা নিরাপত্তাজনিত বাধা ছাড়াই।

এই স্থবিরতা পদ্ধতির দুর্বলতা থেকে নয়; বরং মূল্যবোধের স্থানে সুবিধাবাদকে প্রাধান্য দেওয়া এবং হিজাবকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার ফল।

প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে কর্মকর্তারা বলেন— “আমাদের সাংস্কৃতিক কাজ করতে হবে।” কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই কাজটি করবে কে? যদি অন্তরে সত্যিকারের প্রেরণা থাকত, তবে এই কথাটি এতবার পুনরাবৃত্তি করতে হতো না। দায়িত্বশীল ব্যক্তি নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে না; তিনি নিজেই উদ্যোগ নেন।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধির মন্তব্য ও অবস্থান বরং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে দুর্বল করে।

যদি কেউ আইন প্রয়োগে অনাগ্রহী হন, সাংস্কৃতিক কর্মসূচিও গ্রহণ না করেন, এমনকি সেই প্রচেষ্টাগুলোকে সমর্থনও না দেন— তবে অন্তত হিজাব-বিরোধী কার্যক্রমে নিজে যেন অংশ না নেন!

দেখা যায়, অনেকে মুখে হিজাবের পক্ষে বক্তব্য দেন, কিন্তু তাঁদের কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত সেই বক্তব্যের বিপরীত ফল দেয়। এই অবস্থায় স্পষ্ট হয়ে যায়— সমস্যাটা পদ্ধতিতে নয়, সমস্যাটা বিশ্বাস, অগ্রাধিকার ও আন্তরিক দায়বদ্ধতায়।
এই দ্বিচারিতাই সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। একদিন হিজাবকে মূল্যবোধ বলা হয়, পরদিন আবার একে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।

এই অস্থির অবস্থান আসলে আন্তরিক প্রেরণার অভাবেরই প্রতিফলন।

যেমন আগে বলা হয়েছে— “যখন কোনো মূল্যবোধ নেতৃবৃন্দের চিন্তা থেকে গুরুত্ব হারায়, তখন হাজারো সাংস্কৃতিক কৌশলও ব্যর্থ হয়।”

কিছু প্রশাসনিক অবস্থান ও বক্তব্য দ্ব্যর্থতা সৃষ্টি করে, যা সমাজে অনিশ্চয়তা ও অবিশ্বাস বাড়ায়।

সব বিশ্লেষণের মূল বার্তা একটাই: যতদিন পর্যন্ত নেতৃত্বের অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস, প্রেরণা ও দায়িত্ববোধের আগুন জ্বলবে না, ততদিন পদ্ধতি বা নীতির পরিবর্তন কোনো ফল আনবে না।

সুতরাং, পদ্ধতির আগে প্রয়োজন প্রেরণার সংস্কার।
কোনো সরকার-নেতৃত্বাধীন সাংস্কৃতিক উদ্যোগ সফল হতে হলে প্রথমে সেই নেতৃত্বের হৃদয়ে হিজাবের গুরুত্ব ও আত্মিক দায়িত্ববোধকে জীবিত করতে হবে।

যখন সেই বিশ্বাস জাগবে, তখন সামান্যতম পদক্ষেপও ফলপ্রসূ হবে; কিন্তু যতদিন পর্যন্ত সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের মনে হিজাবের অপরিহার্যতার বিশ্বাস দুর্বল থাকবে, ততদিন ‘হিজাব আইন’ কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে— আর সব সাংস্কৃতিক কর্মসূচি রয়ে যাবে কেবল স্লোগান হয়ে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha