মঙ্গলবার ১৪ অক্টোবর ২০২৫ - ০৭:২৪
পাপী হলেও কি আল্লাহর রহমতের আশা রাখা যায়?

পাপী হলেও কি আল্লাহর রহমতের আশা রাখা যায়?

আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া—সবচেয়ে বড় ভুল

অনেক সময় মানুষ কোনো বড় পাপে লিপ্ত হওয়ার পর নিজের অন্তরে প্রচণ্ড অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। নিজের দুর্বল ইচ্ছাশক্তি, প্রবৃত্তির কাছে হার মানা, আর অপরাধের ভারে ক্লান্ত হয়ে অনেকে মনে করে—“আমার ক্ষমা হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। নিশ্চয়ই আমি জাহান্নামেরই লোক।” কিন্তু বাস্তবে এই ধারণাটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ভুল।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: প্রথমেই বুঝে নিতে হবে—আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া নিজেই একটি বড় পাপ, এমনকি তা অনেক সময় মূল পাপের চেয়েও গুরুতর। কারণ হতাশা মানুষকে আরও অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়, আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, এবং অবশেষে তাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামের দৃষ্টিতে “আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া” সেই পথ, যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়।

এটাই সেই কৌশল যা শয়তান ব্যবহার করে—সে চায় মানুষ যেন আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ার আশা হারিয়ে ফেলে। কারণ যতক্ষণ একজন মানুষ আশা রাখে, সে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার শক্তি পায়। কিন্তু একবার যখন সে ভাবে “আর কোনো আশা নেই”, তখনই শয়তানের বিজয় ঘটে।

আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক কখনো ছিন্ন করো না
যে-ই হোক না কেন—যুবক বা বৃদ্ধ, নারী বা পুরুষ—আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে কখনো দেরি করো না। তাঁর সামনে নিজের পাপ স্বীকার করো, এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাও। জটিল ভাষা বা অলঙ্কারপূর্ণ বাক্য নয়—শুধু নিজের ভাষায়, হৃদয়ের গভীর থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলো। কারণ আল্লাহ এমন এক রব, যিনি মানুষের হৃদয়ের কথা জানেন, কথায় প্রকাশের আগেই।

আল্লাহ এমনই মহান—তুমি তার অবাধ্যতা করছ, অথচ তিনি তোমাকে সময় দিচ্ছেন; শাস্তি না দিয়ে অপেক্ষা করছেন যেন তুমি ফিরে আসো। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন যে, “আমি তওবাকারীদের ভালোবাসি, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ভালোবাসি, এবং যারা নিজেদের পবিত্র রাখে, তাদেরও ভালোবাসি।”

এমন কোনো উপাস্য নেই—পূর্বে বা পশ্চিমে—যিনি তোমার প্রভুর মতো; যাকে তুমি অবাধ্য করেও, তিনি আবার তোমাকে ডেকে ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করেন—শুধু শিরক ছাড়া
যে মানুষ পাপে ডুবে আছে, সে যদি মুশরিক না হয়, তাহলে তার জন্য ক্ষমার দ্বার সবসময় খোলা। কুরআনে আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন যে, তিনি শিরক ছাড়া সব পাপ ক্ষমা করেন। তাই শয়তান যেন তোমাকে তাওবা বিলম্বিত করতে না পারে—কারণ তুমি জানো না মৃত্যু কখন আসবে। যদি তাওবা পিছিয়ে দিতে দিতে মৃত্যু এসে যায়, তবে সেই সুযোগ চিরতরে হারিয়ে যাবে, আর হারাবে চিরন্তন মুক্তির সম্ভাবনাও।

সত্যিকারের তাওবা কেমন হওয়া উচিত
যে কেউ আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে চায়, তাকে জানতে হবে—সত্যিকারের তাওবা বা অনুতাপের চারটি শর্ত রয়েছে:
•অতীতের পাপের জন্য গভীর অনুশোচনা ও দুঃখ অনুভব করা।

•দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা যে আর কখনো সেই পাপে ফিরে যাবে না।

•যদি কারও প্রতি অন্যায় করে থাকো, তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।

•অতীতে বাদ পড়া ফরজ দায়িত্বগুলো (যেমন নামাজ, রোজা ইত্যাদি) যথাসম্ভব পূরণ করা।

যে ব্যক্তি এই শর্তগুলো আন্তরিকভাবে পালন করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। তখন সে উপলব্ধি করে যে হালাল জীবনের শান্তি ও তৃপ্তি, হারাম ও পাপের ক্ষণস্থায়ী আনন্দের চেয়ে কত অগণিতগুণ বেশি মধুর।

আল্লাহর দয়া অসীম
যারা মনে করেন, “আমার মতো পাপীর ক্ষমা হওয়ার নয়”—তাদের মনে রাখা উচিত: আল্লাহর দয়া তাঁর ক্রোধের চেয়েও বড়। যে মুহূর্তে তুমি সত্যিকারের অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে, সেই মুহূর্তেই তিনি তোমার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দিতে পারেন।

তাই কখনো হতাশ হয়ো না, নিরাশ হয়ো না। বরং আজই ফিরে আসো তোমার প্রভুর দিকে— যিনি ক্ষমাশীল, দয়াময়, এবং তাঁর বান্দাদের ভালোবাসেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha