বুধবার ২২ অক্টোবর ২০২৫ - ১১:১০
ইরান ও বাংলাদেশের ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের গুরুত্ব

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আলিজাদে মুসাভি ইরান ও বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সাদৃশ্য গভীর ও ঐতিহাসিক। 

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আলিজাদে মুসাভি ইরান ও বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সাদৃশ্য গভীর ও ঐতিহাসিক। 
তিনি বলেন, আমি বহু আরব ও এশীয় দেশ সফর করেছি, বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতেও গিয়েছি, কিন্তু কোথাও উপমহাদেশের মতো—বিশেষত বাংলাদেশে—ইরানের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সামঞ্জস্য দেখিনি। এই দেশগুলো ভবিষ্যতেও ইরানের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা ও ঐক্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

ইরান ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ঘনিষ্ঠতা

তিনি আরও বলেন, এই ঘনিষ্ঠতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ভাষা। বাংলা পৃথিবীর সপ্তম সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষা, এবং প্রায় ২ কোটি বাংলাদেশি বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। আকর্ষণীয় বিষয় হলো, বাংলাদেশের জনগণের ইরানের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক, এবং পারসিয়ান (ফারসি) ও বাংলা ভাষার মধ্যে বিপুল পরিমাণে শব্দগত সাদৃশ্য রয়েছে—প্রায় ৭,০০০টি শব্দ দুটি ভাষায় অভিন্ন।

মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের ভূমিকা ও আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা

হুজ্জাতুল ইসলাম আলিজাদে মুসাভি বলেন, বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যার সঙ্গে ইরানের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গভীর। এই দেশটি প্রতি বছর মহররম মাসে, বিশেষ করে আশুরার দিনে, অত্যন্ত উৎসাহ ও ভালোবাসার সঙ্গে শোক অনুষ্ঠান পালন করে—যা আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি জনগণের গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতিফলন।

বাংলাদেশের সঙ্গে ইরানের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যা বিশাল একটি বাজার তৈরি করেছে, যা ইরানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। যদি পশ্চিমবঙ্গকেও বিবেচনা করা হয়, তবে আরও প্রায় ১০ কোটি মানুষ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশ: তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ, অপরিসীম সম্ভাবনাময় শক্তি


তিনি বলেন, জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এই বিশাল জনশক্তি ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা—বিশেষত শ্রমশক্তি ও রপ্তানি খাতে—ইরানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অংশীদারিত্বের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এখনো পর্যন্ত আমরা এই দেশের সম্ভাবনাগুলো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি, অথচ বাংলাদেশ সহযোগিতার প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

উপমহাদেশে গণমাধ্যমের সক্ষমতার প্রতি মনোযোগের প্রয়োজন

হুজ্জাতুল ইসলাম আলিজাদে মুসাভি বলেন, এই অঞ্চলে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, যা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। গণমাধ্যম ও সংবাদ প্রচার এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় উপাদান। আমরা উপমহাদেশে হাওজা নিউজ এজেন্সি-এর একটি শাখা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত।

হাওজা নিউজ এজেন্সির শাখা স্থাপন উদ্যোগ

তিনি বলেন, এই শাখাটি শিয়া ও সুন্নি আলেমদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে সহায়তা করতে পারে এবং ইতিবাচক আঞ্চলিক প্রভাব ফেলবে। যেহেতু উপমহাদেশ ইসলামি বিশ্বের জন্য একটি কৌশলগত অঞ্চল, তাই এখানে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

হুজ্জাতুল ইসলাম আলিজাদে মুসাভি আরও বলেন, হাওজা নিউজ এজেন্সি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন। বর্তমানে এই অঞ্চলে আমাদের শত্রুদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে, যা আমাদের লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। আমরা ‘শিয়া প্রচার’ করতে চাই না, বরং আমাদের দুটি মূল লক্ষ্য রয়েছে:
প্রথমত, শিয়াদের সঠিক পরিচয় তুলে ধরা—যাতে তা আমাদের নিজেদের ভাষায় উপস্থাপিত হয়, শত্রুদের নেতিবাচক প্রচারণায় নয়;
দ্বিতীয়ত, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি গড়ে তোলা—কারণ আমরা সবাই মুসলমান, আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শিয়া পরিচিতি ও মাজহাব ঐক্য জোরদার: গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা

তিনি আরও বলেন, যদি আমরা এই অঞ্চলের জন্য তিনটি কৌশল নির্ধারণ করি, তাহলে বিশেষ সমস্যা ও প্রেক্ষাপটে আরও কার্যকরভাবে কাজ করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে একটি কৌশল হতে পারে মাজহাব ঐক্য ও বোঝাপড়া জোরদার করা—যেমনটি ইরাকে হয়েছে—তবে উপমহাদেশে আমাদের শিয়া সম্প্রদায়ের সংহতি বৃদ্ধিতে বেশি মনোযোগ দিতে হতে পারে। এছাড়া, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হতে পারে অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে, বিশেষত হিন্দুধর্মের সঙ্গে, দার্শনিক ও ধর্মীয় সংলাপ বৃদ্ধি করা।

তিনি বলেন, ভারতে এমন কিছু ধারাপ্রবাহ আছে যারা মুসলমানদের সঙ্গে দার্শনিক ও ধর্মীয় আলোচনায় আগ্রহী। তারা ঐক্য ও আধ্যাত্মিক ধারণা নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনাকে স্বাগত জানায়। যদি আমরা এসব আলোচনার খবর বৈজ্ঞানিক ও পেশাদারভাবে প্রকাশ করতে পারি, তাহলে তা বিশ্বজুড়ে মুসলিম আলেমদের জন্য মূল্যবান হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের মনোযোগ একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কেন্দ্রীভূত করতে হবে। যদি আমরা তা করতে পারি, তবে এই অঞ্চলে আমাদের উদ্দেশ্যগুলো আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। আমরা এই লক্ষ্যে যেকোনো সহযোগিতা ও পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

হাওজা নিউজ এজেন্সির প্রতি আস্থা: নির্ভরযোগ্য সংবাদসূত্র

তিনি বলেন, আমার কাছে হওযা নিউজ এজেন্সি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম। যখনই অন্য কোনো সূত্র থেকে সংবাদ পাই, আমি তার সত্যতা যাচাই করতে এই এজেন্সির ওপর নির্ভর করি।

তিনি আরও বলেন, উপমহাদেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের সংবাদ প্রচারে হাওজা নিউজ এজেন্সি-এর ভূমিকার জন্য আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের আলেমদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক ও কার্যক্রমগুলোর খবর দ্রুত এই সংস্থার মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে—যা তাদের পেশাদারিত্ব ও সর্বদা হালনাগাদ থাকার প্রমাণ।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha