হাওজা নিউজ এজেন্সি: অশ্লীলতা প্রচার ইসলামে একটি কঠোরভাবে নিন্দিত অপরাধ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে—
إِنَّ الَّذِینَ یُحِبُّونَ أَنْ تَشِیعَ الْفَاحِشَةُ فِی الَّذِینَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِیمٌ فِی الدُّنْیَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ یَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।” [সূরা নূর, আয়াত ১৯]
ইসলামের দৃষ্টিতে এমন যে কোনো কথা, কাজ বা আচরণ যা সমাজে পাপ, অন্যায় বা দুর্নীতির বিস্তারের কারণ হয়—তা কঠোরভাবে নিন্দিত। কারণ, এর মাধ্যমে নৈতিকতার প্রাচীর ভেঙে পড়ে, পাপ স্বাভাবিক বলে মনে হয় এবং সমাজ ধীরে ধীরে নৈতিক অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়।
এই বিষয়ে একটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ বর্ণনা পাওয়া যায়।
এক ব্যক্তি ইমাম মুসা কাজিম (আ.)-এর দরবারে এসে বলল—
“হে আমার প্রাণ আপনার উদ্দেশে উৎসর্গিত হোক! আমি আমার এক ভাই সম্পর্কে এমন একটি খবর শুনেছি যা তার মর্যাদার পরিপন্থী। যখন আমি বিষয়টি জানতে চাই, সে অস্বীকার করে, অথচ একদল বিশ্বস্ত লোক আমাকে তা জানিয়েছে।”
ইমাম (আ.) উত্তরে বললেন,
یَا مُحَمَّدُ کَذِّبْ سَمْعَکَ وَ بَصَرَکَ عَنْ أَخِیکَ... فَتَکُونَ مِنَ الَّذِینَ قَالَ اللَّهُ إِنَّ الَّذِینَ یُحِبُّونَ أَنْ تَشِیعَ الْفَاحِشَةُ فِی الَّذِینَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِیمٌ فِی الدُّنْیَا وَ الْآخِرَةِ.
“হে মুহাম্মদ! তোমার ভাই সম্পর্কে তোমার চোখ ও কানকে মিথ্যা প্রমাণ করো। এমনকি যদি পঞ্চাশজন ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে শপথ করে সাক্ষ্য দেয়, আর সে নিজে তা অস্বীকার করে—তবে তুমি তার কথাই বিশ্বাস করো এবং তাদের মিথ্যা মনে করো।
তার সম্পর্কে এমন কিছু প্রচার করো না যা তাকে লজ্জিত করে বা তার মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে। কেননা, এতে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’”
[ওয়াসায়েলুশ শিয়া, খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা ২৯৫]
যেমনভাবে আগুনে বাতাস দিলে তা আরও প্রজ্বলিত হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি পাপ, অবাধ্যতা ও আল্লাহর অসন্তুষ্টিকর কাজের প্রচারও তার বিস্তার ঘটায়—বিশেষত আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে।
এর ফলে শুধু পাপীদেরই অপমান বা কেলেঙ্কারি হয় না, বরং অনেকেই যারা আগে এসব বিষয়ে অজ্ঞ ছিল, তারা সেগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায় এবং হয়তো নিজেরাও তাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অবশেষে, পুরো সমাজ নৈতিক অধঃপতন ও ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায়।
এই কারণেই ইমাম আলী (আ.) সতর্ক করেছেন—
مُذِیعُ الْفَاحِشَةِ كَفَاعِلِهَا.
“যে ব্যক্তি অশ্লীলতা প্রচার করে, সে যেন সেই অশ্লীল কাজেরই অংশীদার।” [গুরারুল হিকাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭০৪]
উপরের কুরআনিক আয়াত ও ইমামদের বাণী আমাদের সামনে এক গভীর প্রশ্ন রেখে যায়— আজকের সাইবার জগতে আসলে কী ঘটছে এবং আমাদেরই বা করণীয় কী!
আপনার কমেন্ট