বুধবার ২২ অক্টোবর ২০২৫ - ২০:০৯
হাওজা ইলমিয়ার পরিকল্পনা ও তদারকিতে ব্যবস্থাপনাগত ও কৌশলগত কাঠামো

আলেম সমাজের ভূমিকা হলো আল্লাহর স্মরণকে জীবিত রাখা, সচেতন ও দায়িত্বশীল প্রজন্ম গঠন করা এবং ইসলামী বিপ্লবের চিন্তা ও কৌশলকে অব্যাহত রাখা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আ’রাফি হাওজা ইলমিয়ার ঐতিহাসিক ও সভ্যতাগত অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, আলেম সমাজের ভূমিকা হলো আল্লাহর স্মরণকে জীবিত রাখা, সচেতন ও দায়িত্বশীল প্রজন্ম গঠন করা এবং ইসলামী বিপ্লবের চিন্তা ও কৌশলকে অব্যাহত রাখা।

কোম শহরের হাওজা ইলমিয়ার কেন্দ্রীয় দপ্তরে অনুষ্ঠিত “হাওজা ইলমিয়ার প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও তদারকি কর্মকর্তাদের সম্মেলনে” বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নাহজুল বালাগার ২২২তম খুতবা, যা “খুতবাতুয্‌ যিকর” নামে পরিচিত, আমাদের এই দিকনির্দেশনা দেয় যে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা, পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের নিজেদের, তালিবে ইলম ও হাওযার আলেমদের আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিকাশ; কারণ চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো সমাজ ও বিশ্বের আত্মিক ও নৈতিক উৎকর্ষ, যা হাওজা ইলমিয়ার অস্তিত্বের মূল দর্শন ব্যাখ্যা করে।

আমিরুল মুমিনিন (আ.)-এর বাণী থেকে কথার সূচনা

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক বলেন: হাওজার জ্ঞান ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সঠিক পথ নির্ধারণ করতে হলে আমাদের সেই বাণী থেকে শুরু করতে হবে যা আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা—নাহজুল বালাগার ২২২তম খুতবা “খুতবাতুয্‌ যিকর”। মহান ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই খুতবার মাহাত্ম্য ও গভীরতা সম্পর্কে বহু বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে।

তিনি যোগ করেন, এই খুতবা সূরা নূরের ৩৭ নম্বর আয়াত—
«رِجَالٌ لَا تُلْهِیهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَیْعٌ عَنْ ذِکْرِ اللَّهِ...»—
অর্থাৎ “যেসব পুরুষ বাণিজ্য বা ক্রয়-বিক্রয় দ্বারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয় না” —এই আয়াতের তিলাওয়াতের পর নাজিল হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, এই খুতবা সেই আয়াতেরই ব্যাখ্যা ও বাস্তব প্রতিফলন।

ইমাম আলী (আ.)-এর দৃষ্টিতে ‘যিকর’-এর ব্যাখ্যা

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক খুতবার প্রথম অংশ পাঠ করে বলেন:
«إِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ وَ تَعَالَی جَعَلَ الذِّکْرَ جِلاءً لِلْقُلُوبِ...»
অর্থাৎ, “আল্লাহ যিকরকে হৃদয়ের পরিশোধক হিসেবে স্থাপন করেছেন; যার মাধ্যমে বধির কান শ্রবণশক্তি ফিরে পায়, অন্ধ চোখ দেখতে সক্ষম হয় এবং একগুঁয়ে মন নরম হয়ে যায়।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, এটি ইমাম আলী (আ.)-এর বর্ণনায় “যিকর”-এর প্রকৃত চিত্র।
যিকর একটি মৌলিক, অন্তর্নিহিত ও হৃদয়গত অবস্থা—যা গাফেলত ও বিস্মৃতির বিপরীতে অবস্থান করে।
যদি এই আত্মিক অবস্থা মানুষের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তা মানুষের জিহ্বা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

তিনি আরও বলেন, ইমাম খোমেনি (রহ.) ও কুম শহরের হাওজা যে মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা ইসলামের ইতিহাসে এক মোড় পরিবর্তনের মুহূর্ত, কারণ এর আগে কখনো ধর্ম ও হাওজার জ্ঞানগত নেতৃত্ব এইভাবে সমাজ পরিচালনার কেন্দ্রে অবস্থান করেনি। এটি এক “বৃহৎ কৌশলগত রূপান্তর” এবং “সভ্যতাগত মৌলিক পরিবর্তন”, যার উৎপত্তি কুম থেকে এবং আজ আমরা তার কেন্দ্রে অবস্থান করছি।

আমিরুল মুমিনিন (আ.)-এর দৃষ্টিতে যিকরের মানসিক ও আত্মিক প্রভাব

আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বলেন:
এই খুতবায় যিকরের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে:

১. আল্লাহ যিকরকে হৃদয়ের পলিশ হিসেবে স্থাপন করেছেন, যা হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে ও মরচে দূর করে।

২. যিকর শ্রবণশক্তি প্রদান করে—অর্থাৎ আত্মিক বধিরতা দূর করে।

৩. যিকর দৃষ্টিশক্তি প্রদান করে—অর্থাৎ আত্মিক অন্ধত্ব দূর করে।

৪. যিকর বিদ্রোহী আত্মাকে নরম করে সত্যের প্রতি অনুগত করে তোলে।

তিনি বলেন, এগুলোই যিকরের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব। যখন হৃদয় অদৃশ্য জগতের (আলমে গায়েব) প্রতি মনোযোগী হয়, তখন মানুষের ভেতরে মৌলিক পরিবর্তন ঘটে।
মানুষের জীবন দুই প্রকার হতে পারে:
একটি হলো যিকরহীন জীবন—যেখানে বস্তুগত আনন্দের চূড়ান্ত ভোগের মাঝেও হৃদয় মরচে ধরা, কান বধির ও চোখ অন্ধ থাকে;
অন্যটি হলো যিকরপূর্ণ জীবন—যেখানে মানবীয় ইন্দ্রিয় ও শক্তিসমূহ আল্লাহর নূরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পরিচালিত হয়।

মানুষের জীবনে দুই প্রকার যিকর

আয়াতুল্লাহ আ’রাফি আরও বলেন:
মানুষের জীবনে দুই ধরনের যিকর রয়েছে—
একটি হলো “দুনিয়াবি যিকর”, যা বস্তুগত সম্পদ ও জাগতিক আসক্তির প্রতি মনোযোগী, এবং যার ফলাফল সীমিত দুনিয়াবি জীবন;
অপরটি হলো “আল্লাহর যিকর”, যা আত্মাকে উচ্চতর স্তরে উন্নীত করে।

প্রথম অবস্থায় মানুষের সমস্ত শক্তি জাগতিক আকর্ষণের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু আল্লাহর যিকরে অন্তর নতুন নেতৃত্ব লাভ করে এবং মানুষ “হায়াতুন তয়্যিবা” —পরিশুদ্ধ ও আলোকিত জীবনে প্রবেশ করে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha