হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন শাইখ হাদি ক্বাওয়েসি আরও বলেন, “আল্লামা নায়িনীর রচনাবলি ও শিক্ষাসমূহ আজও গবেষক, ছাত্র এবং শীর্ষস্থানীয় মারজাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস ও দিকনির্দেশক হিসেবে টিকে আছে।”
শাইখ হাদি ক্বাওয়েসি আয়াতুল্লাহ মির্জা নায়িনী (রহ.)–এর আন্তর্জাতিক কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “আহলে বাইত (আ.)–এর মাকতাব এমন এক ধারাবাহিক ফকীহ ও মারজাদের মাধ্যমে আলোকিত হয়েছে, যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন শরিয়তের সংরক্ষণে, ধর্মের মূলনীতি রক্ষায় এবং ন্যায় ও সত্যের প্রচারে।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “এই ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছিল প্রাথমিক যুগের হাদীস বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে, যারা মাযহাবের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেন এবং এ পথে নানান কঠিনতা ও বিপদের সম্মুখীন হন।”
শাইখ ক্বাওয়েসি বলেন, “এই জ্ঞানধারা পরবর্তী যুগে শাইখ সাদূক, শাইখ মুফীদ, সাইয়্যেদ মুর্তজা, শাইখ তূসী প্রমুখ মহৎ ফকীহদের হাতে বিকশিত হয়। তাঁদের পরে আল্লামা হিল্লী, শহীদে আউয়াল, শহীদে সানী, মুহাক্কিক কারাকীসহ অন্যান্য বিশিষ্ট আলেমরা এই পথকে আরও সুদৃঢ় করেন এবং ফিকহের ভিত্তি মজবুত করেন।”
তিনি যোগ করেন, “এই ধারার মধ্য থেকেই উদ্ভাসিত হন এক অনন্য জ্ঞানপুঞ্জ, ইসলামী গবেষণার অন্যতম স্তম্ভ— হযরত আয়াতুল্লাহ মুহাক্কিক ফাতেহ শাইখ মুহাম্মাদ হুসাইন নায়িনি (قدس الله نفسه الزکیه)। তিনি তাঁর উচ্চশিক্ষা শুরু করেন প্রখ্যাত উসুলবিদ ফকীহ আয়াতুল্লাহ আবুল কাসেম ক্বালবাসীর কাছে। এরপর সামাররায় গমন করে মারহুম মীরজা শিরাজীর সান্নিধ্য লাভ করেন। পরবর্তীতে সাইয়্যেদ ইসমাঈল সাদরের সঙ্গে কারবালা ও পরে নাজাফে হিজরত করেন এবং সেখানে আখুন্দ খোরাসানীর দারস ও ইফতা পরিষদে অংশ নেন।”
আয়াতুল্লাহ নায়িনীর ইলমি গভীরতা ও তাঁর দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে শাইখ ক্বাওয়েসি বলেন, “তিনি শুধু একজন গবেষকই ছিলেন না, বরং ফিকহের আসমানী দায়িত্বের বিশ্বস্ত রক্ষকও ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ফাওয়ায়েদুল উসূল’ গবেষণা ও বিশ্লেষণের পূর্ণাঙ্গ এক বিদ্যালয়, যা পরবর্তী যুগের মার্জা ও ফকীহদের জন্য এক দৃঢ় ইলমি ভিত্তি তৈরি করেছে। তাঁর ইলমি উত্তরাধিকারে রয়েছে বহু মূল্যবান গ্রন্থ ও অসংখ্য যোগ্য ছাত্র, যারা পরবর্তীতে মারজায়ে হাওজার স্তম্ভে পরিণত হন।”
ইমাম হুসাইন (আ.)–এর পবিত্র দরবারের প্রতিনিধি আরও বলেন “মুহাক্কিক নায়িনীর যুগ ছিল হাওজার ইতিহাসের এক সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়টি শাইখে আযম (আখুন্দ খোরাসানী)–এর যুগের পরবর্তী পর্বে পড়ে, যখন হাওজার জ্ঞানের বিকাশ এক নতুন গতি পায়। আয়াুল্লাহ নায়িনি উসুল শাস্ত্রকে (علم اصول) এমন পর্যায়ে উন্নীত করেন, যেখানে পরিভাষাগত সূক্ষ্মতা, যুক্তির দৃঢ়তা এবং বিশ্লেষণাত্মক নির্ভুলতা নতুন মানদণ্ড সৃষ্টি করে।”
শেষে তিনি বলেন, “মুহাক্কিক নায়িনীর রচনা ও শিক্ষাসমূহ সর্বদা উম্মাহর জন্য দিশারী মিনার এবং হাওজাগুলোর জন্য আলোকবর্তিকা হিসেবে বিদ্যমান। তাঁর বৈজ্ঞানিক কীর্তি ও বাস্তব জীবনের দায়িত্ব আজও ফিকহ ও গবেষণার জগতে অগ্রগণ্য ও প্রভাবশালী।”
আপনার কমেন্ট