শুক্রবার ৭ নভেম্বর ২০২৫ - ১৫:১১
সংসদ ও সরকারকে ডিজিটাল জগতে শাসনব্যবস্থার প্রতি ক্রমবর্ধমান মনোযোগ দিতে হবে

কুম-জুমার খুতবায় কুমের ইমাম আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফি বলেন, সংসদ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল স্পেসের শাসনব্যবস্থা (governance) এবং এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নৈতিক ও শিক্ষামূলক কাঠামোর প্রতি ক্রমবর্ধমান মনোযোগ দিতে হবে; কেননা ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা বারবার এই বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪০৪ সালের ১৬ আবান তারিখে (ইরানি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী) কুমের কুদস মসজিদে অনুষ্ঠিত জুমার খুতবায় আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: ডিজিটাল জগৎ, প্রযুক্তির বিবর্তন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি আজ মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। এটি এক মহামূল্যবান ঘটনা ও সুযোগ, কারণ এটি মানুষের চিন্তা, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের ফসল-যা আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহ মানুষকে এমন শক্তি ও সক্ষমতা দিয়েছেন যাতে সে উদ্ভাবন করতে পারে, নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে এবং জগতের বিভিন্ন উপাদানকে নিজ লক্ষ্যের সেবায় নিয়োজিত করতে পারে।

তিনি বলেন, জ্ঞানার্জন ও বিজ্ঞান–প্রযুক্তির সীমানা সম্প্রসারণ একটি ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় বিষয়। ইসলাম এমন একটি কাঠামো প্রদান করে যা মানুষকে জ্ঞান, প্রযুক্তি, এবং প্রকৃতি অনুধাবনের পথে অগ্রসর হতে উৎসাহিত করে।

আরাফি আরও বলেন: ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের প্রতিটি উদ্ভাবন, সৃষ্টিশীলতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি একটি নৈতিক, ফিকহি এবং দার্শনিক কাঠামোর মধ্যে থাকা উচিত।
বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন ও মানব উদ্ভাবন আল্লাহর শক্তিরই প্রতিফলন, কেননা মানুষকে এমনভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে যে সে ক্রমাগত নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার করতে পারে।

মাজলিসে খোবারগানের (বিশেষজ্ঞ পরিষদ) সদস্য হিসেবে তিনি যোগ করেন: তথ্য ও জ্ঞানে দ্রুত প্রবেশাধিকার, তথ্যের জাতীয় ও বৈশ্বিক বিনিময়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা-সবই আধুনিক প্রযুক্তির ইতিবাচক দিক।

প্রযুক্তি ব্যবস্থায় চারটি প্রধান হুমকির ক্ষেত্র

আরাফি বলেন: যেকোনো ভালো জিনিস যদি সঠিকভাবে পরিচালনা না করা হয়, তা নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনে।
ভার্চুয়াল স্পেস ও স্মার্ট প্রযুক্তিগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
এর দ্রুততা ও ব্যাপ্তির কারণে এর ক্ষতি ও ঝুঁকিগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, কিছু ক্ষতি মানুষের মানসিক ও জ্ঞানগত দিককে প্রভাবিত করে-যেমন ইন্টারনেট আসক্তি, বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্নতা, এবং এমন আচরণগত বিকৃতি যা পরিবার ও নৈতিক ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলে।
এই সমস্যা শুধু ইরানেই নয়, বরং গোটা মানবজাতির জন্যই সাধারণ চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন: এই ধরণের বিপদ অনেককে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সীমা ভাঙার দিকে ঠেলে দেয়, যার ফলশ্রুতিতে সমাজে নৈতিক পতন, পরিবার ভাঙন ও ঈমানভিত্তিক জীবনের ক্ষয় ঘটে।
পাশাপাশি, এটি স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের শাসনব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলে, কারণ বৈশ্বিক ঔদ্ধত্যবাদী শক্তিগুলো এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জাতিগুলোর স্বাধীনতা হরণ, সংস্কৃতিতে অনুপ্রবেশ ও রুচিবোধ পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করতে চায়।

প্রযুক্তির সুযোগ ও হুমকি-দুই দিকেই ভারসাম্য দরকার

আরাফি বলেন: আমরা যেমন এই বুদ্ধিমান প্রযুক্তিগুলির অনন্য সুযোগে বিশ্বাস করি, তেমনি এর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও শাসনতান্ত্রিক হুমকিও অস্বীকার করি না।
এসব ঝুঁকির মোকাবিলায় আমাদের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে হবে। পরিবার ও শিক্ষা ব্যবস্থায় এমনভাবে সন্তানদের গড়ে তুলতে হবে যেন তারা প্রযুক্তির এই হুমকিগুলো চেনে ও সামলাতে পারে।
এজন্য বিশেষ ধরনের নৈতিক ও শিক্ষামূলক তত্ত্বাবধান প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন: শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান ও নীতিনির্ধারকদের এই বিপদসমূহ চিহ্নিত, বিশ্লেষণ ও মোকাবিলা করতে হবে।
কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে, যা প্রশংসনীয়; তবে সংসদ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ডিজিটাল শাসনব্যবস্থা এবং এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মানবসম্পদ গড়ে তোলায় আরও মনোযোগী হতে হবে।
কারণ ইসলামী প্রজাতন্ত্রের মহান নেতা বহুবার এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।

জাতীয় স্বনির্ভরতার জন্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো জোরদার জরুরি

ইমাম আরাফি বলেন: বিদেশি প্রভাব থেকে নিজেদের ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কিছু জাতীয় অবকাঠামোগত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তবে তা এখনো যথেষ্ট নয়।
এ বিষয়ে আমাদের তাৎক্ষণিক ও মৌলিক জাগরণ প্রয়োজন-বিশেষ করে শিক্ষাব্যবস্থা ও শাসনব্যবস্থার দুই ক্ষেত্রে, যাতে বুদ্ধিমান প্রযুক্তির সঠিক ও নৈতিক ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha