শনিবার ৮ নভেম্বর ২০২৫ - ২২:২৭
আহলে বায়তের (আ.) নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সত্য অনুধাবনে ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও সহনশীলতার আহ্বান 

নাইজেরিয়ার ইসলামি আন্দোলনের নেতা আহলে বায়তের (আ.) নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সত্য সম্পর্কে সচেতনতা, ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও সহনশীলতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শোকসভা নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় নাইজেরিয়ার ইসলামি আন্দোলনের নেতা হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন সাইয়্যেদ ইব্রাহিম জাকজাকি (হাফিজাহুল্লাহ) ইমামতি ও বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি আহলে বায়ত (আ.)-এর ওপর সংঘটিত ঐতিহাসিক অন্যায় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বলেন, এই বাস্তবতাগুলি ব্যাখ্যা করতে হলে ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও সহনশীলতার প্রয়োজন।

ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর শাহাদাত ও ইতিহাসের বিকৃতি

বুধবার, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি (৫ নভেম্বর ২০২৫) রাতে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন: আমি সর্বপ্রথম নবী করিম (সা.)-এর ও তাঁর পর ঘটে যাওয়া বেদনাদায়ক ঘটনাগুলির প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাই। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তা পৌঁছেছে বিশ্বের নারীদের শ্রেষ্ঠা সাইয়্যিদা ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর শাহাদাতে।

জাকজাকি বলেন, হযরত যাহরা (সা.)-এর শাহাদাত ও তার পূর্ববর্তী ঘটনাবলি এমন এক মহাবিপদ, যা গোটা সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে, বিশেষ করে আহলে বায়তের অনুসারীদের।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনেক মানুষ এই বিপদের বিস্তারিত জানেন না, কেউ কেউ এমনকি এর বাস্তবতাকেও অস্বীকার করেন। অজ্ঞতার কারণে সমাজ তাঁকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছে — এবং এটিই আরেকটি বড় বিপদ।

ফাতিমা (সা.)-এর মর্যাদা ও ইতিহাসের অসঙ্গতি

তিনি হযরত ফাতিমা (সা.)-এর উচ্চ মর্যাদা বর্ণনা করে বলেন, নবী করিম (সা.) তাঁকে ‘জান্নাতের নারীদের নেত্রী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন — অর্থাৎ তিনি সকল মুমিন নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে, ইতিহাসে হযরতের শাহাদাতের সময় সম্পর্কে পার্থক্য রয়েছে — কেউ বলেন নবী (সা.)-এর ওফাতের ৭৫ দিন পর, কেউ বলেন ৯৫ দিন পর। এ কারণেই জমাদিউল আউয়াল ও জমাদিউস সানির উভয় মাসেই ফাতিমিয়্যা অনুষ্ঠান পালিত হয়।

ফাতিমা (সা.)-এর ওপর হওয়া জুলুম ও তার বাস্তবতা

জাকজাকি বলেন, যারা তাঁকে (ফাতিমা সা.) অত্যাচার করেছিল, তারা তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেছিল — তাদের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা ধরে রাখা। আজও কেউ কেউ সেই কাজের জন্য অজুহাত খোঁজে — অথচ ঘটনাগুলো দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।

তিনি নবী (সা.)-এর ওফাতের পর সংঘটিত ঘটনাবলির উল্লেখ করেন — যেমন:
হযরতের বাড়িতে হামলা, দরজায় আগুন দেওয়া, পাঁজরের হাড় ভেঙে ফেলা, আঘাতে গর্ভের সন্তান (মুহসিন)-এর শাহাদাত, এবং ইমাম আলী (আ.)-কে জোর করে খলিফার সঙ্গে বায়আতের নামে বন্দি করা।

তিনি বলেন, যদি এসব বাস্তবতা নিরপেক্ষভাবে অধ্যয়ন করা হয়, তবে স্পষ্ট হবে যে, এগুলো শিয়াদের বানানো কাহিনি নয়। যারা প্রশ্ন তোলে, ‘ইমাম আলী (আ.) উপস্থিত থাকলে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল’, তাদের জানা উচিত — নবী (সা.) তাঁকে ধৈর্যের وصیت (ওসিয়্যাত) করেছিলেন, যেন তিনি প্রমাণস্বরূপ মানুষের ওপর حجّت (হুজ্জত) সম্পূর্ণ করেন।

তিনি আরও যোগ করেন, ইমাম আলী (আ.)-এর ধৈর্য দুর্বলতার কারণে নয়, বরং এটি ছিল আল্লাহপ্রদত্ত এক দায়িত্ব। তাই বলা যায় না যে, তিনি নবীর নির্দেশ অমান্য করেছেন।

ফাতিমা (সা.)-এর জানাযা ও গোপন কবর

জাকজাকি বলেন, হযরত ফাতিমা (সা.)-এর ওসিয়ত অনুযায়ী, তাঁর জানাযা রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং তাঁর দাফনও গোপনে সম্পন্ন হয়। ইমাম আলী (আ.) ছয়জন সাথীসহ মোট সাতজন মিলে তাঁর জানাযার নামাজ আদায় করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, বিবিধ বর্ণনায় এসেছে, যে যাঁরা তাঁর সান্নিধ্যে ছিলেন এবং তাঁদের মাধ্যমে তাওয়াসসুল করা হয়, তাদের বরকতে আল্লাহর রহমত ও বর্ষণ নাজিল হয়।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, ফাতিমা (সা.)-এর কবরের স্থান গোপন রাখা হয়েছিল, কারণ শত্রুরা তা অবমাননা করতে চেয়েছিল। ইমাম আলী (আ.) তাঁদের এই অপচেষ্টা রোধ করতে তলোয়ার উঁচিয়েছিলেন। আজও তাঁর কবরের সঠিক স্থান অজানা, এবং কেবল তাঁর সন্তান ইমাম মাহদি (আ.জ.) তা প্রকাশ করতে পারবেন।

ইতিহাস ভুলে গেলে ধর্মও ভুলে যাবে

জাকজাকি বলেন, যদি কেউ বলে—‘এ তো অতীত ইতিহাস, তা নিয়ে ভাবার কিছু নেই’, তবে বলা যায়—‘ধর্মও ইতিহাসে পরিণত হবে’। কারণ ধর্মকে যারা বিকৃত করেছে, তাদের কারণে অতীতের ঘটনা সরাসরি ধর্মের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

 আহলে বায়তের অনুসারীদের প্রতি উপদেশ

শেষে তিনি আহলে বায়তের অনুসারীদের উদ্দেশে বলেন: আমিরুল মুমিনিন (আ.)-এর ওসিয়ত অনুযায়ী এবং শ্রোতাদের জ্ঞান অনুযায়ী, ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সঙ্গে কথা বলুন। কখনো কঠোর বা গালিগালাজপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করবেন না, কারণ এতে সত্যের বার্তা প্রভাব হারায় ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। নবী করিম (সা.) নিজেও মানুষের বোধগম্যতার স্তর অনুযায়ী আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিতেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha