বিশেষ সাক্ষাৎকার:
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
আসসালামু আলাইকুম, মাওলানা সাহেব। আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি আমাদের আজকের বিশেষ আলোচনায়, যার বিষয় “নবীবংশের গৌরবময় দীপ্তি: ফাতিমা জাহরা (সা.)-এর জীবনদর্শন”। শুরুতেই জানতে চাই—আপনার দৃষ্টিতে ফাতিমা জাহরা (সা.)-এর ব্যক্তিত্বের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কী?
মাওলানা আখতার আলী: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। ধন্যবাদ। ফাতিমা জাহরা (সা.) হচ্ছেন এমন এক মহীয়সী নারী, যিনি শুধু নারীর শ্রেষ্ঠ উদাহরণই নন, বরং মানবতার পূর্ণতা ও নৈতিকতার প্রতীক। তাঁর জীবনধারা ছিল ত্যাগ, বিনয়, ঈমান ও সত্যনিষ্ঠার অনন্য সমন্বয়। তিনি নবুওয়াতের ঘরে জন্ম নিয়ে ইমামতের জননী হন—যা ইসলামের ইতিহাসে এক অলৌকিক ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছে।
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
বলা হয়, ফাতিমা (সা.) ছিলেন নবী করিম (সা.)-এর “হৃদয়ের অংশ”। এ কথার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য কীভাবে বোঝা যায়?
মাওলানা আখতার আলী: খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নবী (সা.) বলেছেন, “ফাতিমা আমার হৃদয়ের অংশ; যে তাঁকে কষ্ট দেয়, সে আমাকে কষ্ট দেয়।” এই বাণী শুধু পারিবারিক ভালোবাসার প্রকাশ নয়—বরং আধ্যাত্মিক সত্যের ইঙ্গিত। ফাতিমা (সা.)-এর চরিত্র, আচার-ব্যবহার ও আত্মসংযম এতটাই নবীসুলভ ছিল যে, তিনি নবুয়াতের সত্য বার্তাকে নারীজীবনে বাস্তব রূপ দিয়েছেন। তাঁর মাধ্যমে নবী (সা.)-এর মিশন ঘরোয়া ও সামাজিক জীবনে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
ফাতিমা (সা.)-এর জীবন আমাদের বর্তমান সমাজে নারীদের জন্য কী শিক্ষা দেয় বলে আপনি মনে করেন?
মাওলানা আখতার আলী: ফাতিমা (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, মর্যাদা ও নেতৃত্ব জ্ঞানে, বিশ্বাসে ও চরিত্রে নিহিত—বাহ্যিক ক্ষমতায় নয়। তিনি ছিলেন আদর্শ স্ত্রী, মমতাময়ী মা, সমাজসচেতন নারী ও এক সাহসী কণ্ঠস্বর। আজকের যুগে নারী যদি তাঁর শিক্ষাকে অনুসরণ করে—তবে সে ধর্মীয় জ্ঞান, পারিবারিক ভারসাম্য ও সামাজিক ন্যায়বোধের মেলবন্ধন ঘটাতে পারবে।
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
তাঁর নামের সাথে প্রায়ই “জাহরা”—অর্থাৎ দীপ্তিময়া—বিশেষণটি যুক্ত থাকে। এই দীপ্তির অর্থ কীভাবে বোঝা যায়?
মাওলানা আখতার আলী: “জাহরা” মানে আলোকিত বা দীপ্তিময়। তাঁর দীপ্তি ছিল আত্মিক আলো—যে আলো জ্ঞান, ত্যাগ, ইমান ও ন্যায়বোধের উৎস। নবী (সা.)-এর ঘরে যে আলোর সূচনা হয়েছিল, তা ফাতিমা (সা.)-এর চরিত্রে বিকশিত হয়ে মানবতার দিশা দিয়েছে। তাই তাঁকে বলা হয় “নববংশের গৌরবময় দীপ্তি”।
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
সর্বশেষে জানতে চাই, আমাদের সমাজে ফাতিমা (সা.)-এর জীবনদর্শন বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা কতটা জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
মাওলানা আখতার আলী: আজকের বিভ্রান্ত সময়ে ফাতিমা (সা.)-এর জীবনদর্শনই হতে পারে নৈতিক পুনর্জাগরণের মাপকাঠি। তাঁর শিক্ষা আমাদের শেখায়—আল্লাহভীতি, ন্যায়, বিনয় ও দায়িত্ববোধই প্রকৃত উন্নতির পথ। সমাজে যদি এই মূল্যবোধগুলো পুনরুজ্জীবিত হয়, তবে মানবতা আবার দীপ্ত হয়ে উঠবে নববংশের সেই গৌরবময় আলোকধারায়।
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
অসাধারণ আলোচনা, মাওলানা সাহেব। আপনার সময় ও মূল্যবান মতামতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
মাওলানা আখতার আলী: আপনাকেও ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ফাতিমা জাহরা (সা.)-এর শিক্ষার আলোয় চলার তাওফিক দান করুন।
আপনার কমেন্ট