হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামের প্রারম্ভিক ইতিহাসে হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) এমন এক মহীয়সী ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবন ও আচরণ মুসলিম উম্মাহর কাছে চিরকালই অনুকরণীয়। তিনি শুধু নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যাই নন, বরং ঈমান, নৈতিকতা ও মানবিকতার এক অপূর্ব প্রতীক। তাঁর বাণী, আচরণ ও সংকল্পে ফুটে ওঠে ইসলামের সৌন্দর্য ও সত্যের প্রতি অবিচল আনুগত্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর জীবনের শেষ কয়েক মাস ইতিহাসে এক গভীর বেদনাবিধুর অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে।
সহীহ বুখারীর কিতাবুল মাগাযীর বর্ণনা অনুযায়ী, ফাদাক ও উত্তরাধিকার-সংক্রান্ত ঘটনাবলির পর হযরত ফাতিমা (সা.)-এর মনে গভীর কষ্ট ও অসন্তোষ জন্মেছিল। বর্ণিত আছে যে তাঁর মালিকানাধীন কিছু সম্পদের বিষয়ে নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা তাঁকে গভীরভাবে আহত করে। এই প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে:
“فَوَجَدَتْ فَاطِمَةُ عَلَى أَبِي بَكْرٍ فِي ذَلِكَ فَهَجَرَتْهُ”
অর্থাৎ এই ঘটনার কারণে হযরত ফাতিমা (সা.) আবু বকরের প্রতি ক্ষুব্ধ হলেন এবং তাঁকে বর্জন করলেন।
বুখারীর বর্ণনায় আরও এসেছে:
“فَلَمْ تُكَلِّمْهُ حَتَّى تُوُفِّيَتْ”
অর্থাৎ তিনি মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে আর কথা বলেননি।
ইতিহাসে জানা যায়, নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত ফাতিমা (সা.) মাত্র তিন থেকে ছয় মাস জীবিত ছিলেন। এ সংক্ষিপ্ত সময়টি ছিল অসীম বেদনা ও আঘাতে পূর্ণ। তাঁর ইন্তেকালের পর হযরত আলী (আ.) রাত্রিবেলা তাঁর দাফন সম্পন্ন করেন, এবং বর্ণনায় আছে:
“وَلَمْ يُؤْذِنْ بِهَا أَبَا بَكْرٍ”
অর্থাৎ তিনি আবু বকরকে দাফনের পূর্বে সংবাদও দেননি।
এবং আরও বলা হয়েছে:
“وَصَلَّى عَلَيْهَا”
অর্থাৎ হযরত আলী (আ.)-ই তাঁর জানাজা পরিচালনা করেন।
এই ধারাবাহিক বিবরণ থেকে বোঝা যায়—বিষয়টি কোনো ক্ষণিক আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং এটি ছিল ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত এক বাস্তবতা। কারণ, সহীহ বুখারীর আরেক স্থানে পাওয়া যায়:
“فَهَجَرَتْ أَبَا بَكْرٍ، فَلَمْ تَزَلْ مُهَاجِرَتُهُ حَتّى تُوُفِّيَتْ”
অর্থাৎ—তিনি আবু বকরের প্রতি বর্জন বজায় রেখেছিলেন, এবং তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
কখনও কেউ কেউ দাবি করেন যে “তাঁর কথা না বলা” বলতে বুঝায় বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে বা তিনি রাগ পরিত্যাগ করেছেন। কিন্তু হাদিসের মূল প্রেক্ষাপট অত্যন্ত স্পষ্ট—প্রথমে ছিল ক্রোধ, তারপর ছিল বিচ্ছিন্নতা, এবং এরপর ছিল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যোগাযোগহীনতা। এটি একটি ধারাবাহিক ও ঐতিহাসিক সত্য, যা সহীহ বুখারীর নির্ভরযোগ্য বর্ণনাতেই সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ।
হযরত ফাতিমা যাহরার (সা.) এই বেদনার অধ্যায় শুধু ইতিহাসের একটি তথ্য নয়; এটি আমাদের শিখিয়ে দেয় যে সত্য, ন্যায় এবং অধিকার—এসবই ইসলামে গভীর মর্যাদাপূর্ণ মূল্যবোধ। নবী (সা.)-এর ঘরের মানুষরাও এসব নীতির প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন। তাই তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো ইসলামি ইতিহাসে একটি নৈতিক উদাহরণ ও শিক্ষণীয় আলোকস্তম্ভ হয়ে আছে।
রিপোর্ট: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট