মঙ্গলবার ১৮ নভেম্বর ২০২৫ - ২০:০৩
ইসলামী বিপ্লবের প্রকৃতি মশরুতে আন্দোলন ও অনুরূপ অন্যান্য আন্দোলনের থেকে ভিন্ন

দেশের হাওজাগুলোর পরিচালক বলেন: আশুরার সকাল—দশই মোহাররম—সেদিন জয়ের কোনো আশা ছিল না; না কোনো উপযুক্ত উপকরণ, না তুলনাযোগ্য শক্তি, না সমান পরিস্থিতি। তবে ইমাম হুসাইন (আ.) সামরিক নীতিমালা অনুযায়ী তাঁর বাহিনীকে সাজিয়েছিলেন। এটিই হলো আশা। ইসলামী বিপ্লবও একই ঐতিহ্যে শেকড় গেড়েছে এবং এর প্রকৃতি মশরুতে আন্দোলন ও অন্য অনুরূপ আন্দোলনগুলোর থেকে আলাদা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের হাওজাগুলোর পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলীরেজা আরাফি, হুজ্জতুল ইসলাম ওয়াল-মুসলিমীন মন্তাজেরি—স্বাধীন ইমাম সাদিক (আ.) ব্রিগেডের কমান্ডার—এর সঙ্গে সাক্ষাতে ফাতেমিয়া দিনের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এবং এই ব্রিগেডের ব্যাপক ও ফলপ্রসূ কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন যে তাঁদের হাউজাভিত্তিক ও বিপ্লবী কার্যক্রমের একটি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।

হাওজার পরিচালক ইমাম সাদিক (আ.) ব্রিগেডের ঐতিহাসিক ও স্থায়ী ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন: একজন তালেবুলইলম ও হাওজার পক্ষ থেকে আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ—আপনারা এই ব্রিগেডে, বিপ্লব ও হাওজার সেবায় যে কাজ, চেষ্টা ও মুজাহিদা করছেন, তার জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই ও সাফল্য কামনা করি।

তিনি আরও বলেন: বিশেষভাবে কয়েকটি বিষয়ে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি; এর একটি হলো তালেবাদের প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজনের ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা—যা অত্যন্ত কঠিন ও সংবেদনশীল একটি কাজ। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও হাওজাভিত্তিক-বিপ্লবী শ্লোগানসমূহে আপনাদের উপস্থিতিও প্রশংসনীয়।

হযরত ফাতিমা (সা.)-এর ঐতিহাসিক স্থান ও তাঁর কৌশলগত শিক্ষার বিশ্লেষণ

আয়াতুল্লাহ আরাফি হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.)-এর বিস্তৃত ব্যক্তিত্বগত দিকগুলো বিশ্লেষণ করে বলেন: জ্ঞান, ইস্মত, ইবাদত, আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা, গৃহ ব্যবস্থাপনা, পরিবারের তদবির এবং সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড—সবদিক থেকেই হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.) বিশ্ব-নারী ও পুরুষ সবার জন্য অসাধারণ আদর্শ।

তিনি হযরত ফাতিমা (সা.), হযরত খাদিজা (সা.) ও হযরত জয়নব (সা.)-এর সাধারণ বৈশিষ্ট্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন: এই তিন মহান ব্যক্তিত্ব ইতিহাসের কঠিনতম মোড়ে এবং অস্বাভাবিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিশাল কাজ সম্পাদন করেছেন। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হযরত ফাতিমা (সা.)-এর কাজ। কারণ, তখন মদীনা হঠাৎ ভেঙে পড়েছিল, নববী সমাজের সব নীতিমালা পদদলিত হয়েছিল—এমন গভীর নিঃসঙ্গতা ও অত্যাচারের মধ্যেও তিনি সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

আয়াতুল্লাহ আরাফি খুতবা ফাদাকিয়া বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন: খুতবা ফাদাকিয়ায় হযরত ফাতিমা (সা.) মদীনা সমাজের সমাজতাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন—কীভাবে নবী (সা.)-এর সান্নিধ্যে গড়ে ওঠা একটি বিপ্লবী সমাজ হঠাৎ উল্টো রূপ নিল এবং একটি বাতিলপন্থী সংখ্যালঘু সমাজের কর্তৃত্ব দখল করল। আর সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল: একদল বিভ্রান্ত, একদল আতঙ্কগ্রস্ত, আরেকদল লোভে অন্ধ। এই তিন অস্ত্রই মূল্যবোধ পতনের ভিত্তি তৈরি করল।

হাওজার পরিচালক আরও বলেন: এমন পরিস্থিতিতেই হযরত ফাতিমা (সা.) উঠে দাঁড়ালেন, হকের পতাকা উঁচিয়ে ধরলেন এবং এমন একটি আন্দোলন শুরু করলেন যা কেবল তাঁর সময়ের জন্য নয়, ইতিহাস ও ভবিষ্যতকে সামনে রেখে পরিচালিত হয়েছিল। দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, তিনি বাহ্যিক দিক থেকেও বিজয়ী।

হাওজার উচ্চ পরিষদের সদস্য বলেন: এই গভীর বোধ, কৌশলগত দৃষ্টি, হতাশার সময়ে ভূমিকা রাখা, সংকট ব্যবস্থাপনা, চ্যালেঞ্জে নেতৃত্ব দান এবং কোনো সঙ্গী না থাকলেও দৃঢ় থাকা—এসবই হযরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবনের মূল শিক্ষা। এবং ইসলামী বিপ্লবও এসব শিক্ষার ভিত্তিতেই উদ্ভূত হয়েছে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha