বৃহস্পতিবার ২০ নভেম্বর ২০২৫ - ১১:৫৬
বর্তমানে বড় সমস্যা হলো—অনেকে সুস্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য উৎস ছাড়াই কথা বলেন

ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমের হাওজায়ে ইলমিয়ার শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ হাশিম হুসেইনি বুশেহরি বলেন, আজকের সমাজে ভিত্তিহীন ও অযাচাইকৃত বক্তব্যের প্রসার গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করেছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ হুসেইনি বুশেহরির মতে, প্রকৃত ধর্মীয় বক্তব্য অবশ্যই কুরআন ও নবী–পরিবারের নির্ভরযোগ্য শিক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

ফাতিমা (সা.আ.)–এর শাহাদাত নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো
তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)–এর শাহাদাত–সংক্রান্ত বাস্তব ঘটনা নিয়ে নানা ভুল ধারণা ছড়ানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ইমাম সাদিক (আ.)–এর কথা উল্লেখ করেন: “নিশ্চয়ই ফাতিমা (সা.) সত্যবাদী ও শহীদ।”

দ্বীনের প্রচার–প্রসার মানে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা
তার বক্তব্যে তিনি বলেন, আসল ধর্মীয় প্রচার হলো মানুষকে আল্লাহর দিকে ফেরানো এবং তাদের ঐশী পথে পরিচালিত করা। আহলে বাইতের (আ.) গুণাবলি ও শিক্ষার ব্যাখ্যাও এই দিক–নির্দেশনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ধর্মীয় প্রচার কাজ সহজ নয়
তিনি মনে করিয়ে দেন, দ্বীনের প্রচার কাজকে অনেকেই সাধারণ কাজ ভাবেন; কিন্তু বাস্তবে এটি অত্যন্ত কঠিন দায়িত্ব। তিনি নবী মূসা (আ.)–এর দোয়াকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন, যা প্রমাণ করে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া এ দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়।

বক্তব্য মানুষের বোধগম্য হওয়া জরুরি
তার মতে, ধর্মীয় বার্তার মূল লক্ষ্য হলো মানুষ যেন তা বুঝতে পারে, গ্রহণ করতে পারে এবং হৃদয়ে ধারণ করতে পারে। কঠিন কথা মানুষকে দ্বীনের উপকার করে না।

মুখস্থ বয়ান নয়, গভীর উপলব্ধিই প্রয়োজন
তিনি বলেন, শুধু মুখস্থ বক্তব্য দিয়ে কাউকে প্রভাবিত করা যায় না। কুরআনে নবীকে যে মানসিক প্রশান্তি দান করার কথা বলা হয়েছে, তা প্রচারকের জন্য ধৈর্য, স্থিরতা ও গভীর উপলব্ধির প্রয়োজনীয়তা বোঝায়।

ধৈর্যশীল না হলে প্রকৃত প্রচারক হওয়া যায় না
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, অধৈর্য ও সহজে রেগে যাওয়া মানুষ সফল মুবাল্লিগ হতে পারে না। কারণ অনেক শ্রোতা ধর্মীয় বিষয়ে অপরিচিত থাকে; তাদের ধীরে ধীরে সহনশীলতার সঙ্গে পথ দেখাতে হয়।

ধর্মীয় প্রচার সব যুগেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব
তিনি কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যারা আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দেয়—তারা সব যুগেই একই দায়িত্ব বহন করে। সময় বদলালেও এই দায়িত্ব থেকে কেউ অব্যাহতি পায় না।

মুবাল্লিগ আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না
তার মতে, প্রকৃত মুবাল্লিগ বাধা–বিপত্তিকে ভয় পায় না; সে শুধু আল্লাহকে সমীহ করে এবং তার প্রতিদানও আল্লাহর কাছ থেকেই প্রত্যাশা করে।

আন্তরিকতা মুবাল্লিগের মূল শক্তি
তিনি বলেন, যদি প্রচারকের উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি, তবে কঠিন সময়েও আল্লাহ তার সহায় হবেন। কিন্তু অহংকার বা আত্মনির্ভরতার ভান তাকে সাফল্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

ব্যক্তিগত মত নয়—বিশুদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষা তুলে ধরা প্রচারকের কাজ
তিনি বলেন, প্রচারকের কাজ হলো বিশ্বাস, ইবাদত, নৈতিকতা ও সামাজিক আচরণ–সংক্রান্ত ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ব্যক্তিগত মত বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়।

অজ্ঞতাপূর্ণ মন্তব্য করা ধর্মীয় দায়িত্বের পরিপন্থী
তিনি সতর্ক করে বলেন, যাচাই-বাছাই ও সূত্র বিহীন বক্তব্য আজ সমাজের একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রচারকের উচিত গবেষণা ছাড়া কিছু না বলা।

জ্ঞানপূর্ণ প্রচার অপরিহার্য
ইমাম আলী (আ.)–এর বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, প্রচারকের উচিত হালাল–হারাম ও ধর্মীয় বিধানসমূহ ভালোভাবে জানা। জ্ঞানে পূর্ণতা অর্জন না হলেও শেখার প্রক্রিয়ায় থাকা অপরিহার্য।

ভুল বক্তব্য মানুষের জন্য ক্ষতিকর
তিনি বলেন, সঠিক বক্তব্য যেমন মানুষের উপকার করে, তেমনি ভুল বক্তব্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই প্রচারকের উচিত কথার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকা।

আল্লাহর মহিমা উপলব্ধিই প্রকৃত ভক্তি
তিনি ব্যাখ্যা করেন, প্রকৃত ভক্তি হলো আল্লাহর শাস্তিকে ভয় পাওয়া নয়; বরং তাঁর মহিমাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।

শ্রোতার প্রতিক্রিয়া জানা গুরুত্বপূর্ণ
তিনি বলেন, মুবাল্লিগরা যেন প্রতিবার বক্তব্য শেষে আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের মতামত শোনেন—যাতে পরবর্তী বক্তৃতায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে পারেন।

শ্রোতাকে না জানলে প্রচার সফল হয় না
শেষে তিনি বলেন, আজকের শ্রোতা ও শিক্ষার্থীদের মানসিকতা বদলেছে; তাই তাদের অবস্থান, প্রয়োজন ও মানসিক কাঠামো বুঝে প্রচারের পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha