বৃহস্পতিবার ২০ নভেম্বর ২০২৫ - ১২:১৫
হযরত আবদুল মুত্তালিব (আ.)-জাহেলিয়াতের যুগে তাওহিদ ও আল্লাহর সুন্নতের পতাকাবাহী ছিলেন

হযরত মাসুমা (সা.আ.)–এর পবিত্র মাজারে ভাষণ দিতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ রেজা মীরমইনি বলেন, জাহেলিয়াতের যুগে হযরত আবদুল মুত্তালিব (আ.) শিরক ও ফাসাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, সামাজিক বিধান পুনরুজ্জীবন এবং শত্রুদের আক্রমণের মুখে অবিচল থাকার মাধ্যমে আরব সমাজকে বিশুদ্ধ তাওহিদী ফিতরতের দিকে পরিচালিত করেছিলেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কোম শহরে হযরত মাসুমা (সা.)–এর পবিত্র হারামে বার্ষিক শোকসভা উপলক্ষে হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ রেজা মীরমইনি হযরত আবদুল মুত্তালিব (আ.)–এর ওফাতের উপলক্ষ কেন্দ্র করে ভাষণ দিতে গিয়ে তাঁকে ইসলামের ইতিহাসের সেই মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন, যিনি জাহেলিয়াতের অন্ধকারে তাওহিদ ও আল্লাহর সুন্নতকে পুনর্জীবিত করেছিলেন। তিনি বলেন, হযরত আবদুল মুত্তালিব (আ.) কেবল বনী হাশিমের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, বরং তাওহিদের প্রকৃত রক্ষকও ছিলেন।

তিনি বনী হাশিমের পূর্বপুরুষ হাশিমের জীবনীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, হাশিমের দূরদৃষ্টি, উদারতা এবং উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক দক্ষতা হিজাজের আরব সমাজে সম্মান ও অগ্রগতির ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যার ধারাবাহিকতা হযরত আবদুল মুত্তালিব (আ.)–এর যুগে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

হুজ্জাতুল ইসলাম মীরমইনি বনী হাশিম ও বনী উমাইয়ার ঐতিহাসিক পার্থক্য কুরআনের আলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, কুরআন কারীম বনী হাশিমকে “শাজারায়ে তয়্যেবা” (পবিত্র বৃক্ষ) এবং বনী উমাইয়াকে “শাজারায়ে খাবিসা” (অশুভ বৃক্ষ) হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা উভয় গোত্রের প্রকৃত চরিত্র ও আদর্শিক ভিত্তিকে পরিষ্কার করে তুলে ধরে।

তিনি রেওয়ায়াতের ভিত্তিতে নূর–এ–ওলায়াত স্থানান্তরের ধারার কথাও উল্লেখ করে বলেন, মহানবী (সা.) ও আমীরুল মুমিনীন (আ.)–এর নূর তাওহিদপন্থী ধারার মধ্য দিয়ে চলমান ছিল এবং হযরত আবদুল মুত্তালিব (আ.)–এর কাছে এসে দুই শাখায়—হযরত আব্দুল্লাহ এবং হযরত আবু তালিব—বিভক্ত হয়।

ভাষণে এ কথাও জোর দিয়ে বলা হয় যে, হযরত আবদুল মুত্তালিব (আ.)–এর প্রশিক্ষণ এমন সন্তানদের গড়ে তোলে যারা ইসলামের ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছিলেন—যেমন হযরত আব্দুল্লাহ, হযরত আবু তালিব, হযরত হামজা ও হযরত আব্বাস। তিনি জমজম কূপ পুনরুদ্ধারকে আল্লাহর ইলহামের ফল বলে বর্ণনা করে বলেন যে, এর বরকত আজও অব্যাহত আছে।

হুজ্জাতুল ইসলাম মীরমইনি আবরাহার ঘটনা (হাতির বাহিনী) প্রসঙ্গে বলেন, হযরত আবদুল মুত্তালিব (আ.)–এর তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভরতা) এবং দৃঢ়তাই ছিল সেই কারণ, যা হাতির বাহিনীর ধ্বংস নিশ্চিত করে। একইভাবে জাহেলিয়াতের যুগে তিনি মদপান নিষিদ্ধ করা, কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া থেকে বিরত রাখা, হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা এবং তাওয়াফের সময় দেহে পোশাক বাধ্যতামূলক করার মতো বিধান প্রবর্তন করেছিলেন—যা পরবর্তীতে ইসলামি শরিয়তের অংশ হয়ে যায়।

শেষে তিনি সতর্ক করে বলেন যে, আজকের যুবসমাজ নানা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। গর্ভপাত (abortion) এবং জনসংখ্যা হ্রাসের সংকটকে ইসলাম–বিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং সমাজকে এসব নৈতিক ও সামাজিক ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে আলেম ও অভিভাবকদের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha