হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ সাঈদী, কুদস মসজিদে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজে খতিব হিসেবে উপস্থিত হয়ে, হযরত ফাতেমা জাহরা (সা.আ.)-এর শাহাদাতের দিনগুলোতে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং সিদ্দীকা কুবরা (সা.আ.)-এর বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
কোমের ইমাম জুমা ফাতেমিয়া মক্তবের অনন্য ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে বলেন যে, ইতিহাসে সকল ঐশী ও ন্যায়নিষ্ঠ আন্দোলনের মূল কাঠামো, দিকনির্দেশনা এবং চিন্তাধারার উৎস হলো এই মক্তব, যা বিশ্বব্যাপী জাতিগুলোর জাগরণের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।
হযরত জাহরা (সা.আ.)-কে সঠিকভাবে পরিচয় করানোর প্রয়োজনীয়তা
আয়াতুল্লাহ সাঈদী, আহলে বায়ত (আ.)-এর সুস্পষ্ট তাগিদের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, সমাজের সামনে হযরত জাহরা (সা.আ.)-কে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা অপরিহার্য। ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তিনি, এবং কারবালার আন্দোলন গঠনে তাঁর শিক্ষার ভূমিকা ছিল মৌলিক।
ফাতেমিয়া মক্তব ও কারবালার আন্দোলন
তিনি বলেন: আজ যদি আমরা আশুরার মহাকাব্যের কথা বলি, তবে জানা উচিত যে ফাতেমিয়া মক্তবে লালিত-গঠিত ব্যক্তিত্ব—ইমাম হুসাইন (আ.) ও হযরত জয়নাব (সা.আ.)—ছিলেন এই ঐশী বার্তার বাহক। ফাতেমিয়া শিক্ষা ছাড়া আশুরার আন্দোলন জন্ম নিত না এবং ইতিহাসে সত্য-অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতা টিকে থাকত না।
কোমের জুমার খতিব আরও বলেন: বিশ্বের বহু মুক্তি-আন্দোলন আশুরা থেকে প্রেরণা নিয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর মতো নেতারাও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পাঠ শিখেছেন—এটিও ফাতেমিয়া আন্দোলনের এক প্রতিফলন।
হযরত জাহরা (সা.আ.)-এর মর্যাদা ও স্থান
আয়াতুল্লাহ সাঈদী বহু রেওয়ায়াতের ভিত্তিতে হযরত জাহরা (সা.আ.)-এর অনন্য স্থান ব্যাখ্যা করে বলেন: ইমাম হাসান আসকারি (আ.)-এর বাণী অনুযায়ী, হযরত জাহরা (সা.আ.) হলেন ঈশ্বরীয় প্রমাণসমূহের ওপর ঈশ্বরের প্রমাণ—যা প্রমাণ করে যে আহলে বায়ত (আ.)-এর ২৫০ বছরের ইমামত তাঁর দিকনির্দেশনার পথেই পরিচালিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শাইখ তূসির বর্ণিত একটি রেওয়ায়াতে ইমাম মাহদি (আ.) ফাতেমা জাহরা (সা.আ.)-কে গায়েবত ও জুহূরের যুগে চিরন্তন আদর্শ হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন—যা সব যুগের জন্য তাঁর ব্যক্তিত্বের পূর্ণতা প্রমাণ করে।
কোমের ইমাম জুমা ইমাম সাদিক (আ.)-এর হযরত জাহরা (সা.আ.)-এর সততা ও পবিত্রতা সম্পর্কিত হাদিস উল্লেখ করে বলেন: তাঁর ‘সিদ্দীকা’ হওয়া মানে তাঁর চিন্তা, কথা ও আচরণের পরিপূর্ণ সমন্বয়—যা শুধুমাত্র আল্লাহর বান্দেগির সত্যতার সাথে মিলিত। এই মহান সত্য যুগ যুগ ধরে মানবসভ্যতাকে আলোকিত পথে পরিচালিত করেছে।
আয়াতুল্লাহ সাঈদী হযরত জাহরা (সা.আ.)-এর জিয়ারতের একটি অংশ উল্লেখ করে বলেন: আল্লাহ এই মহীয়সী নারীর নির্বাচিত ও পরীক্ষিত মর্যাদা সম্পর্কে অবগত—এই স্থান তাঁর আধ্যাত্মিক মহানত্ব ও মানবতার পথনির্দেশে তাঁর নির্ণায়ক ভূমিকার প্রমাণ।
তিনি বলেন: রেওয়ায়াতে এসেছে যে কিয়ামতের দিনে ইমাম মাহদি (আ.)-এর সৈন্যদলকে “ফাতেমি বাহিনী” বলা হবে—যার শেকড় ফাতেমি জীবনধারায়, যা ঈমান, ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও মমত্ববোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
আপনার কমেন্ট