বিশেষ সাক্ষাত্কার:
হজরত ফাতিমা (সা. আ.)—নবী করিম (সা.)-এর প্রিয় কন্যা, পবিত্র আহলে বাইতের আলোকিত নক্ষত্র এবং নারীজগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের অন্যতম। তাঁর জীবন ছিল ত্যাগ, ইমান, ধৈর্য ও নৈতিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু ইতিহাসের এক করুণ অধ্যায়ে তাঁর শাহাদাত মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে আজও গভীর বেদনা হয়ে প্রতিধ্বনিত হয়। এই দিন শুধু শোকের নয়; বরং আত্মসমালোচনার, ঐক্যের এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পুনরায় করার দিন।
যেখানে বিভাজন, সংঘাত ও মতপার্থক্য আজ উম্মাহকে দুর্বল করে দিচ্ছে, সেখানে হজরত ফাতিমা (সা.)-এর চরিত্র ও আদর্শ আমাদের শেখায়—ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিক মূল্যবোধই মুসলমানদের প্রকৃত শক্তি। তাঁর জীবন আমাদের আহ্বান জানায়: সত্যের পথে দৃঢ় থাকা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পতাকা উঁচু রাখা এবং সবচেয়ে বড় কথা, একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানের সেতুবন্ধন গড়ে তোলা।
তাই শাহাদাত দিবসের এই উপলক্ষ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—উম্মাহ যদি ফাতিমার (সা.) নৈতিকতা ও আদর্শকে ধারণ করে, তবে বিভেদের অন্ধকার দূর হয়ে মুসলিম জাতি আবারও ঐক্যের আলোয় আলোকিত হতে পারে।
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, আশা করি আপনি ভালো আছেন, এবং আজকে আমাদের সাথে সময় দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মাওলানা সাহেব, হজরত ফাতিমা (সা. আ.)-এর শাহাদাত দিবস মুসলিম উম্মাহর জন্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
মাওলানা ইব্রাহিম খালিল রিজভী:
ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আপনাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই।
হজরত ফাতিমা (সা. আ.) শুধু রাসুলে আকরাম (সা.)-এর প্রিয় কন্যাই নন, তিনি ইসলামি ইতিহাসে নারীর মর্যাদা, ত্যাগ, শিষ্টাচার ও ঈমানের এক অনন্য প্রতীক। তাঁর শাহাদাত ইসলামের ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এই দিন আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়—ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা ও উম্মাহর সংহতি বজায় রাখা কত জরুরি। তাই এই দিবস মুসলমানদের জন্য আত্মসমালোচনা ও ঐক্যের এক বড় উপলক্ষ।
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
বর্তমান বিশ্বে মুসলিম উম্মাহ নানা বিভেদে জর্জরিত। হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবন থেকে কীভাবে ঐক্যের শিক্ষা পাওয়া যায়?
মাওলানা ইব্রাহিম খালিল রিজভী:
হজরত ফাতিমা (সা. আ.)-এর জীবনের অন্যতম শিক্ষা হলো—সংঘাতের মধ্যেও নৈতিক দৃঢ়তা ও ঈমানি মূল্যবোধ ধরে রাখা।
তিনি কখনো ব্যক্তিগত আঘাতকে কেন্দ্র করে উম্মাহকে বিভাজনের পথে ঠেলে দেননি; বরং সত্যকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উম্মাহর কল্যাণের কথা ভেবেছেন।
আজ আমাদের উচিত—
মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে শত্রুতা নয়, বরং আলোচনা-সংলাপকে গুরুত্ব দেওয়া,
ব্যক্তিত্ব ও মাযহাবকে সম্মান জানিয়ে ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা,
এবং ইসলামের মূলনীতি—ন্যায়, দয়া ও সত্য—এসবকে কেন্দ্র করে ঐক্য স্থাপন করা।
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
অনেকে মনে করেন, ঐতিহাসিক ক্ষতগুলোই বিভেদের মূল কারণ। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
মাওলানা ইব্রাহিম খালিল রিজভী:
ঐতিহাসিক ঘটনা অস্বীকার করা যায় না, আবার সেগুলোকে ঘৃণা ও বিভেদ তৈরির অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা উচিত নয়। ইতিহাস শিক্ষা দেয়, বিভেদ জাতিকে দুর্বল করে, আর ঐক্য জাতিকে শক্তিশালী করে।
হজরত ফাতিমা (সা. আ.) আমাদের শিখিয়েছেন—যে কোনো ধরনের অবিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে, কিন্তু তা করতে হবে ন্যায়পরায়ণতা ও পরমুভাবনায়।
আজ আমাদের কাজ হলো—
অতীতের শিক্ষাকে সম্মান করা,
এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ, শান্তিপূর্ণ মুসলিম উম্মাহ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো।
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
শাহাদাত দিবসে উম্মাহর জন্য আপনার মূল বার্তা কী?
মাওলানা ইব্রাহিম খালিল রিজভী:
আমার বার্তা খুবই সংক্ষিপ্ত—
হজরত ফাতিমা (সা. আ.)-এর নৈতিকতা, ন্যায়বোধ, ধৈর্য ও মানবতার আদর্শকে ধারণ করে মুসলিম উম্মাহ আবারও এক পথে ফিরুক।
এই দুঃখময় দিনে আমরা যেন—
জোরে নয়, নরম কণ্ঠে কথা বলা শিখি,
বিভেদ নয়, ঐক্যকে অগ্রাধিকার দিই,
ঘৃণা নয়, ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দিই,
এবং নিজেদের আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করি।
ফাতিমার (সা. আ.) পথ হলো—একতা, ন্যায়, মর্যাদা ও আলোর পথ।
উম্মাহ যদি এই পথে চলে, তাহলে আল্লাহর রহমত ও বরকত আমাদের দিকে ফিরে আসবে।
হাওজা নিউজ এজেন্সি:
আপনার মূল্যবান সময় এবং গভীর অন্তর্দৃষ্টি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, মাওলানা সাহেব।
মাওলানা ইব্রাহিম খালিল রিজভী:
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করি—উম্মাহর মাঝে শান্তি, ঐক্য ও প্রেম প্রতিষ্ঠিত হোক।
আপনার কমেন্ট