সোমবার ২৪ নভেম্বর ২০২৫ - ২১:৪৩
হযরত ফাতিমার (সা.আ.) শাহাদাত দিবস

 আজ মহানবীর (সাঃ) আহলুল বাইতের (আ) কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বর্ণনানুযায়ী ৩ জুমাদাস সানিয়া ( জমাদিউসসানী) হযরত ফাতিমার শাহাদাত দিবস।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 
 আজ মহানবীর (সাঃ) আহলুল বাইতের (আ) কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বর্ণনানুযায়ী ৩ জুমাদাস সানিয়া ( জমাদিউসসানী) হযরত ফাতিমার শাহাদাত দিবস।একাদশ হিজরীর এই দিনে (৩ জুমাদাস সনিয়া) তিনি এ ধরণী ছেড়ে চলে যান এবং হযরত রাসূলুল্লাহর (সা) ওফাতের পর আহলুল বাইতের (আ) মধ্য থেকে হযরত ফাতিমা (আ) ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি মহানবীর (সাঃ) সাথে মিলিত হন।
হযরত ফাতিমার (আ) শাহাদাত উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক শোক,সমবেদনা ও তাসলিয়াত।
হযরত ফাতিমা (আ) শৈশব থেকেই ছিলেন সত্যের প্রহরী,সত্যের রক্ষক ও সত্য সমর্থনকারী। অত্যন্ত সংকট জনক ও বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে মহানবীর (সাঃ) প্রতি মক্কার কাফির-মশরিকদের চরম অবমাননা,বেয়াদবী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি (আ) স্বীয় পিতার (সা) পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। নিম্নোক্ত হাদীসটি এর প্রমাণ:
 হযরত আবূ তালিবের ওফাতের পর যখন মহানবীর (সাঃ) প্রতি কুরাইশদের শত্রুতা তীব্র হয় তখন হযরত ফাতিমা (আ) মুশরিক নাদান অজ্ঞ কুরাইশদের ষড়যন্ত্র ও নির্যাতনের মুকাবেলায় স্বীয় পিতা হযরত রাসূলুল্লাহর (সা) পক্ষে দাঁড়াতেন (এবং তাঁকে রক্ষা ও সমর্থন করতেন)। একদিন যখন মহানবী (সাঃ) পবিত্র কা'বা প্রাঙ্গণে সিজদারত ছিলেন তখন কতিপয় কুরাইশ যারা মহানবীর (সাঃ) মাথায় উটের নাড়িভুঁড়ি ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেই সিদ্ধান্ত মাফিক তারা (কুরাইশ) একটা উটের নাড়িভুঁড়ি এনে মহানবীর (সাঃ) মাথার ওপর ফেলে। আর ঠিক ঐ সময় শিশু হযরত ফাতিমা (আ)
কাঁদতে কাঁদতে (ছুটে এসে) স্বীয় পিতা হযরত রাসূলুল্লাহর (সা) পবিত্র মাথা থেকে ঐ নাড়িভুঁড়ি উঠিয়ে এনে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেন।" (দ্রঃ ইহকাকুল হাক্ক,খণ্ড:২৫,পৃ:২৮৯; শারহে নাহজুল বালাগাহ্,খ:৬,পৃ:৭৮২)
হযরত ফাতিমা (আ) একটি হাদীসে বলেছেন:
হে রাসূলাল্লাহ (সা)! সালমান আমার পোশাক (১২তালি বিশিষ্ট) দেখে খুবই আশ্চর্যান্বিত হয়েছেন।ঐ মহান সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য (হক) সহকারে প্রেরণ করেছেন পাঁচ বছর ধরে আমার ও আলীর এই একটি মেষের চামড়া ছাড়া আর কিছুই নেই যার ওপর দিনের বেলা খড়কুটো ও লতাপাতা রাখি যা আমাদের উট খায়;আর রাতের বেলা ওটা (মেষের ঐ চামড়া) বিছিয়ে ওর ওপর ঘুমাই এবং আমাদের বালিশ হচ্ছে চর্মের যার ভিতরে ভরা রয়েছে খেজুর গাছের আঁশ ও তন্তু।" (সূত্র:দুরূউল ওয়াক্বিয়াহ্,পৃ:২৭৫)
এই হাদীসে নবীদুহিতা সাইয়েদাতু নিসাইল আলামাইন ( জগতসমূহের নারীদের নেত্রী) ,বিবিয়ে দোআলম (দুই জাহানের পরম পবিত্র মহিয়সী নারী) হযরত ফাতিমা যাহরা (আ) ও আমীরুল মু'মিনীন মাওলাল্ মুওয়াহহিদীন্ ইমাম আলীর (আ) অত্যন্ত সরল সাদামাটা অনাড়ম্বর অথচ যাহিদসুলভ (কঠোর তপস্বীসুলভ) ও তাকওয়া পূর্ণ দাম্পত্য জীবনের চিত্র স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।মহান আল্লাহর প্রিয়পাত্র সৃষ্টির সেরা সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব  হযরত
মুহাম্মদ মুস্তফার (সা) একমাত্র কন্যার এই অতি অনাড়ম্বর অতীব সরল জীবন দেখে সালমান আশ্চর্যান্বিত হয়েছেন এবং অশ্রু পাত করেছেন।কারণ সালমান ইরান ও রোমের রাজকুমারীদের জৌলুস ও শান-শওকত পূর্ণ বিলাসী জীবন যাপন করতে দেখেছেন এবং নবী নন্দিনী জগৎ সমূহের নারীকুলের নেত্রী ও শ্রেষ্ঠ নারী হযরত ফাতিমার (আ) পোশাকে অজস্র তালি দেখে তিনি অশ্রু সম্বরণ করতে পারেন নি।
আজ ৩ জুমাদাস সনিয়া এই মহান মহতি মহিয়সী বেহেশতী নারীর শাহাদাত দিবসে তাঁর জন্য শোক ও মাতম করা সবার একান্ত কর্তব্য। শাসন কর্তৃত্বের অধিকারী হয়েও 
মহানবী (সা) এবং তাঁর আহলুল বাইত (আ) আখেরাত ও পরকালকে দুনিয়ার ওপর প্রাধান্য ( তাফযীল) দিয়েছেন। মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের উচিত মহানবী (সা) এবং তার আহলুল বাইতের (আ) সীরাত ও জীবন আদর্শ গ্রহণ করা 
। মহানবী (সা),তারঁ আহলুল বাইত (আ):হযরত ফাতিমা (আ),হযরত আলী (আ),ইমাম হাসান (আ) ও ইমাম হুসাইন (আ) আমাদের সবার জন্য উসওয়াতুন হাসানাহ (উত্তম আদর্শ)।

রিপোর্ট: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha